প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ২৫, ২০১৯ | |
সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় অজ্ঞতার কারণে পরাধীন নারী সমাজের জাগরণ শুরু করেছিলেন বেগম রোকেয়া। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত নারী সমাজের জাগরণের যে প্রদীপ তিনি জ্বেলেছিলেন সময়ের পরিবর্তনে তা আরও উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে।
সমাজের অগ্রগতির ধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করতে নানাভবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। সমাজের ক্ষুদ্রতর কাজগুলো থেকে শুরু করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতেও নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এখন চোখে পড়ার মতো। একসময় যাদের ঘরের বইরে যেতেও মানা ছিল এখন তারা স্বপ্ন দেখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলটসহ বিশ্বজয়ী সব পেশায় যাওয়ার। এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা মেলে ধরেছেন বিশ্বজয়ী নিশাত মজুমদার। রাজনীতিতেও তাদের সফল বিচরণ। ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের অংশগ্রহণ ও সাফল্য চোখে পড়ার মতো। শুধু তা-ই নয়, নারীদের তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সব মিলে আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশে নারীদের বিভিন্ন কজে অংশগ্রহণের সুযোগ অনুসরণীয়।
কিন্তু নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বাসের মধ্যে যাত্রী ও শ্রমিকদের কাছে, কর্মক্ষেত্রে সিনিয়রদের কাছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কাছে, এমনকি নিজ বাসায় পিতৃতুল্য স্বজনদের কাছেও নিরাপদ নয় নারীরা। ধর্ষণের খবর ছাড়া পত্রিকা পাওয়া যেন দুষ্কর হয়ে উঠেছে। দেশে কোমলমতি শিশুদের ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও কম নয়। ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর এক প্রতিবেদন মতে, ২০১৮ সালে ৩৫৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পাশাপাশি বড় চিন্তার বিষয় যে, এ ঘটনার বেশিরভাগই বিচার হয় না। সমাজে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে বিচার হয় না অনেক অপরাধীর। ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬১টি। এর মধ্যে বিচার হয়েছে ৫৭৮টি, সাজা হয়েছে ৬৪টি। এছাড়া ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় নিরাপত্তার অভাবে ও সমাজে সম্মানহানির ভয়ে মামলা করে না ভোক্তভুগীরা। ‘বিএনডব্লিউএলএ’র এক পরিসংখ্যান মতে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ৪ হাজার ৪২৭ জন। এর মধ্যে মামলা হয়েছে ২ হাজার ৭৩৪টি। মামলা করার পর ধর্ষকের হাতে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লায় এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করায় মেয়েটির ভাইকে কুপিয়ে জখম করে ধর্ষকরা। এছাড়া বর্তমানে আলোচিত ফেনীতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মামলা করায় পুড়িয়ে মারা হয় নুসরাত জাহান রাফিকে। মামলা করতে গেলে প্রশাসন থেকেও আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি নুসরাত। সর্বোপরি অবাধ স্বাধীনতা থাকলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নারীরা। বাসে উঠলে অনেকের লালসার শিকার হতে হয় তাদের। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই নারীদের নিরাপত্তা। তাহলে নারীদের সব ক্ষেত্রে বিচরনের যে স্বাধীনতা ও সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাকে কি সফল বলা যায়? না, কারণ নিরাপত্তাহীন এ সুযোগ বা স্বাধীনতা নারীদের উপকারে আসছে না। তাই নারী ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় তাদের শামিল করতে সুযোগ ও স্বাধীনতার সমপরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার। নচেৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীদের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা নিমেষেই ভূপাতিত হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীদের পোশাককে দায়ী করে একটি মহল। তবে এক্ষেত্রে পোশাকের চেয়ে মনুষত্বহীনতাই বেশি দায়ী। এছাড়া বিচারহীনতার যে অপসংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা ধর্ষণ বৃদ্ধির বড় কারণ। তাই নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিচারহীনতার এ অপসংস্কৃতি ভেঙে দিয়ে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এখন সময়ের দাবি। হ
শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |