প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ২৫, ২০১৯ | |
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে উপকূলীয় জনসাধারণকে প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগের সঙ্গে উপকূলবাসীর সম্পর্ক যেন বহুকালের! তবে এটাও ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা এখন অনেক দেশ বিবেচনায় নিচ্ছে। অতি সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যাপক সক্ষমতাকেই প্রমাণ করে। ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা প্রদান, উপকূলে মাইকিং, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াসহ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের সার্বিক প্রস্তুতি ও উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত আমাদের যে অগ্রগতি ও সাফল্য তাতে আত্মতৃপ্ত না হয়ে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু দুর্যোগের ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে থাকা একটি দেশ। বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের বাস্তবতায় গ্রীষ্ম বা বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানবে না, এ কথা কেউ হলফ করে বলতে পারে না। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগকালীন যে কোনো মুহূর্তে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে।
এখন সময় বদলেছে, বদলে যাচ্ছে জলবায়ু। আগে বাংলাদেশের মতো দেশে দুর্যোগের দিনক্ষণ জানা গেলেও মোকাবিলায় সক্ষমতা ছিল না বললেই চলে! বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন সময় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত এনেছে। ঝড়ের উৎস বা কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর। তাপ ও চাপের পার্থক্যের কারণে সাগরে উত্তাল তরঙ্গ ও প্রচ- ঘূর্ণি বাতাসের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এ ঝড় স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করতে করতে উপকূলবাসী প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। ১৯৭০ সালের ৭ থেকে ১৩ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের দক্ষিণাংশে ৪ লাখের অধিক মানুষ মারা যায়। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক। এছাড়া ১৯৯১ সালে ‘মেরি ইন’ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় প্রায় ২০০ জনের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোতে খুব বেশি প্রস্তুতি ও সতর্কতা না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকতা পেয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ-এপ্রিল-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত আনে।
একথা ঠিক যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোধে মানুষের তেমন কিছু করার নেই! কিন্তু আগাম সতর্কতা, দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও দুর্যোগপূর্ব-দুর্যোগকালীন-দুর্যোগ-পরবর্তী বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। অনেক সময় দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত-ব্যবস্থা ও সতর্কবার্তা উপকূলের জনসাধারণ সহজে বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত-ব্যবস্থা ও সতর্কবার্তা প্রচারের ক্ষেত্রে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য যেন বোধগম্য হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কেননা গতানুগতিক টেকনিক্যাল ও বৈজ্ঞানিক পরিভাষা-কণ্টকিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে বা পড়ে সম্ভাব্য দুর্যোগের মাত্রা ও গতি-প্রকৃতি বোঝা সহজ-সরল জনসাধারণের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয় না! উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই যেহেতু উপকূলীয় এলাকার মানুষই বারবার দুর্যোগের সম্মুখীন হয়; তাই উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী ও পুরুষদের আলাদা আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-পুরুষের আলাদা রাখতে পারলে আরও ভালো হয়। সরকারি তথ্য মতে, দেশে প্রায় ১৯ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর প্রায় অর্ধেকই উপকূলীয় এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধগুলো বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তাই উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো যাতে অরক্ষিত না থাকে, সেদিকে গভীর নজর দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন চলছে দুর্যোগের মৌসুম ! এ সময়ে উপকূলবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে, সতর্ক রাখতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় অন্যসব সুরক্ষার চেয়ে বেশি জরুরি সুরক্ষিত ও মজবুত ঘরবাড়ি নির্মাণ। কেননা সুরক্ষিত ও মজবুত সুরক্ষা মানেই ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছুই হলেও রেহাই পাওয়া! এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় সারিবদ্ধভাবে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি উপকূলরেখার সম্মুখ বরাবর বহুবর্ষজীবী বৃক্ষরোপণের প্রতি জোর দিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণের প্রতি জনসাধারণকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন বজায় থাকবে, তেমনি উপকূলও রক্ষা পাবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপকভিত্তিক ও বছরব্যাপী বৃক্ষরোপণের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, উপকূল সুরক্ষিত না রাখলে উপকূলও আমাদের সুরক্ষিত রাখবে না! হ
শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
[email protected]
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |