logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ২৫, ২০১৯
বেকারত্ব থেকে উত্তরণের কৌশল
লুৎফর রহমান রবি

বিশ্ব দরবারে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বাড়ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের হার। এ অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে বেকারত্ব, যা আমাদের অনাগত সুন্দর ভবিষ্যৎকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুঁজে না পায় তখনকার সময়কে বেকারত্ব বলে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমান বেকারত্বের সংখ্যা ৩০ লক্ষাধিক, যা আমাদের সমাজ ও জাতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশের শ্রমশক্তি সম্পর্কিত জরিপে (২০০২-০৩ এবং ২০০৫-০৬) ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের এমন ব্যক্তিকে বেকার বিবেচনা করা হয়েছে। যে সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করা বা কাজের জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও কোনো কাজ করেনি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৫ বছরের বেশি কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লক্ষ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২৬ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা নিরক্ষর বেকারদের তুলনায় অনেক বেশি। এর একটা প্রধান কারণ তাদের চাহিদা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে বাস্তব জীবন কাজের মিল খুঁজে না পাওয়া। তাই নিরক্ষরদের তুলনায় শিক্ষিত বেকারদের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেকার সংখ্যা বাড়া স্বাভাবিক, কেননা বিগত বছরগুলোতে যে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল সে হারে কর্মসংস্থান গড়ে ওঠেনি। ফলে বেকারত্বের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই তার জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান। সেই সঙ্গে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী, প্রতি বছর নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে ৮ লাখ কর্মক্ষম তরুণ। এর মধ্যে কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারছে ১১ লাখ ৫০ হাজারের মতো। বাকিরা থেকে যাচ্ছে বেকারত্বের তালিকায়। 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষে দেশে ১৪ লাখ পুরুষ এবং ১৩ লাখ নারী বেকার। এসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০১০, ২০১৩ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ও বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে ২৭ লাখ হয়েছে। তবে বেকারত্বের হারে কোনো পরিবর্তন আসেনি, ৪.২ শতাংশে রয়ে গেছে। এর মধ্যে মোট বেকারের ১১.২ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত এবং বেকার গোষ্ঠীর মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান।
উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেকর্ড অনুসারে ৭ দশমিক ২৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু কর্মসংস্থানের হার ছিল অপরিবর্তিত। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় দেশে মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ শতাংশ আনুষ্ঠানিক খাতের। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সংখ্যা মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। মোট কর্মসংস্থানের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের আনুষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ কর্মজীবী মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। ১ কোটি ৮৬ লাখ মাধ্যমিক পাস। বাকিরা উচ্চশিক্ষিত।
বর্তমান সময়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি পাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দিতে চাইছে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকজন; তাই অনেকাংশে নতুন থেকে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের বাইরে। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পর্যন্ত সৃষ্টি হচ্ছে বেকারত্বের। যে জনসম্পদ বহির্বিশ্বের উন্নতির কারণ, এ একই জনসম্পদ কর্মসংস্থানের অভাবে পরিণত হচ্ছে গলার কাঁটায়। চাকরি না পেয়ে তারা ভোগেন হীনম্মন্যতায়। অর্জিত শিক্ষা কাজে না লাগাতে পারায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় তাদের মধ্যে। আমরা যদি পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকাই; তবে দেখতে পাই তাদের উন্নতির মূল হাতিয়ার হলো দক্ষ জনশক্তি। মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করে তারা পৌঁছে গেছে উন্নতির উচ্চশিখরে। তেমনি আমাদের দেশের উন্নতির চাকা ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজন মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার। এ বেকার সমস্যা খুব দ্রুত লাঘব করা প্রয়োজন। তার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা বাঞ্ছনীয়। যথাযথ পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। তার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিক্ষিত যুবসমাজকে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ দানের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেমনÑ মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালন, পাখি পালন, হাঁস-মুরগির খামার, সেলাই মেশিন ক্রয়ের মাধ্যমেও বেকার সমস্যা কিছুটা লাঘব করা সম্ভব। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা দিয়ে দক্ষ কৃষক তৈরির মাধ্যমে কৃষিতে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে জনবল নিয়োগ করে বেকারত্বের ওপর চাপ কমিয়ে শিল্পোন্নত হওয়া সম্ভব। সর্বোপরি কর্মমুখী শিক্ষা ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই। যদি মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করা যায় তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের কাছে একটি সম্ভাবনাময় দেশ। হ

ছড়াকার ও কলামিস্ট
দেবিদ্বার, কুমিল্লা
[email protected]

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]