logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ২৫, ২০১৯
ফিরে আসা রুবেলের তথ্য
লিবিয়ার ‘গেম ঘরে’ এখনও বন্দি ৫০ বাংলাদেশি তরুণ
সিলেট ব্যুরো

লিবিয়ার জোয়ারা এলাকায় ‘গেম ঘর’ বন্দিশালায় এখনও অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি তরুণ বন্দি রয়েছেন। দালাল রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে পারভেজের তত্ত্বাবধানে তারা সেখানে রয়েছেন। এদের মধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথের বৈরাগীবাজারের কিছু তরুণও রয়েছেন। ভূ-মধ্যসাগরের উত্তাল সমুদ্রে তিন দিন তিন রাত অবস্থান করে অচল বোট থেকে বেঁচে আসা রুবেল আহমদ ও ছাইদুল ইসলাম জাবের এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

রুবেল জানান, সাগরের তীরে গেম ঘরে এখনো বন্দিদের বেশির ভাগেরই বাড়ি সিলেট জেলায়। এদের যে কোনো মুহূর্তে ইতালী পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সাগরে ভাসিয়ে দিতে পারে। তাই লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার আকুল আবেদন জানিয়ে রুবেল বলেন, ‘তাদের মতো এ পথে বাংলাদেশের আর কোনো তরুণ গিয়ে যেন জীবন নষ্ট না করে।’

রুবেল জানান, পারভেজ ৫ বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছে। লিবিয়ান নাগরিক (তার ভাষায় লিবি নাগরিক) এবং সেখানকার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তার বেশ সখ্য রয়েছে। এ সুবাদে লিবিয়ায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের ‘গেম ঘর’-এ  রাখা হয়। এরপর টাকার জন্য এ গেম ঘরে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। 

রুবেল জানান, গত বছরের ১০ রমজান তাকে প্রথমে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। ১৫ দিন পর তাকে মরক্কোয় ট্রানজিট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। লিবিয়া বিমানবন্দরে নামার পর তাদের গ্রহণ করে সে দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক সদস্য। তারা নিজেদের গাড়িতে শুইয়ে বস্তা দিয়ে মুড়িয়ে পৌঁছে দেয় দালালের কাছে। সেই থেকে তারা দালাল পারভেজের নিয়ন্ত্রণে গেম ঘরে ছিলেন। গেম ঘরে তাদের এক বছর রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। সারা দিনে প্রত্যেককে খাবার জন্য একটি মাত্র পাউরুটি দেয়া হতো। খাবার পানির সঙ্গে মিশিয়ে তাদের পেট্রল দেয়া হতো। যাতে তাদের ওজন কমে এবং একটি নৌকায় বেশি যাত্রী সংকুলান হয়।  
সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের ঘোপাল গ্রামের রুবেল আহমদ জানান, তিন দিন তিন রাত সাগরে ভেসে খুব কাছ থেকে দেখেছেন মৃত্যুকে। লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে দুটি বোটে যাত্রা করলেও ভাগ্যক্রমে রুবেলদের নৌকা অচল হয়ে গেলে সবাই বেঁচে যায়। 
রুবেল আহমদ আরও জানান, ওই দিন (৯ মে) এক ঘন্টার ব্যবধানে লিবিয়া থেকে দুটি নৌকা ইতালির উদ্দেশ্যে সাগরে যাত্রা করে। কিছুদূর গিয়ে অপর নৌকাটি ডুবে গেলে সাগরে প্রাণ হারায় সব যাত্রী। তিউনিশিয়া সীমান্তে যাওয়ার পর রুবেলদের নৌকাটিও নষ্ট হয়ে যায়। তারপর টানা তিন দিন সাগরে ভেসে থাকেন নৌকার নারী শিশুসহ ৫৭ যাত্রী। একপর্যায়ে একটি তেলবাহী জাহাজ তাদের রাবারের বোটের সন্ধান পায়। রুবেল আহমদ জানান, তেলবাহী জাহাজের যাত্রীরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলেও কেউ  তাদের জাহাজে তুলতে রাজি হয়নি। এক রাত প্লাস্টিকের বোটে ভাসমান থাকতে হয় তাদের। অবশ্য তিউনিশিয়ার তেলবাহী জাহাজের যাত্রীরা লাইট জালিয়ে আলো দিয়ে তাদের সাহায্য করেছিল। পরে তারা মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে তিউনিশয়া কোস্ট গার্ডের কাছে পাঠায়। এরপরও সাড়া দেয়নি কোস্ট গার্ড সদস্যরা। পরে জেলেরা সাহায্যে এগিয়ে এসে উদ্ধার করে তিউনিশিয়ার কোস্ট গার্ডের কাছে তাদের হস্তান্তর করে। 
রুবেলের মতে, দালাল রফিক ও পারভেজ কথা রাখেনি। তাদের সঙ্গে কথা ছিল লিবিয়া থেকে জাহাজে করে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে ইতালি। কিন্তু লিবিয়ায় নিয়ে অন্ধকার ঘরে এক বছর আটকে রেখে তাদের প্লাস্টিকের বোটে তুলে দেওয়া হয়। ২৫ জন ধারণ ক্ষমতার নৌকায় তোলা হয় ৫৭ জনকে। 
রুবেল জানান, মাছ ধরার শিপের পরিবর্তে প্লাস্টিকের নৌকা দেখে উঠতে চাননি রুবেল। পারভেজের উপস্থিতিতে কয়েকজন লিবিয়ান তার মাথায় পিস্তল ধরে। এরপর বাধ্য হয়েই তিনি রাবারের (প্লাস্টিকের) নৌকায় ওঠেন। রুবেল জানান, নৌকায় ৫৭ যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে সোমালিয়ার ৬ জন নারী ও ৬ শিশুও ছিল। সঙ্গে ছিল কয়েকজন মরক্কোর নাগরিকও। 
রুবেল বলেন, ইতালি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগীবাজার কাতলীপড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া ৯ লাখ টাকা নেন রুবলের বাবা-মার কাছ থেকে। সিলেট সুনমাগঞ্জ সড়কের পাশে ৪ শতক জমি বিক্রি করে ওই টাকাগুলো তুলে দিয়েছিলেন দালালের হাতে। এখন তার পরিবার পুরোপুরি নিঃস্ব। 
অন্যদিকে তিউনিশিয়া থেকে দেশে ফেরত দক্ষিণ সুরমার লালাগাওয়ের ছাইদুল ইসলাম জাবেরও নির্যাতনের নানা তথ্য তুলে ধরেন। বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগীবাজার কাতলীপড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়া ছেলে পারভেজের মাধ্যমেই ইটালী যেতে বোটে উঠেছিলেন। এর আগে তিনিও গেম ঘরে নির্যাতনের শিকার হন। ছাইদুল ইসলাম জাবের ভবিষ্যতে আর কোনো তরুণকে দালালদের খপ্পরে পড়ে এ পথে পাড়ি না দেওয়ার আহবান জানান। 
প্রসঙ্গত, রুবেল ও ছাইদুল মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে তিউনিশিয়া থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর বিভিন্ন বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা বুধবার রাত ২টায় বাড়ি ফেরে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]