
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, মে ২৫, ২০১৯ | |
যমুনার চরাঞ্চলে প্রায় এক যুগ আগেও পরিবহনের জন্য ছিল না তেমন কোনো কিছু। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় আর শুকনো মৌসুমে মাইলের পর মাইল ধূ-ধূ বালুচর হেঁটেই নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল মাথায় নিয়ে হাটে ও গন্তব্য স্থানে পৌঁছাত মানুষ। গ্রামাঞ্চলের মেঠোপথে পরিবহন বলতে ছিল গরু ও মহিষের গাড়ি। ক্রমান্বয়ে এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে অধিকাংশই গরু ও মহিষের পরিবহন। তার পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় অটোভ্যান, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক পরিবহনের গাড়ি দখল করে নিয়েছে গ্রামাঞ্চলের পথঘাট।
বর্তমান আধুনিক যুগে গরুর গাড়ি ও মহিষের গাড়ি বিলুপ্তি হলেও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর তীরে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল ও ইঞ্জিনচালিত মিনি ট্রফি ট্রাক্টর পরিবহন। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে জানা গেছে, গরু ও মহিষের গাড়ি ছিল মালামাল পরিবহনের বাহন। কিছু মানুষও যাতায়াত করতেন তবে কম। ঘোড়ার গাড়ি বলতে ছিল সে সময় রাজা-বাদশা ও জমিদারদের পরিবহন, যা তাদের প্রজা ও সাধারণ মানুষের কল্পনার মধ্য ছিল ঘোড়ার গাড়িতে (চড়া) ওঠা।
গ্রাম ও যমুনার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সব ধরনের মানুষের রাজকীয় আদলে না হলেও বর্তমান সময় ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে পরিবহন এখন বেশ জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে চরাঞ্চলবাসীর। চৌহালী উপজেলার উমারপুর গ্রামের ঘোড়াচালক মো. নুহু মিয়া জানান, এখন যমুনা চরাঞ্চল মরা। যমুনা তার রূপ নিয়ে উঁচুনিচু বালুময় চরাঞ্চল। এ চরাঞ্চল এলাকার জমি থেকে উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার জন্য ঘোড়াই একমাত্র বাহক। কেননা মাইলের পর মাইল ধূ-ধূ বালুচর হেঁটে মাথায় করে ফসল বাড়িতে নিয়ে আসা খুবই কষ্টকর। তাই বর্তমানে এ চরাঞ্চলে মালামাল ও বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের জন্য ঘোড়ার গাড়িই প্রধান মাধ্যম। যমুনা চরাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যমুনা চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসল, বাদাম, ধান, মসুর ডাল, কাউন, খেসারি ডাল, বোরো ধান, মিষ্টি আলু, শুকনো খড় ইত্যাদি ফসল জমি থেকে ঘোড়ার গাড়িতে পরিবহন করা হয়। এছাড়াও উমারপুর মধ্য চরাঞ্চলে হাটবাজার থেকে পরিবহন করে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে পাড়ি জমায় হাটে। সরেজমিন দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র সুবিধাজনক হিসেবে পথেপ্রান্তরে ঘোড়ার গাড়ি পরিবহন। কয়েকটি ইউনিয়নের খাসপুখুরিয়া, বাগুটিয়া. ঘোরজান চর ইত্যাদি গ্রামে চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করছেন। ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়িতে সব ধরনের কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। ঘোড়ার গাড়ি চালক হিসেবে বেশিরভাগ ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সের ছেলেরা চালাচ্ছে। পরিবারে অভাব-অনটন, বাল্যশিক্ষা থেকে ঝরেপড়া ও সংসারের হাল ধরতেই তারা এ পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
চৌহালী উপজেলা এলাকায় পাঁচ শতাধিক ঘোড়াগাড়ি রয়েছে। এতে ৫০০ পরিবার এ ঘোড়ার গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। ঘোড়ার গাড়ির আয় দিয়েই চলছে তাদের সংসার, সেই সঙ্গে তারা প্রতি মাসে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা সঞ্চয় করতেও পারছে।
ঘোড়া চালক মো. রেজাউল বলেন, বর্তমানে তাদের একটি ঘোড়া রয়েছে। ২ ভাই ও ৩ বোন ও মা-বাবা নিয়েই তাদের সংসার। তার বাবা একা সংসার চালাতে হিমশিমে পড়েছিল বছর তিনেক আগে। অন্যের দেখে ও পরামর্শে একটা ঘোড়া কিনে দেয় তাকে। এরপর নিজেদের ফসলের পরিবহন করেও অন্যের ফসল আনত ভাড়ায়। এছাড়াও প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা কামাই (আয়) হয়। এভাবে সংসারে অভাব কমতে থাকে। এক পর্যায়ে আরও একটি ঘোড়া কিনে চরাঞ্চলে ভাড়ায় চালাচ্ছে রেজাউল। যমুনা চরাঞ্চলবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে খরচ কম, ঘোড়ার দামও হাতের নাগালে। ঘোড়ার গাড়ি পরিবহনের উপযোগী একটা ঘোড়ার দাম ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে কয়েক বছর পরিবহন করতে সক্ষম। ঘোড়ার খাদ্য হিসেবে ধান ভাঙানো কুড়া, সরিষার খৈল, ছোলা (বুটের ডাল), ভুসি ও চালের খুদ খাওয়ালেই হয়। এছাড়া মাঠে সবুজ ঘাস ও খড়ও খায়। এতে ঘোড়া পালনে আরও খরচ কম হয়। ঘোড়ার গাড়িতে পরিবহন বিষয়ে কে আর পায় লট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুর রশিদ বাবলু জানান, যমুনা চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ও পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ি ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। চরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামে চলাচলের রাস্তাঘাটের অভাবে যেখানে আধুনিক যান্ত্রিক পরিবহন গাড়ি চলতে পারে না সেখানে বালু উপেক্ষা করে ঘোড়ার গাড়িই মানুষের নানা ধরনের সুবিধা দিয়ে আসছে। যার কারণে দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনার চরাঞ্চলে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |