ডায়াবেটিক রোগীর স্নায়ু দুর্বলতা চিকিৎসায় তেমন ভালো ফল পাওয়া যায় না। গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু আবার উজ্জীবিত হতে পারে, তবে এতে যৌন সমস্যার সমাধান হয় না। স্নায়ু দুর্বলতার সঙ্গে যদি রক্ত সংবহনতন্ত্রের দুর্বলতা যুক্ত হয় তবে তা আরও জটিল হয়

যাদের হঠাৎ ডায়াবেটিস দেখা দেয় তারা থমকে যান ও ভেঙে পড়েন। এছাড়া নানা টেনশনও ফিল করেন। ডায়াবেটিস রোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বংশগতভাবে দেখা দেয়। এছাড়া নানাবিধ কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সারা জীবন খেলাধুলা, ব্যায়াম ও জিম করেন তাদের ডায়াবেটিস রোগ কম দেখা যায়। আবার যারা বসে বসে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি করেন, হাঁটাচলা কম করেন তাদের মাঝে ডায়াবেটিস বেশি দেখা দেয়। এর মূল কারণ, শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা। ডায়াবেটিস রোগ হলে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো, এর নিয়ম-কানুন মানা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে লাইফ স্টাইলকে বদলে ফেলা। এ রোগ প্রতিরোধে নিয়মমাফিক ও রুটিনমাফিক চলা আবশ্যক। তরুণ বয়সের ডায়াবেটিক রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিচলিত হন তাদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে। একটি কথা এ রোগ সম্পর্কে শুরুতেই বলতে পারি, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ কিন্তু রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ডায়াবেটিসজনিত যে কোনো রোগের উপসর্গ ও জটিলতা অনেকাংশ এড়ানো যায়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগীরা যৌন সমস্যায় ভোগে থাকেন এবং দীর্ঘ সময় নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে রোগী নানাবিধ সমস্যায় ভোগে থাকেন।

গবেষণার দেখা গেছে, শতকরা ৬০ ভাগ পুরুষ ডায়াবেটিক রোগীর পুরুষাঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা বা পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয়। এর সঙ্গে মূত্রথলি, মলত্যাগ ও প্রসাবজনিত সমস্যাও থাকে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষহীনতার পরিবর্তে বিপরীতমুখী বীর্যঙ্খলনের সমস্যার কথাও বলেন। জানা থাকা প্রয়োজন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কারণে স্নায়ু দুর্বলতার জন্য পুরুষহীনতা থাকলেও বীর্যঙ্খলন হয়। 

ডায়াবেটিক দম্পতিদের মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হয়। ডায়াবেটিক পুরুষ ও মহিলা উভয়ের চরম তৃপ্তি পাওয়া সম্ভব। মহিলা ডায়াবেটিক রোগী চরম তৃপ্তির জন্য পর্যাপ্ত উত্তেজনা ও অধিক সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে মহিলা ডায়াবেটিক রোগী পুরুষের মতো নানাবিধ সমস্যায় ভোগেন না। অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রান্তিক স্নায়ু দুর্বলতা বা পেরিকেরাল নিউরোপ্যাথি থাকলে তারা যৌন সমস্যার কথা বলেন এবং মানসিক অবসাদে ভোগেন। ফলে গোপনাঙ্গে বারবার ইনফেকশন হয় এবং অঙ্গের পিচ্ছিলতা হ্রাস পায়। 

রোগ উপশম 

আমাদের মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রোগীর স্নায়ু দুর্বলতা চিকিৎসায় তেমন ভালো ফল পাওয়া যায় না। গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু আবার উজ্জীবিত হতে পারে, তবে এতে যৌন সমস্যার সমাধান হয় না। স্নায়ু দুর্বলতার সঙ্গে যদি রক্ত সংবহনতন্ত্রের দুর্বলতা যুক্ত হয় তবে তা আরও জটিল হয়।

পুরুষাঙ্গে কিছু ওষুধ সরাসরি ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়, যা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও নির্দেশনায় করা উচিত। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকুয়াম ডিভাইস বা যন্ত্রের মাধ্যমেও পুরুষাঙ্গের উত্থান ঘটানো সম্ভব। বর্তমানে অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ ইমপ্লাট সংযোজন করা হচ্ছে। এ রোগীদের যদি দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা থাকে তবে চিকিৎসকের কাছে সেক্সথেরাপি নেয়া বিশেষ উপকারী। তবে কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে দীর্ঘ জীবন সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা সম্ভব।

ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল

সহকারী অধ্যাপক 

(চর্ম-যৌন-অ্যালার্জি)

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

কামাল স্কিন সেন্টার