প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, মে ২৬, ২০১৯ | |
অর্থনীতি সমিতি
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট বা ছায়া বাজেট (শ্যাডো বাজেট) প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এ বাজেট বিকল্প সম্প্রসারণশীল বৃহদায়তন বাজেট বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। প্রস্তাবিত এ বাজেট আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য সরকারি বাজেটের প্রায় আড়াই গুণ। এতে রাজস্ব খাত থেকে ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি আয়ের কথা বলা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০’ তুলে ধরা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে এ ধরনের বিকল্প বাজেটের প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে অর্থনীতিবিদদের পেশাদার এই সংগঠন। অনুষ্ঠানে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদসহ সমিতির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ড. আবুল বারাকাত বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট যুক্তিসঙ্গত এবং তা দেশের অর্থনীতির অর্থ নিহিত শক্তির বিচারে ও যৌক্তিক। প্রস্তাবিত মোট বাজেট ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকার। এর ৮১ শতাংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে। বাকি ১৯ শতাংশ আসবে সম্মিলিতভাবে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব, বন্ড বাজার, সঞ্চয়পত্র ও দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে। এতে বৈদেশিক ঋণের কোনো ভূমিকা থাকবে না। প্রস্তাবিত বাজেট সরকারের সম্ভাব্য ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটের দ্বিগুণেও বেশি। এতে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) ও ৩১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর (ভ্যাট)। এ বাজেট বাস্তবায়নে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি দরকার। পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামো যেমন বিদ্যুৎ জ্বালানি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন জমি, জলা, জঙ্গল, গ্যাস, তেল, কয়লা, বঙ্গোপসাগর, আকাশ-মহাকাশ সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।
ড. বারাকাত বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে ২০ টি নতুন উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এর মধ্যে অর্থপাচার রোধ, কালো টাকা উদ্ধার ও সম্পদ করÑ এ তিনটি উৎস থেকেই সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারে। আর এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর তিনটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। প্রস্তাবিত বাজেট অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না, প্রস্তাব অনুযায়ী বাজেটের আয় কাঠামোতে মৌলিক গুণগত রূপান্তর ঘটবে। এতে ঘাটতি ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। কেউ হয়তো বলবেনÑ অনেক বড় ঘাটতি। তবে জাপানে বাজেট ঘাটতি ২৫৬ শতাংশ। ঘাটতি বাজেটে অসুবিধা হলে এক পয়সাও ঘাটতি না রেখে প্রস্তাবিত রাজস্ব আয় দিয়েও মোট বাজেট প্রস্তুত করা সম্ভব। উন্নত দেশের প্রায় সবাই যখন উন্নতি করছিল ১৯৩০-১৯৭০ দশক পর্যন্ত সময়ে। তখন তাদের সবারই সরকারি ব্যয় বরাদ্দ ছিল বেশ বেশি, প্রবৃদ্ধির হারও ছিল বেশি।
অর্থনীতি সমিতির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তারপর আছে জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত। অন্যান্য খাতগুলো হলো কৃষি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস, জনশৃঙ্খলা-নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা।
কৃষি, ভূমি, জলা সংস্কার বিষয়ে আবুল বারাকাত বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বছরেই কৃষি ও কৃষক ভাবনার যথার্থতা বিচারে ১ লাখ ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ বিঘা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব, আর পাশাপাশি ২০ হাজার জলাহীন প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার বিঘা খাস জলাশয় বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব। বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে এ লক্ষ্যে ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দসহ বাস্তবায়ন কৌশল সংশ্লিষ্ট পথনির্দেশনা দেওয়া জরুরি।
কৃষি ফসলের উৎপাদন অঞ্চল গঠন ও কৃষককে কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য দেওয়ার প্রস্তাব করে বারাকাত বলেন, এ বছর বোরো ধানে কৃষকের প্রকৃত লোকসান হবে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। এ নিয়ে সরকারের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কৃষককে তার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জরুরিভাবে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারিভাবে সংগ্রহের ক্রয়মূল্য উৎপাদন খরচের তুলনায় কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়াতে হবে, সেক্ষেত্রে এ বছরের বোরো ধানের মণপ্রতি বিক্রয়মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ টাকা।
শিক্ষার সব স্তরে বাংলা ভাষাকে জ্ঞানচর্চার মূল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে, অন্য কোনো ভাষা শিখব না। অবশ্যই শিখব। উচ্চশিক্ষা স্তরে সব শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে দুটি বিদেশি ভাষাশিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তার অন্যতম প্রস্তাবগুলো হলো, দরিদ্র নারীদের সরকারিভাবে ক্ষুদ্র-অনুদান, প্রশিক্ষণ, গার্মেন্টসহ কর্মজীবী নারীদের আবাসন ও ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন, ১০০ শতাংশ নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, ক্রীড়া খাতে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ ৪ গুণ বাড়ানো, মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় বরাদ্দ ৩ গুণ বাড়ানো এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধসংশ্লিষ্ট বরাদ্দ এখনকার তুলনায় কমপক্ষে ৩০ গুণ বাড়ানো। খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আবুল বারাকাত প্রস্তাব করেন, অভ্যাসগত ঋণ খেলাপিদের মোকাবিলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে, তাদের উদ্যোগে চালু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল তবে সমাধান সম্ভব বলে মনে করি।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |