logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, মে ২৬, ২০১৯
কেল্লাপোশী ‘জামাই মেলা’ শুরু
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী জামাই মেলা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। তিথি অনুযায়ী প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে উপজেলা সদরের অদূরে কেল্লাপোশী নামকস্থানে ৪৬৩ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের ভাষায়, যাকে ‘জামাইবরণ’ মেলাও বলা হয়ে থাকে। মেলা ঘিরে গ্রামে গ্রামে চলে রকমারি আয়োজন। মেলার অন্তত সপ্তাহ খানেক আগ থেকেই গ্রামের লোকজন নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নতুন পুরোনো বলে কথা নেই। মেলা উপলক্ষে সবাই নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে বাড়িতে আনেন। বিশেষ করে নতুন জামাই-বউকে নিয়ে সবাই ভিন্ন আনন্দে মেতে ওঠেন। শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে জামাই বাবুকে মোটা অঙ্কের সালামিও দেওয়া হয়। ওই সালামি আর নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে জামাই বাবুরা মেলা থেকে খাসি কিনে শ্বশুরবাড়িতে আনেন। এমনকি বড় বড় মাটির পাতিল ভর্তি করে মিষ্টান্ন সামগ্রী, সবচেয়ে বড় মাছ, মহিষের মাংস, রকমারি খেলনা কেনেন। এছাড়া শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে মেলা ঘুে ফিরে দেখেন। তাদের সার্কাস, নাগোরদেলা, হুন্ডা, যাদু, পতুল নাচ খেলা দেখিয়ে দিনব্যাপী আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন। আর গ্রাম্য মানুষ ওই মেলা থেকে রকমারি মসলা, তুলা, কাঠের সামগ্রী, বড় বড় ঝুড়ি, চুন সারা বছরের জন্য কিনে রাখেন। এদিকে প্রতিটি মেলার পেছনেই কিছু না কিছু লোকগাথা কথা থাকে। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ মেলা হয়ে আসছে বলে কথিত আছে। এ সম্পর্কে জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরস্যজাত এবং একজন দত্তক পুত্র ছিলেন। ঔরস্যজাত পুত্রের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক পুত্রের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মণ রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দুইজন দুইজনকে ভালোবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার কাছে যান। মুকুট রাজা ফকির বেশি যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দি করেন। এতে গাজী মিয়া দারুণ আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার কাছ থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোশী নামক একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। আর তিথি অনুযায়ী ওই দিনটি ছিল জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। মেলা চলাকালে সেখানে ভক্তরা আসর বসান। ওই দিনগুলোকে অমøান করে রাখতে প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী মেলা বসে। আর এ মেলা উপলক্ষে এলাকাবাসী নতুন জামাইকে ঘরে এনে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেন। এছাড়া নিকট আত্মীয়স্বজনের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। 
অন্যদিকে মেলা শুরুর প্রায় সপ্তাহ খানেক আগ থেকে গ্রামে গ্রামে চলে মাদার খেলা। একটি বড় বাঁশকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ও নানা রঙে সাজিয়ে সেটির বিভিন্ন স্থানে চুল লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল বেরিয়ে পড়ে। ঢাক-ঢোল, গান-বাজনার নানান সরঞ্জামাদি আর লাঠি নিয়ে তারা গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরে খেলা দেখায়। মেলা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে ওই মাদার খেলা। জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার দলটি মেলা এলাকায় অবস্থিত মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে তা শেষ করে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ৩ দিনব্যাপী এ মেলায় যাত্রা, সার্কাস, নাগোরদোলা, পুতুল নাচ, বিচিত্রা, হুন্ডা ও কার খেলাসহ নানা অনুষ্ঠান চলে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]