প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, মে ২৬, ২০১৯ | |
পারাপারে সময় কম লাগায় প্রতিবারের মতো এবারও ঈদে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ পড়বে। তবে ভরা বর্ষা মৌসুম আসন্ন হওয়ায় এ রুটে ঝড়ো আবহাওয়া ও স্রোতের গতিবেগ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ফলে নাব্য সংকটও দেখা দিতে পারে। চলমান লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহারে আগের মতোই উদাসীন থাকায় ঝুঁকি বেড়েছে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শঙ্কা আরও বেড়েছে। বিকল্প চ্যানেল তৈরিতে কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে বাড়ি ফেরা নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিন বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের স্বল্প দূরত্বের কারণে প্রতি বছরই দেশের রেকর্ডসংখ্যক যাত্রীদের ঢল নামে এ রুটে। সেই সঙ্গে যানবাহনের চাপও বাড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ। আসন্ন ঈদে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেড়ে আগের যে কোনো ঈদের চেয়েও ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নৌ রুটটিতে ১৮টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও প্রায় ২ শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করায় এবং উভয় পাড় থেকে সড়ক পথে অসংখ্য যানবাহন থাকায় রুটটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের প্রস্তুতিও ব্যাপক। থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ, র্যাবসহ বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। তবে ভরা বর্ষা মৌসুম চলায় ঝড়ো আবহাওয়া ও স্রোতের গতিবেগ বেড়ে ভোগান্তি ও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। নদীতে স্রোতের সঙ্গে পলি ভেসে এসে বিভিন্ন পয়েন্টে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে লৌহজং টার্নিং এলাকায় বিকল্প চ্যানেল খননে কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিসি এরই মধ্যে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে একটি বিকল্প চ্যানেল তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে চলমান লঞ্চ, স্পিডবোটগুলো জীবনরক্ষাকারী বয়া, লাইফ জ্যাকেট ব্যবহারে উদাসীন হওয়ায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে। লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোয় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম চোখেও পড়েনি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝ পদ্মায় উদ্ধারকারী জাহাজ রাখা ও ঘাটে পর্যাপ্ত সচল ফেরি রাখার দাবি যাত্রী সাধারণের।
লঞ্চ যাত্রী হাসান মিয়া বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঈদের সময় লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোয় অনেক ভিড় হবে। এখন ঝড়ো হাওয়ার সময়। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢেউও অনেক। আমরা চাই ঈদের সময় যেন লঞ্চগুলোয় অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা হয়।
বরিশালের যাত্রী সবুজ বেপারী বলেন, আমরা এ রুট দিয়েই চলাচল করি। সামনে ঈদের সময়ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ রুট দিয়েই বাড়ি ফিরব। এ রুটের স্পিডবোটগুলোয় লাইফ জ্যাকেট থাকলেও তা মানসম্মত নয়। এ লাইফ জ্যাকেট দিয়ে জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়। আর লঞ্চগুলোয় যাত্রীদের তুলনায় বয়া অনেক কম থাকে। ঈদের সময় অন্তত প্রশাসনের এ বিষয়টি দেখা উচিত।
কেটাইপ ফেরি ক্যামেলিয়ার মাস্টার শাহাবুদ্দিন বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের গতিবেগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্রোতের সাথে যদি পলি এসে চ্যানেলের মুখ বন্ধ না হয় তাহলে আসন্ন ঈদে ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।
রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ট জাহাঙ্গীরে র মাস্টার আসাদুজ্জামান বলেন, স্পিডবোট চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ না থাকলেও স্পিডবোট চালাতে তাদের দক্ষতা তৈরি হয়। লাইফ জ্যাকেট সব যাত্রীদের দেওয়া হলেও তা মানসম্মত নয়। ঈদের সময় প্রচুর যাত্রীর চাপ থাকে। নৌযান আইন অনুযায়ী একজন যাত্রীর জন্য ১০ স্কয়ার ফিট জায়গা বরাদ্দ থাকলেও লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বোঝাই করে পারাপার করা হয়। লঞ্চগুলোয় পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামও দেখা যায় না।
বিআইডব্লিউটিএ কাঁঠালবাড়ী ঘাট টার্মিনাল ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন, আসন্ন ঈদে যাত্রী পারাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের প্রতিটি লঞ্চে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেওয়া হবে না। কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলেও পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকলে সেই লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ঘাটে দায়িত্বরত আনসারের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সাত দিনের স্থলে যদি ১০ দিন করা হয় তাহলে ভালো হবে।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ী ঘাট সহকারী ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আসন্ন ঈদে যাত্রী পারাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এরই মধ্যেই সব ফেরি মেরামত করে সচল রাখা হয়েছে। নতুন ফেরিও যোগ করা হবে। নদীতে নাব্য সংকট না দেখা দিলে খুব ভালোভাবেই যাত্রী পারাপার করা যাবে।
বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের উপপরিচালক আসগর আলী বলেন, শিমুলীয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ চ্যানেল এখন পর্যন্ত ভালো আছে। বর্ষার যে সময় নদীতে স্রোত ও ঢেউ বেশি থাকে, পলি বেশি পরিমাণে ভেসে আসে সেই সময়টাতে যাতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমাদের ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে যেহেতু বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে আর সামনে ঈদ রয়েছে তাই নৌরুটে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নতুন চ্যানেলের কাজ চলছে।
মাদারীপুর সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এ বছরও কাঁঠালবাড়ী ঘাটে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। আমরা লঞ্চ, ফেরি ও স্পিডবোট ঘাট আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করব। অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যে কোনো উপায়ে যাত্রী হয়রানি করা হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |