
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, সোমবার, মে ২৭, ২০১৯ | |
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা ও মৃগেল) মা মাছ ডিম ছেড়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে ডিম ছাড়ার পর মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন সংগ্রহকারীরা। সংগৃহীত এসব ডিম থেকে রেণু ফুটিয়ে সেখান থেকে ৮০ কোটি কার্পজাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন হবে। তবে ১০ থেকে ১২ শতাংশ মাছের পোনা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই হিসেবে ৭০ কোটি মাছের পোনা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন মৎস্য অধিদপ্তর।
হাটহাজারী উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম জানান, হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা ৮ হাজার কেজি ডিম সরকারি ৪টি হ্যাচারি ও সংগ্রহকারীদের ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি ১৭৯ টি কুয়াতে রাখা হবে তিন থেকে চারদিন। নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতি ৪০ কেজি ডিম থেকে ১ কেজি রেনু উৎপাদন করা হবে। সে হিসেবে ৮ হাজার কেজি ডিম থেকে প্রায় ২০০ কেজি রেণু উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে নির্ধারিত হ্যাচারি ও কুয়াতে রেখে ডিম থেকে রেণু ফুটানোর পর নিয়ে যাওয়া হবে নার্সারি পুকুরে। ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এসব রেণু কিনে নিবে পোনা ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি রেণু ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম দেওয়ার
খবর পায় শনিবার রাত পৌনে ৯টার সময়। ঘোনা এলাকায় রোসাংগির নামের এক ডিম সংগ্রহকারী তাকে মুঠোফোনে ডিম পাওয়ার সংবাদটি প্রথম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নদীতে প্রতিটি নৌকায় এক থেকে দুই বালতি করে ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা। সরেজমিনে শনিবার রাত ১০টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত হালদা নদীর রামদাশ মুন্সিরহাট, নাপিতের ঘাট ও খলিফার ঘোনা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত নৌকা নিয়ে মানুষ নদীতে জাল ফেলে ডিম সংগ্রহ করছেন। রাত যত বাড়ে, তত মানুষের হাঁকডাক বাড়তে থাকে নদীতে। হাটহাজারী উপজেলার মাছোয়াঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকার ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, এতদিন পুরোদমে ডিম না দেওয়ার কারণে হালদা নদীতে জাল ফেলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম পাওয়া যায়নি। প্রকৃতি অনুকূলে না থাকায় এতদিনে মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়। শনিবারও হালকা বৃষ্টি হয়। শনিবার রাতে উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় মা মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ছেড়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
ডিম আহরণকারী উত্তর মাদার্শা এলাকার মো. জামশেদ জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে হালদার বিভিন্ন অংশে ডিম সংগ্রহ শুরু হয়। হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার প্রায় চার শ থেকে সাড়ে চার শ ডিম আহরণকারী রোববার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে। আহরণকারীরা জানিয়েছে, এবার গেল বছরের চেয়ে কম ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার সংগ্রহের পরিমাণ ৮ হাজার কেজি। হাটহাজারী উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম রোববার সকালে বলেন, ডিম সংগ্রহকারীরা হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট হ্যাচারিতে ৬০টি নৌকায় ১০০ বালতি ডিম ও শাহ মাদারী হ্যাচারিতে ৩০টি নৌকায় ৬০ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছে। প্রতি বালতির ওজন ১৫ কেজি। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ কেজি ডিম দুটি হ্যাচারিতে এসেছে। সময় যত বাড়বে, ডিমের পরিমাণ তত বাড়বে বলে তিনি জানান। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ ?মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত, প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছেড়ে থাকে।
উল্লেখ্য, হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |