ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য থানায় ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। সোমবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামশ জগলুল হোসেন পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারসংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৭ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত। সোমবার বাদী সুমন আসামি ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সোমবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই সদর দপ্তরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই’কে নির্দেশ দেন আদালত। ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা রাফিকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে দুইজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে এজেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির সামনে অঝরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সে কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরে ওই ভিডিও ফেইসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে। অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর ৬ এপ্রিল সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। এ সময় মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছেÑ এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার থেকে পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।