প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০১৯ | |
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তিন বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিদিনই নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসানো হচ্ছে। অবৈধ সংযোগদাতা সিন্ডিকেটের কাছে গ্যাস বিতরণকারী বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে অনেক কর্মকর্তাকে নাজেহাল হতে হয়েছে। কোনো কোনো কর্মকর্তাকে অফিস, এমনকি বাসায় গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ভয়ভীতির কারণে ঠুটো জগন্নাথ হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরণকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে অবৈধ সংযোগের স্বর্গ হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৩ হাজার ৯৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ২৩টি অবৈধ গ্যাসলাইন চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে পাঁচ হাজার। কিন্তু অফিসের অন্য সূত্রমতে, অবৈধ সংযোগ সংখ্যা ৩০ হাজার। একদিকে কর্তৃপক্ষ অবৈধ লাইন চিহ্নিত করছে, অন্যদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসিয়ে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ ৩০ হাজার হয়ে থাকলে সরকার প্রতি মাসে রাজস্ব হারাচ্ছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ সংযোগ বৈধভাবে হলে সিকিউরিটি মানি হিসেবে প্রতিটি সংযোগ থেকে আসত ১ হাজার ৬০০ টাকা। ৩০ হাজার সংযোগে সিকিউরিটি মানি হিসেবে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ ছিল তিতাস। বাখরাবাদ দায়িত্ব নেওয়ার সময় আবাসিক গ্রাহক ছিল ১৪ হাজার। পরে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত আরও ৮ হাজার সংযোগ দেয় বাখরাবাদ। এতে বৈধ গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ হাজার। কিন্তু এ সময়ে বাখরাবাদ নতুন কোনো নেটওয়ার্ক করেনি বলে জানান কর্মকর্তারা। বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর, শহর থেকে দক্ষিণ দিকে রামরাইল পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এবং শহর বাইপাস সড়কের দুই পাশে সর্বোচ্চ এক কিলোমিটার পর্যন্ত বাখরাবাদের গ্যাস নেটওয়ার্ক (সম্প্রসারণ লাইন) আছে বলে জানান তারা। অবৈধভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকার দুই পাশে এবং দক্ষিণ দিকে রামরাইল পর্যন্ত যত গ্রাম আছে সবখানেই গ্যাসের লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে। গ্রামের পর গ্রামে স্থাপিত হয়েছে গ্যাসের অবৈধ নেটওয়ার্ক (সম্প্রসারণ লাইন)। এ সম্প্রসারণ লাইন থেকে শত শত বাড়িঘরে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বাখরাবাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্যাস বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত সুহিলপুরের কলামুড়ি কবরস্থান থেকে তাজুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত ৪ হাজার ফুট, ঘাটুরা মামুন মোল্লার বাড়ি এলাকায় ৩ হাজার ফুট, দারমা ও নন্দনপুরে ৪ হাজার ফুট, কোনাহাটি-মাইঝহাটি জড়জড়িয়া পাড়া ও মালিহাতায় ৫ হাজার ফুট, রামরাইল থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, সুহিলপুরের হাড়িয়ায় ৪ হাজার ফুট, তেলিপাড়ায় ৭ হাজার ফুট, গৌতমপাড়া কাঠবাড়িয়া দীলিপ দাশের বাড়ি এলাকায় ৬ হাজার ফুট, এছাড়া সুহিলপুর তেলিহাটি, হিন্দুপাড়া, গৌতমপাড়া, কেন্দুবাড়ি এলাকায় প্রায় ৮ হাজার ফুট, রাজঘর, নাটাই, ভাটপাড়া ও আমতলিতে ৬ হাজার ফুট, রামরাইলের ভোলাচংয়ে ৩ হাজার ফুট, বুধলগ্রামে ৬ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাসলাইন চিহ্নিত করেছে। এছাড়া বুধলবাজার থেকে তৈয়ব চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত, শালগাঁও-কালীসীমায় গ্রামে কয়েক হাজার ফুট অবৈধ গ্যাসলাইন রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লাইন বসানো হয়েছে সুহিলপুরে। এরপর বুধল ইউনিয়নে। সেখানে অবৈধভাবে সম্প্রসারণ করা গ্যাসলাইন থেকে হাজারের মতো সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া নাটাই ইউনিয়নের আমতলি, রাজঘর ও ভাটপাড়াতে ৩০০ ও বুধলের মালিহাতায় প্রায় ১৫০ অবৈধ সংযোগ রয়েছে। খাটিহাতা ঈদগাহ রোড এবং খাটিহাতা গ্রামে ২ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাসলাইন বসিয়ে ১৫০ এর মতো অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিখাতা গ্রামে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাখরাবাদের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চক্রটি অফিসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। এতে গ্রামে গ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এরা অনেক শক্তিশালী। তারা পাইপ আনছে, লাইন বসাচ্ছে, রাইজার উঠাচ্ছে। বিল বই দিচ্ছে। বলতে গেলে সবই করছে। এতে প্রশাসনও শঙ্কিত। তিনি জানান, গেল মাসের ১০ তারিখে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে অবৈধ লাইন অপসারণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। অভিযানের দিন সদর উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানান। বারবার জেলা প্রশাসকের সহায়তা চাইছি। ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য কোম্পানির এমডিকে দিয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করাচ্ছি।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিক্রয় বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাহিদুর রেজা বলেন, আমরা প্রতিদিনই অবৈধ লাইন উত্তোলন করছি। কিন্তু সেগুলো ব্যাপক আকারে নয়। ব্যাপক আকারে করার জন্য প্রশাসনের সহায়তা দরকার। সেজন্য অবৈধ লাইন অপসারণে প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমরা তাদের চিঠি দিচ্ছি। কো-অর্ডিনেশন মিটিংয়ে আলোচনা হচ্ছে। তারাও আমাদের সহায়তা দেওয়ার কথা বলছেন। অন্যদিকে তিতাসে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাখরাবাদেও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, অবৈধ গ্যাসলাইন অপসারণে শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |