logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, মে ২৯, ২০১৯
বিদেশি ফল আবাদে স্বাবলম্বী
কাজী বাবলা, পাবনা

পাবনায় শখের বশে বিদেশি ফলের আবাদ করে কৃষক আনিসুর এখন স্বাবলম্বী। দেড় বিঘা জমিতে বিদেশি প্রজাতির বারোমাসী তরমুজের পাশাপাশি ১০ বিঘা জমিতে মেলন, রকমেলন ও মাশমেলন ফলের চাষ করে মৌসুমের শুরুতেই প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেছেন কৃষক আনিসুর রহমান। স্থানীয় বাজারে এসব ফলের তেমন চাহিদা না থাকলেও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সুপার শপে ভালো বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি দামে প্রতি কেজি হলুদ মেলন ১২০ টাকা, রক মেলন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এবার যে ফল রয়েছে, তাতে মৌসুম শেষে সব খরচ বাদে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভের আশা তার। 

পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক আনিসুরের প্রচেষ্টায় ফলটির সফল আবাদ হয়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে যখন দেশজুড়ে কৃষকের হাহাকার, ঠিক তখনই বিদেশি ফল চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক আনিসুর রহমান। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, অপ্রচলিত কিন্তু দারুণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, সুস্বাদু এসব ফলের বাজার সম্প্রসারিত হলে স্বল্প জমিতেই লাভের মুখ দেখবেন কৃষক। ফলে গতানুগতিক ফসলের পরিবর্তে পরিকল্পিত কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারে উচ্চমূল্যের এসব ফসল আবাদে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। স্বল্প জমিতে কম বিনিয়োগে অধিক লাভ হওয়ায় এসব ফসল চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে বেকার যুবকদেরও। 

সরেজমিন মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আনিসুর রহমানের ৫ বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে উজ্জ্বল হলদে রঙের নজরকাড়া গোলাকার এক ধরনের ফল। আনিসুর জানালেন, ফলটির নাম মেলন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিচিত সাম্মাম নামে, কোথাও কোথাও হানিডিউও বলা হয়। মেলন মূলত বাঙ্গি, তরমুজ কিংবা মিষ্টি কুমড়া গোত্রের ফল। দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতো হলেও, সুমিষ্ট, সুস্বাদু এ ফলের স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা। এর আদি নিবাস ইউরোপে হলেও চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া ও ভারতেও উৎপাদন হচ্ছে। অনুসন্ধিৎসু কৃষক আনিসুরের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি পাবনার মাটিতেও ফলটির সফল আবাদ হয়েছে।
শুধু মেলন বা হানিডিউ নয়, আনিসুরের ক্ষেতে হাসি ছড়াচ্ছে খসখসে আবরণের রকমেলন, মিষ্টিকুমড়োর মতো সবুজাভ গোলাকৃতির মাশমেলনও। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, আমাদের দেশের বাজারে অপ্রচলিত হলেও মধ্যপ্রাচ্য, চীন, জাপান ও পশ্চিমা দেশগুলোয় এসব ফল খুবই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর, নানা রোগের প্রতিষেধকও বটে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে বারো মাস চাষ হয়, লাভের অঙ্কটাও বেশ।
পাবনার টেবুনিয়া বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপপরিচালক কৃষিবিদ জেএম আবদুল আওয়াল জানান, ক্যান্টালোপ প্রজাতির মেলন জাতীয় ফলগুলো আমাদের দেশের বাঙ্গির মতো দেখতে হলেও মিষ্টতায় তিনগুণ বেশি। আর বাঙ্গির বাজারজাতকরণের সবচেয়ে বড় সমস্যা ফেটে যাওয়া। তবে, ক্যান্টালোপ প্রজাতির ফলগুলো যতই পেকে যাক, তা ফাটে না। আর পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনেক উপকারী একটি ফল। তিনি আরও জানান, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতÑ বারো মাসই এ ফলগুলো চাষাবাদ করা যায়। মাত্র ৫৫ দিনে ফসল পাওয়া যায়, ফলে সাশ্রয়ীও বটে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের এ বক্তব্য যে মিথ্যে নয়, তার প্রমাণ মিলল কৃষক আনিসুরের কথার সুরেই। কৃষক আনিসুর জানান, ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করে এখন দেখছেন লাভের মুখ। অনেকটা নিশ্চিত করেই তিনি বলেন, বাজার সম্প্রসারিত হলে এ ফল তার ভাগ্য ফেরাবে, জীবন বদলে দেবে।
কৃষক আনিসুর রহমান আরও জানান, গেল বছর শখের বশে দেড় বিঘা জমিতে বিদেশি প্রজাতির বারোমাসী তরমুজ আবাদ করে লাভবান হয়েছি। তাই এ বছরও তরমুজের পাশাপাশি বড় পরিসরে ১০ বিঘা জমিতে মেলন, রকমেলন ও মাশমেলনের চাষ করেছি। স্থানীয় বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সুপার শপে ভালো বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি দামে তিনি প্রতি কেজি হলুদ মেলন ১২০ টাকা, রক মেলন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে জমিতে যে ফল রয়েছে, তাতে মৌসুম শেষে সব খরচ বাদে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হবে আশা করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, বর্তমান বাজার মূল্যে ১ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ তা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। সেখানে ১ বিঘা জমির ক্যান্টালোপ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে ধানের সঙ্গে লাভের অঙ্কের পার্থক্যটাও বিস্তর। প্রচলিত ফসলের বাইরে উচ্চমূল্যের এসব ফলের পরিকল্পিত চাষে কৃষকের লাভের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী জানান, চলতি মৌসুমে দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ধানের উৎপাদনের কারণে কৃষক লোকসানে পড়েছেন। সেক্ষেত্রে শুধু ধানের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে, বিকল্প ফসল হিসেবে ক্যান্টালোপের মতো উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষক ভালো লাভ পেতে পারেন। যদিও দেশের বাজারে অপ্রচলিত এরপরও আনিসুরের ভালো লাভ হয়েছে। আমরা উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব ফলের বাজার ও চাষাবাদ সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]