বিশ্বকাপের মঞ্চে নামার আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতির প্রথম সুযোগটা ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। কার্ডিফে দ্বিতীয়টিও গতকাল ভেসে যা-ই যা-ই করছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত না হলেও রীতিমতো ঝড় গেছে টাইগার বোলারদের ওপর; তাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যান-বোলাররা আত্মবিশ্বাসের পারদ তুলে নিতে পারলেও রোডসকে যে ‘কিছু’ কাজ করতে হবে, সেটা আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। ধোনি-রাহুল-কোহলিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমও ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি। ভারতের ৭ উইকেটে ৩৫৯ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে ৩ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২৬৪ রানে। ৯৫ রানের হার দিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারল টাইগাররা।
বড় রানের পাহাড় তাড়া করে জেতা নয়, বিশ্বকাপের মঞ্চে নামার আগে চ্যালেঞ্জ নিতে পারাটা ছিল মূল। কিন্তু সেটা যে খুব ভালোভাবে নিতে পেরেছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা, বলা যাবে না। তবে ৩৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সূচনা বাজে হয়েছে বলা যাবে না। ওপেনিংয়ে নামেননি তামিম ইকবাল। সৌম্য সরকারের সঙ্গে ওপেন করেছেন লিটন দাস। বড় রান তাড়ায় দুই তরুণ বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ভালো শুরু। দেখেশুনে খেলছেন লিটন, রানের চাকা সচল রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন সৌম্য। একটু ঝুঁকি নিয়ে শট খেলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সৌম্য (২৫)। পরের বলে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড সাকিব (০)। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৪৯/২। জোড়া আঘাতের পর লিটন-মুশফিকের ব্যাটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভারতের বোলিং ডিপার্টমেন্টে মূল ভরসা বুমরাহ হলেও তাকে যোগ্য সাহচর্য যে দেন স্পিনাররা, সেটা আরেক দফা বুঝিয়েই বিশ্বকাপে পা রাখতে যাচ্ছে তারা। ৫ উইকেটে ১৯১ স্কোরকে ৮ উইকেটে ২১৬ বানিয়ে। চাহালকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন লিটন (৭৩)। টানতে পারেননি সাব্বির রহমানও (৭), কুলদীপ যাদব জোড়া আঘাতে শিকার মুুশফিক (৯০) ও মোসাদ্দেক (০)। প্রস্তুতিটা ভালো হয়নি মাহমুদুল্লাহও (৯)। শেষ দিকে সাইফউদ্দিন (১৮) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২৭) টেলএন্ডে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও স্পিন ঘূর্ণিতে হারিয়েছেন তারাও। শেষ পর্যন্ত ৩ বল বাকি থাকতে ২৬৪ রানে অলআউট।
তবে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছিলেন রুবেল ও মোস্তাফিজ, দ্রুত রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানকে ফিরিয়ে। পেসারদের দাপটে ২০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮৮ রান। এরপরই মহেন্দ্র সিং ধোনি-লোকেশ রাহুলের ব্যাটিং তা-বে দিশাহারা টাইগার বোলাররা; টি-টোয়েন্টি ঢংয়ে ব্যাট চালিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১৬৪ রানের জুটি গড়েন তারা। দুইজনেই সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপের মঞ্চে নামার আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছেন। ধোনি ৭৮ বলে ১১৩ ও রাহুল ৯৯ বলে ১০৮ রান করেন। এদের জোড়া সেঞ্চুরি আগে অধিনায়ক কোহলিও কম যাননি, ৪৬ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন নিজের স্টাইলে। শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়াও তাই করেছেন, ১১ বলে ২১ রান। বিশ্বকাপের মঞ্চে নামার আগে ৯ বোলারের হাতে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বল দিলেও একমাত্র অধিনায়ক মাশরাফিই যা একটু কিপ্টে ছিলেন, ৬ ওভারে দিয়েছেন ২৩। ঝড়টা বেশি গেছে নবীন পেসার আবু জায়েদ রাহির ওপর, ৩-০-৪১-০! রান কম দেননি মোসাদ্দেক সৈকতও, ৩-০-৩২-০; পরীক্ষিত সাকিব ২টি উইকেট নিলেও তার ৬ ওভারে ৫৮ রান তুলেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। দুটি উইকেট নিয়েছেন রুবেলও। মোস্তাফিজের ৮ ওভারে ৪৩, সাইফউদ্দিন ৬ ওভারে ২৭ ও সাব্বির ৫ ওভারে ৩০ রান দিয়ে একটি করে উইকেট নেন। কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার, সেটা তো করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, ৭ উইকেটে ৩৫৯ রানের পাহাড় দাঁড় করিয়ে।