
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, মে ২৯, ২০১৯ | |
গেল বছর নানা সুযোগ পেলেও সে অনুপাতে ভালো ফল করতে পারেননি দেশের ব্যাংক খাত। ঋণ বিতরণ আমানত সংগ্রহ বাড়লেও, বাড়েনি ঋণ আদায়। আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর সুদ আয় অনেক বাড়লেও নিট মুনাফা কমেছে। খেলাপি ঋণ কমানোর কোনো উদ্যোগ কাজে আসেনি। বরং পুনঃতফসিলের সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও উল্টো বেড়েছে খেলাপি ঋণ, সুদ মওকুফ ও অবলোপন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৮ তে এসব বিষয় ওঠে এসেছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
আলোচ্য বছরজুড়ে আলোচিত ছিল সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে ঋণ বিতরণ এবং আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (নয়-ছয়) সুদ হারের । নয়-ছয় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে খাতটি। এ সময় ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি ঋণ আদায়। খেলাপি ঋণ কমাতে গিয়ে প্রকৃত আদায় বাদ দিয়ে নানান পদ্ধতি ব্যবহার করেছে ব্যাংকগুলো। ভালো ও মন্দ সূচকের মধ্যে অসামঞ্জস্য শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের মুনাফায় ধস নামিয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগ্রাসী ঋণ বিতরণ ব্যাংকগুলোর সুদ আয় অনেক বাড়িয়েছে। গেল বছর ব্যাংকগুলোর সুদ আয় হয়েছে ৮৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আগের বছর এ আয় ছিল ৭০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুদ আয় বেড়েছে ১৫ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ২২ শতাংশ। আমানতের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করার গেল বছর ব্যাংকগুলোর মোট আয় দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আগের বছর মোট আয় ছিল ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ আয় থেকে অর্থ নিয়ে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়েছে ৫০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর আয় খেয়ে ফেলেছে।
ব্যাংকগুলোর সুদ আয় ও মোট আয় গেল ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু প্রকৃত মুনাফ গেল ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে গেল বছর। আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়ে ২০১৮ সালে পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকায়। আগের বছর পরিচালন মুনাফা হয় ২৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। তবে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে গিয়ে নিট মুনাফা সাড়ে ৫৭ শতাংশ কমেছে। মুনাফার প্রবৃদ্ধির ধারায় ২০১৫ সালে ব্যাংকগুলোর মুনাফা হয় ৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৩১০ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৫১০ কোটি টাকা নিট মুনাফা হলেও গেল বছর (২০১৮) তা নেমেছে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকায়। ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কর্মকা-ের পাশাপাশি নেতিবাচক সূচক বেড়েছে ব্যাপক হারে। ব্যাপক হারে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, পুনতফসিল, সুদ মওকুফ ও অবলোপনও বেড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। আমানতের ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বা ৩৩ শতাংশ রয়েছে ৫ ব্যাংকের কাছে। ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ১ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। এ ঋণের ২৬ শতাংশই পেয়েছে বড় শিল্পের মালিকরা। আমাদানি-রপ্তানিকারকরা পেয়েছেন মোট ঋণের ১৫ শতাংশ। আবার বিতরণকৃত ঋণের ৩১ শতাংশ দিয়েছে পাঁচ ব্যাংক। ঋণ কার্যক্রমে অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা অব্যাহত থাকায় খেলাপি ঋণও বাড়ছে। ২০১৭ সালে খেলাপি ছিল ৭৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। গেল বছর তা দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণের ৫১ শতাংশই রয়েছে ৫ ব্যাংকে, যার পরিমাণ ৪৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের ১২ শতাংশ তৈরি পোশাকে, ৮ শতাংশ বস্ত্রশিল্পে এবং ১৬ শতাংশ বড় শিল্পে কেন্দ্রীভূত।
খেলাপি ঋণ কমাতে অবলোপন, পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৫২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। শুধু ২০১৮ সালে অবলোপন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। তবে এ সময় পর্যন্ত আদায় করেছে ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৪০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ কমাতে রেকর্ড পরিমাণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। গেল বছর পুনঃতফসিল করা হয়েছে ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২৪ শতাংশ। গেল ৪ বছরের মধ্যেল গেল বছর সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল করা হয়েছে। পুনঃতফসিল সুবিধার ৫৮ শতাংশই ভোগ করেছেন বড় শিল্পপতিরা।
এদিকে ব্যাংকের আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধির ব্যবধান বাড়ছে। ২০১৪ সালে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ অন্যদিকে আমানত বাড়ে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সালে ঋণ ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়লে আমানত বাড়ে মাত্র ১০ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। সর্বশেষ গেল বছর ঋণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ আমানত বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ২০১৮ সালে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ও তারল্য ন্যূনতম আবশ্যকীয় হারের চেয়ে বেশি ছিল। তিনি ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জিভূত মন্দঋণ কমাতে ব্যাংকারদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |