logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বৃহস্পতিবার, মে ৩০, ২০১৯
আজ শুরু ব্যাট বলের বিশ্বযুদ্ধ
শফিক কলিম

অপেক্ষার ক্ষণ শেষ; অপেক্ষা উইকেটে বল পড়ার; ব্যাট-বলের বিশ্বযুদ্ধে নামতে প্রস্তুত ক্রিকেট বিশ্বের ১০ দেশের ১১০ ক্রিকেটার। বাংলাদেশ সময় বিকাল পৌনে ৩টায় ওভালে স্বাগতিক ব্রিটিশদের বিপক্ষে মাঠে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনাল দুর্ভাগা ইংল্যান্ড; ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২Ñ তিনবার ফাইনালে উঠেছে, হেরেছে প্রতিবারই। প্রতিপক্ষও কম না, হটফেভারিট তকমা নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও ফাইনাল হাতছানি দিলেও সেমিফাইনাল বাধা উৎরাতে পারে না! সাতবার বিশ্বকাপ খেলে চারবার সেমির গেরো ছিঁড়তে না পারায় চোকার্সই থেকে গেছে।

উইকেটে ব্যাট-বলের জম্পেশ যুদ্ধ হবে। কিন্তু বাংলাদেশে বিশ্বকাপের উন্মাদনা কই? বছরখানেক আগে হয়ে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যে ক্রিকেট বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতায় মিলছে না! রাশিয়া বিশ্বকাপের স্মৃতি এখনও তো পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। এক বছর আগের ফুটবল উন্মাদনার চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না। এখনও পাড়ার অলিতে-গলিতে ছেঁড়া-ফাটা, রোদেজ্বলা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, ইতালি, পর্তুগাল কিংবা ফ্রান্সের পতাকা দেখা যাবে।

মেসি-নেইমার, রোনালদোদের জন্য পতাকা টাঙানো, বাড়ি রাঙানো ফুটবল বিশ্বকাপের আগমনী গান হয়ে দৃশ্যমান হওয়া শুরু হয়েছিল বেশ আগে। কোথাওবা মাসখানেক আগে; ক্রিকেট বিশ্বকাপে? ব্যাট-বলের যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেলে হয়তো উন্মাদনা বাড়বে, কিন্তু ঢাকার রাস্তায় বিশ্বকাপের ছাপ কই?

ক্রিকেট বিশ্বকাপে তো বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিটাই থাকছে। মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিমÑ বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের খুব কাছের এই নামগুলোই আলো ছড়াবে বিশ্বকাপে, প্রত্যাশা অন্তত তাই।
চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। মাঝের চার বছরে ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসের চেয়ে সাফল্যের হাসি অনেক বেশি। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের বাইরে কখনও কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপও ঘুচেছে। তাও বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে পা রাখার ঠিক আগে।
তাতে কি উন্মাদনা বেড়েছে। হয়তো, চায়ের দোকানে, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস-কমেন্টে টের পাওয়া যায়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিটি জয়ে হয়তো কাজ ফেলে রাখা মানুষ কোথাও মিছিল করবে। তথাপি ফারাক থাকবে। কিছুটা দায় এখানে আইসিসিরও। ২১১টি সদস্য নিয়ে ফিফা যেখানে গ্লোবালাইজেশনের প্রতীক, আইসিসির মোট সদস্যই তার অর্ধেক (১০৫), তার মধ্যে ৯৩টির আবার খোঁজখবর থাকে না, পূর্ণ সদস্য ১২টি দেশেই যা একটু মাতামাতি। এবার তাও নেই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপটাকে ব্রাহ্মসমাজ করে রেখেছে, ১০ দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে। উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক হোক বা সত্যিকার অর্থেই ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়া, ২০২২ বিশ্বকাপে ফিফা যেখানে ৪৮ দল নিয়ে করার চেষ্টারত, ক্রিকেট বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসে সব মিলিয়ে দেশ দেখেছে ২০টি! টাকার অঙ্কেও বেশ পিছিয়ে ক্রিকেট। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে অর্থ পুরস্কার ছিল ৪০ কোটি ডলার, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সই পেয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার, সেখানে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মোট প্রাইজমানি ১ কোটি ডলার।
ফুটবলে ৪ বছর পরপর সব মহাদেশের সব দলের দেখা মেলে একই সমতলে, ক্রিকেটে তো সারা বছরই ভারত-অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড খেলেছে। অচেনাকে নতুন করে জয়ের রোমাঞ্চ কই?. ২০১৫ থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া-ভারত পরস্পর টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ৩৭ বার! প্রতিদিনই কাচ্চি খেতে থাকলে বিয়ে বাড়ির কাচ্চিরও বিশেষত্ব থাকে না, ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনার একমাত্র ইতিবাচক দিক হয়তো আইসিসির টুর্নামেন্টে দুই দলের ম্যাচটার জন্য আবেদন থাকে।
বিশ্বকাপ দিয়ে জন্মভূমিতে ফিরেছে ক্রিকেট, ইংল্যান্ডে ঠিক ২০ বছর পর আবার হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর। ১০ দল, ১০ দলনেতা। নেতৃত্ব, দলে প্রভাব, অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে ওপরের সারিতে মাশরাফী, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত বিশ্বকাপে খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। বিশ্বকাপ অভিষেক হচ্ছে সাত অধিনায়কের। মাশরাফি ছাড়া ওয়ানডের বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা আছে মরগ্যান ও হোল্ডারের। সবার মধ্যে আলাদা সারফরাজ, একমাত্র তার আছে আইসিসি ইভেন্ট জয়ের অভিজ্ঞতা। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল মরগ্যানের ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে আক্ষেপ ভুলতে চায় তিনবারের ফাইনালিস্ট ফেভারিট থ্রি লায়ন্স। স্বাগতিক হওয়ায়, ওয়ানডে সেরা দলটার ওপরে চাপ থাকলেও সেটা জয় করে ইংলিশদের দিতে চান প্রথম বিশ্বকাপ। ১৯৮৩ ও ২০১১ চ্যাম্পিয়ন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির ওপর চাপ পাহাড়সম, খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন ২০১১ তে, এবার অধিনায়ক হিসেবে সোনালি ট্রফি জিততে চান। সর্বোচ্চ ৮ বার ফাইনাল খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৫ বার। অ্যারন ফিঞ্চ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। গতবার খেলেছেন ক্লার্কের নেতৃত্বে, এবার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে অজি নেতা। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতলেও আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান, দলের কান্ডারি সরফরাজ আহমেদ, মেন ইন গ্রিন ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে তার নেতৃত্বে, এবার মহাযজ্ঞে। চার বছর আগে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল নিউজিল্যান্ড, নেতৃত্ব দিতে জানেন এ দলের কেন উইলিয়ামসন, গত আসরে ফাইনাল হারের তিক্ততা ভুলতে চায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। সময়ের অন্যতম সফল অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি, সাফল্যের হার আশির ওপরে। ২০১৮ সালের শুরু থেকে ৫টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতেছে সাউথ আফ্রিকা, হেরেছে একটিতে। বিশ্বকাপে চোকার্স তকমা এড়ানোর চাপ ডু প্লেসির। প্রথম তিন আসরে ফাইনাল খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পথ দেখাবেন জেসন হোল্ডার। একসময়ের পরাশক্তিরা বাছাই খেলে এসেছে বিশ্বকাপে। চমক শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুনারতেœ। চার বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন, তাও অধিনায়ক হয়ে। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নাবি-আসগর আফগানকে সরিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা আফগানিস্তান নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে গুলবাদিন নাইবকে। শক্তি-সামর্থ্য যাই হোক, সবার চোখ সোনালি ট্রফিতে। ১৪ জুলাই লর্ডসে সেটা উঁচিয়ে ধরতে চান ঊর্ধ্বে। সেই যুদ্ধে নেমে পড়ছেন ১০ জাতির ক্রিকেটাররা।
ব্যাট-বলের যুদ্ধ আজ শুরু হলেও বাকিংহাম প্যালেসকে পেছনে রেখে দ্য মলে বর্ণিল উদ্বোধন করে বিশ্বকাপের উত্তাপ ছড়ানো হয়েছে ইংল্যান্ডে তথা গোটা ক্রিকেট বিশ্বে। যদিও উদ্বোধনী নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন আয়োজকরা। অবশ্য প্রযুক্তির কল্যাণে গতকাল রাতে সরাসরি দেখা হয়ে গেছে পর্ব। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দেশের ক্রিকেটারদের রাখা হয়নি, সবাই প্রথম ম্যাচের জন্য ভেন্যুতে চলে গেছেন, তাই অনুষ্ঠানে ডেকে বাড়তি চাপ দিতে চায়নি আইসিসি। তবে প্রতিটি দেশের একজন করে কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও সেলিব্রেটি ছিলেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]