logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২০
সানেম সম্মেলনে বক্তারা
প্রবৃদ্ধির পরবর্তী ধাপে যেতে সুশাসন ও নৈতিকতা জরুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক

 

অর্থনৈতিক উন্নতিতে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও বৈশ্বিক অনেক সূচকে পিছিয়ে। তাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরের ধাপে যেতে হলে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনৈতিকতা চর্চা বন্ধের পাশাপাশি সুশাসনের সূচকগুলোতেও নজর দিতে হবে। দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে উন্নয়ন টেকসই ও বেগবান করা যাবে না। 
রোববার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) দুই দিনব্যাপী অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ সম্মেলনের উদ্বাধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল হক খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানসহ অনেকে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের সূচকে অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু সুশাসনের আন্তর্জাতিক সূচকগুলোতে অবস্থান অনেক নিচে। তারপরেও সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। তবে এর পরবর্তী ধাপ পেরোতে প্রবৃদ্ধি এবং সুশাসনের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। কারণ, একদিকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, অন্যদিকে সুশাসনের সূচক নিচে পড়ে আছে। অনৈতিকতা চর্চার কারণে হাতেগোনা কিছু মানুষ সৎ থাকার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না। তাই নৈতিকতা বাড়ানোর জন্য সামাজিক প্রচারাভিযান দরকার।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টের দিকে তাকালে দেখা যায়, সুশাসন নেই, আর্থিক খাতের দুর্নীতি, খাদ্য দূষণ। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি কমাতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কারের কথা ভাবতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ ছাড়া আর্থসামাজিক খাতে আর উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজস্ব আদায়ে ধীর গতি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন না থাকা উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায়। সন্তোষজনক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো গড়ে উঠছে না। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে উচ্চ প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষির বাইরে অর্থনীতিতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা, বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের রেমিট্যান্স এবং নারী শ্রমিকদের স্বল্প মজুরিতে উৎপাদিত তৈরি পোশাক। পরবর্তী ধাপে যেতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন আছে। 
শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে স্কিল বাড়াতে হবে। নিম্ন প্রযুক্তি ও কম মজুরির উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে তো দারিদ্র্য দূর হবে না। তাই জনমিতিকে কাজে লাগাতে কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার পাঠক্রম চালু করতে হবে। শিক্ষার কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে।
অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু কিছু প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। সুশাসন না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে কীভাবে? তরুণ গবেষকদের বর্তমান সমস্যাগুলো বুঝে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপনের এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। যেসব বিষয় ও সূচক নিয়ে এখন অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করছেন এর বাইরে কিছু বাদ পড়ছে কি না সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বর্তমানে শ্রম খাতের ৮৮ শতাংশ রয়েছে ইনফরমাল (অপ্রাতিষ্ঠানিক) খাতে। উন্নয়ন করতে হলে তাদের ইনফরমাল থেকে ফরমাল শ্রমবাজারের দিকে নিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির ছাত্র ও শিক্ষকরা এখন নতুন নতুন অর্থনৈতিক ইস্যুর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য শুভ মুহূর্ত।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশে পাজলের মতো উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠাকি উন্নয়ন না হলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এই উন্নয়ন বেশি দিন টেকসই হবে না। আর্থিক খাতে সংস্কার, কর কাঠামো উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি। দুর্নীতি প্রতিরোধেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। 
‘উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পঞ্চম সানেম সম্মেলন। 
সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, শ্রমবাজার, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ে ৬৫ জন গবেষক তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করবেন। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের ২৭ জন গবেষক অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে দুই দিনে অন্তত ২০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে। মহাখালী ব্র্যাক ইন সেন্টারে সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশনের পর আজ দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন বসবে গুলশান স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]