
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২০ | |
গ্রামের নাম সোহাদিয়া। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে শহরের পরিবেশের অবস্থান থাকলেও এখনও অজপাড়াগাঁয় রয়ে গেছে গ্রামটি। এখানে কয়েক হাজার লোকের বাস হলেও দারিদ্র্যসীমার নিচে অনেকেরই অবস্থান। নানা কারণে অনগ্রসর এ গ্রামের একটি অংশের শিশুরা শিক্ষার সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরেই। তাই শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এবার এগিয়ে এলেন এলাকার উঠতি যুবক ও যুবতীরা। তারা নিজেদের উদ্যোগেই গড়ে তুলেছেন শিশুদের বর্ণমালা শেখার পাঠশালা। অপেক্ষা এখন গ্রামের এ শিশুদের আলোকিত মানুষ গড়ে তোলা। এ পাঠশালার উদ্যোক্তারা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের এ গ্রামে মোট সহস্রাধিক পরিবারের বসবাস। এ গ্রামের পাশেই রয়েছে হরতকিটেক নাম আরও এক গ্রাম। দুই গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার পাঠশালা। শিক্ষা নিতে সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের দুই আড়াই কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে থাকে। তবে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী পরিবারের শিশুদের দূরের গন্তব্যের কারণে শিক্ষার আগ্রহ কম ছিল। এ ছাড়াও গ্রামের মধ্যে খাসপাড়া এলাকায় সরকারি ভূমিতে প্রায় অর্ধশত পরিবারের শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। তাদের পাশে দাঁড়াতেই এলাকার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ১২জন বন্ধু মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা শিশুদের নিয়ে শুরু করেছেন বর্ণমালা শেখার পাঠশালা। তবে বিদ্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে অধ্যয়নরত হাবিবুন নেসা মিমি। মিমি জানান, এ সমাজের অনগ্রসর পরিবারের কেউ দূর গন্তব্যের কারণে, আবার কেউ দরিদ্র্যতার অজুহাত তৈরি করে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে আসছিল। এটা আমাদের দেশের জন্য সুনাগরিক গড়ে তোলার পথে অন্তরায়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশের এ শিশুদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতেই তারা এ পাঠশালা গড়ার উদ্যোগ নেন। আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে শিশুদের বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়াই তাদের এখন লক্ষ্য। ২০২০ মুজিব বর্ষকে সামনে রেখেই তাদের এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৫ জানুয়ারি। এ পাঠশালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০জন। স্থানীয় একটি খোলা মাঠে শিশুরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
মিমি আরও জানান, তাদের খোলা আকাশের নিচে তাদের এ পাঠশালার অবস্থান থাকলে একসময় হয়তো এ অবস্থা থাকবে না। এ বছরই নাম নিবন্ধন করে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে বই সংগ্রহ করে শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত এ পাঠশালাটির শিশুদের বসার সমস্যার সমাধান করার স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তি বেঞ্চ নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। বিদ্যালয়টির অপর উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু নৈতিক দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব থেকেই মূলত এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়া। নিজে শিক্ষিত হলেও প্রতিবেশী অশিক্ষিত থাকলেও এর দায় বর্তাবে নিজের ওপরই। তাই এলাকার শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতেই তাদের এ প্রচেষ্টা। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য হুমায়ুন কবির জানান, এ গ্রাম ও পাশের একটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। মিমির পাঠশালায় এলাকার অনেক শিশু অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি তৈরি হয়েছে। অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা তো নিশ্চিত হবে। এলাকার যুবকদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অসিম বিভাকর জানান, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এখনও আমাদের দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় শিশুরা শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত হওয়া সত্যিই দুঃখজনক। এ এলাকার যুবকদের এমন উদ্যোগে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে গন্তব্য করা শিশুরা শিক্ষার পাদপ্রদীপে ফিরে এসে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। এমন কাজে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন জানান, এলাকার যুবকদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার। তাদের এ পাঠশালায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণসহ সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে ভবিষ্যতে সারাদেশে সহস্রাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে। সোহাদিয়া গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হবে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |