প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২০ | |
ইসলামে নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন পাঁচবার হাত ধোয়ার স্বয়ংক্রিয় বিধান রয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আবার এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে ওজু করে পবিত্রতা অর্জনের বিধান রেখেছেন। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে অজু করে পবিত্রতা অর্জনের বিষয়ে এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নাও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ করো এবং পাগুলো টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে ও তোমাদের ওপর স্বীয় নিয়ামত পূর্ণ করতে চান; যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা মায়েদা : ৬)।
ওজুর বিশেষত্ব ও বাস্তবিক গুরুত্বের ব্যাপারে রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলেন, ‘বলো দেখি যদি কোনো ব্যক্তির দরজার সামনে একটি নহর প্রবাহিত থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবারা আরজ করলেন, কিছুই বাকি থাকবে না। তখন নবী (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অবস্থাও এরকমই যে, আল্লাহ তায়ালা তার বদৌলতে গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন।’ (বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি)।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘বান্দা ওজু করার সময় যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন (ওজুর) পানির সঙ্গে ওইসব গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দুই চোখে করেছিল। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন হাতের দ্বারা করা গোনাহ পানির সঙ্গে বের হয়ে যায়। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পা দিয়ে সংঘটিত গোনাহ পানির সঙ্গে বের হয়ে যায়। আর এভাবেই সে গোনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভ করে। (মুসলিম)। আলোচ্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, ওজুর মাধ্যমে বান্দার নির্দিষ্ট অঙ্গগুলোর দ্বারা কৃত গোনাহগুলো ঝরে যায়। আবার বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ওইসব অঙ্গ পরিষ্কার ও পবিত্র হয়ে জীবাণুমুক্তও হয়।
সুতরাং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচবার ওজু করার মাধ্যমে হাত, মুখমণ্ডল ও পা ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে জীবাণুমুক্ত থাকা অনেকটা সহজ।
এছাড়া শুধু হাত ধোয়া বা পরিষ্কার রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রেই তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার আদেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। (মুসনাদে আহমাদ)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) আরও
বলেন, খাদ্য গ্রহণের আগে ও পরে অজু করার (হাত ধোয়ার) মধ্যে খাদ্যের বরকত নিহিত। (আবু দাউদ, মেশকাত)।
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) খাওয়ার পর কুলি করতেন এবং হাত ধুতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হাত পরিষ্কার না করেই হাতে গোশতের গন্ধ ও তৈলাক্ততা নিয়ে ঘুমালো, এতে তার কোনো ক্ষতি হলে এজন্য সে নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।’ (আবু দাউদ)।
খাদ্য গ্রহণ ছাড়াও হাত দিয়ে আমরা চোখ-মুখ মুছি এবং প্রয়োজনবোধে মুখগহ্বরে এমনকি লজ্জাস্থানেও এ হাত ব্যবহার করি। আবার হাত দিয়েই আমরা ময়লা-আবর্জনা দূর করে থাকি। তাই জাগ্রত অবস্থায় হাতকে তো পরিষ্কার রাখতেই হবে। এমনকি রাসুল (সা.) ঘুমাতে যাওয়ার আগেও হাত ধোয়াসহ পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন অজু করে নাও, যেমনিভাবে তুমি সালাত আদায়ের জন্য অজু করে থাক। এরপর ডান কাতে শুয়ে পড়ো।’ (বোখারি ও মুসলিম)। শুধু তাই নয়, ঘুম থেকে উঠেও আগে হাত ধোয়ার নির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ রাতের ঘুম থেকে জেগে তার হাত দুই অথবা তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত যেন পানির পাত্রে প্রবেশ না করায়। কেননা তোমাদের কেউ জানে না যে, তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে।’ (বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি)।
প্রস্রাব-পায়খানার পর ঢিলা-কুলুপ ও পানি ব্যবহার করার পর প্রয়োজনে মাটিতে হাত ঘষে ও ওজু করে হাত পরিষ্কার করার বা পরিষ্কার রাখার নির্দেশনা ইসলামে রয়েছে। হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ শৌচাগারে গেলে সে যেন তিনটি ঢিলা নিয়ে যায়। কারণ তিনটি ঢিলা পবিত্রতা অর্জন করার জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ)।
এক্ষেত্রে ঢিলা-কুলুপসহ পানি ব্যবহার করা সর্বোত্তম পবিত্রতা। কোরআন-সুন্নাহ ও সালফে সালেহিনের আমল দ্বারা যা প্রমাণিত।
সুতরাং কেউ যদি সঠিক নিয়মে প্রস্রাব-পায়খানা করত উত্তমরূপে ঢিলা-কুলুপ ও পানি ব্যবহার করে তবে তার হাত (বাম) ততটা নোংরা থাকার কথা নয়। এরপরও পরিপূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত রাখতে মাটিতে হাত ঘষা বা পানি দিয়ে হাত ধোয়ার নির্দেশনা তো রয়েছেই। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) যখন পায়খানায় যেতেন আমি তখন লোটা কিংবা মশকে করে পানি নিয়ে আসতাম। তিনি ইস্তিঞ্জার পর মাটিতে হাত ঘষতেন। এরপর আমি অন্য একটি পাত্রে পানি নিয়ে আসতাম, যা দ্বারা তিনি অজু করতেন।’ (নাসাঈ, আহমাদ)।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |