logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২০
অনিয়ম-অভিযোগের মধ্যেই পর্দা নামল বাণিজ্যমেলার
৩৭টি অভিযোগে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমঝোতা হলেও ৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

দাম বেশি নেওয়া, পণ্যের নিম্নমান, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, অফারের নামে প্রতারণাসহ নানা অনিয়ম-অভিযোগের মধ্যে পর্দা নামল ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার। মেলা শুরুর দ্বিতীয় দিন থেকে ভোক্তাদের অভিযোগের মাধ্যমে এর শুরু। অন্যদিকে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের অভিযোগ ছিল, মেলা প্রাঙ্গণ হকারমুক্ত করা হোক। মেলা বাস্তবায়ন কমিটির অভিযানের পরও মেলার শেষ দিন পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গেই হকাররা তাদের পণ্য বিক্রি করেছেন।
বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে ক্রেতা-দর্শনার্থী এবং বিক্রেতাদের কাছ থেকে। মেলার শেষ দিকে বিক্রেতাদের অভিযোগ ছিল, এবার ভোটের কারণে আশানুরূপ বিক্রি হয়নি। এ অজুহাতে তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই বার মেলার সময় বাড়ানো হয়। বাণিজ্যমেলা ৩১ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুইবার সময় বাড়ানোর ফলে এ মেলার পর্দা নামে ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার।
অভিযোগ বিষয়ে মেলা বাস্তবায়ন কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করেছি। দর্শনার্থী সেজে হয়তো অনেক হকার মেলায় প্রবেশ করেছেন। মনে রাখতে হবে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। এটি দেশি-বিদেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীর মিলনমেলা। আমরা কঠোর ছিলাম, আগামীতে আরও কঠোর হবো।
মেলা সূত্রে জানা গেছে, এবারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে মোট ৪৫টি অভিযোগ আসে ভোক্তাদের কাছ থেকে। এর মধ্যে ৩৭টি অভিযোগে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সমঝোতা হলেও ৮টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন কারণে মোট ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাছাড়া ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উদ্যোগে দাম বেশি নেওয়া, পণ্যের নিম্নমান আর মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অভিযোগে মোট ৩০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে মোট ১ লাখ ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৯০টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল ছিল। মেলায় প্রবেশের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিটের মূল্য ছিল ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের টিকিটের মূল্য ছিল ২০ টাকা। বাণিজ্যমেলায় ১৩টি ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ৩৮ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
মেলায় শুরু থেকেই হকাররা প্রবেশ করতে থাকেন। শেষ দিকে হকারের আধিপত্য বিস্তার লক্ষ করা যায়। স্টল-প্যাভিলিয়নের বিভিন্ন পাশে তারা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করতে থাকেন বেশ দাপটের সঙ্গে। তবে হকার ও ভিক্ষুকের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বেশিরভাগ ক্রেতা-দর্শনার্থী। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বলেন, আন্তর্জাতিক মেলায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের সুযোগ থাকে। মেলার সঙ্গে দেশের সম্মান জড়িত। বিদেশি অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিন আসছেন এখানে। এ অবস্থায় হকার-ভিক্ষুকের উপস্থিতি সম্মানজনক নয়। বাণিজ্যমেলাকে হকার ও ভিক্ষুকমুক্ত করার দাবি করেন তারা। কারণ, বিদেশি দর্শনার্থীরা এসব দেখলে ভালোভাবে নেবেন না। অন্যদিকে মেলা বাস্তবায়ন কমিটি দর্শনার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। তবে তাদের এ অভিযান হকারের সংখ্যা বিবেচনায় একেবারেই সামান্য।
তবে শেষদিনে মেলায় আসবাব, জুয়েলারি, প্রসাধনীসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের স্টলগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। যেসব দোকানে মেলা উপলক্ষে মূল্যছাড় চলছে সেসব স্টলে ভিড় যেন কখনও কমছিল না। আর বিক্রেতারাও খুশি মেলার এই শেষ সময়ে বেচা-বিক্রিতে।
পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ড্রেসলাইনের স্টলকর্মী বলেন, মেলার সময়সীমা বাড়ানোর ফলে গত কয়েক দিন সন্ধ্যার পর ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। এটা এবার অনেক নেতিবাচক ব্যাপারের মধ্যে একটি ইতিবাচক ব্যাপার। 
শেষ সময়ে এসে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে মেলায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য বলেন, এই সময়টা আমাদের কাজের চাপ অনেক বেশি। একই সময়ে বইমেলায় ডিউটি করেছি। আবার বাণিজ্যমেলায় ডিউটিতে আছি। আমাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে আমরা পালন করে চলেছি। এখনও পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 
মিরপুর থেকে ছোট বোনকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন আশা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান কণা। তিনি বলেন, এবার দুই দিন মেলায় এসেছি। প্রথম দিকে যখন এসেছিলাম মনে হয়েছিল এ বছর হয়ত মেলা তেমন জমবে না। কিন্তুশেষদিকে ভালোই চলছে মেলা।
মেলার সদস্য সচিব বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রথমদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থী কিছুটা কম ছিল। তবে সময় বাড়ানোর কারণে শেষ দিকে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। শুক্রবার ও শনিবার দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণে হাঁটার উপায় ছিল না। ঠিক কত দর্শনার্থী হয়েছে, সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই, তবে আমাদের হিসাবে আশানুরূপ দর্শনার্থী হয়েছে। 
আয়োজনেই ২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় হওয়া এবারের বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, দুবাই, ইতালি ও তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]