
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২০ | |
ডায়াবেটিস এখন নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। শরীরকে আক্রমণ করে ধীরে ধীরে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস তরুণদের মধ্যে বেশি, তবে বেশ বিরল। প্রচ- পিপাসা ও বারবার প্র¯্রাব উপসর্গ থাকতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এ জন্যই রোগীরা চেকআপ করতে দেরি করে ফেলতে পারেন। এরই মধ্যে হয়তো জটিলতার সূচনা হয়ে গেছে। কারও ডায়াবেটিস আছে কিনা তা জানার সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখা। রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখা না হলে ডায়াবেটিস রোগীর আহার ও পানীয়পান বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য রক্তের নিরাপদ গ্লুকোজ সীমা বড় মাপের নয়। এইচবিএ-১সি মান ৭ শতাংশের উপর হলেই বিপদ ছোঁয়ার অবস্থা হয়। আর ৮ ঘণ্টা উপবাসের পর ১৩০ মিলিগ্রামের উপর বা ৭০ মিলিগ্রামের নিচে হলে, আর অন্যসময় ১৮০ মিলিগ্রামের উপর হলে অবস্থা বিপদসীমার মধ্যে।
জটিল মনে হতে পারে শুনতে, নিরাপদ সীমা এত সীমিত, সেক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজমান মনিটর করা এবং ব্যবস্থাপনা করা খুবই প্রয়োজন যদি জটিল সমস্যাগুলো এড়াতে হয়। কেবল প্রতিদিন রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখা নয়, কয়েক ঘণ্টা পর পরও তা মেপে দেখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। রক্তে গ্লুকোজ মান উঁচুতে উঠলে শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়া বেহাল হয়ে পড়ে, কখনও তৎক্ষণাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। আবার রক্তে গ্লুকোজ মান নেমে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে মগজে গ্লুকোজ চলাচল নিঃশেষিত হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। তখন দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়তে হয়। কখনও সংজ্ঞালোপ পায় রোগীর। আজকাল ল্যাবরেটরিতে গিয়ে ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজ মাপানো বেশ কঠিন। নিয়মিত তা সম্ভবও নয়। আরও ঘনিষ্ঠ মনিটরিং চাই, বিশেষ করে পথ্য রুটিনে যদি অনিয়ম ঘটে, তাহলে তো এটি আরও বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কিছু গবেষক দেখেছেন, ৭৭ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর আহারের দুই ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজ মান ১৬০ মিলিগ্রামের উপরে উঠে যায়। রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিরাপদ সীমার মধ্যে রাখার জন্য পথ্যবিধি ও ব্যায়ামের পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কিন্তু সব সময় এই মান মনিটর না করলে যে কোনো সময় নিরাপদ সীমা অতিক্রম করা অস্বাভাবিক নয়। আবার গ্লুকোজ মানে পরিবর্তনটি ব্যক্তিবিশেষে হেরফের হতে পারে। আবার উপসর্গ সব সময় দৃশ্যমানও হয় না। অনেক ডায়াবেটিস রোগী অজান্তে বিপদসীমা অতিক্রম করে যান কোনো লক্ষণকে উপসর্গ ছাড়াই। অথচ বিপজ্জনক সীমায় রক্তের গ্লুকোজ বারবার থেকে গেলে রক্তে বাড়তি গ্লুকোজ জমা হয়ে কালক্রমে রক্তনালির পথ রোধ করে দেয়, চোখ, টিস্যু, কিডনি, হৃৎপি-ের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে ফেলতে পারে। অনেক সময় এ থেকে স্ট্রোক হয়ে যায়, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চরক্তচাপ ও কিডনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়।
আরও জটিল হলে, চোখ অন্ধ হয়ে যায়, রক্ত চলাচল বন্ধ হলে অঙ্গচ্ছেদের প্রয়োজন ঘটে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডায়াবেটিস ইউনিটের পরিচালক ডা. হিলারি কিং বলেন, ‘যেহেতু বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগী রোগের কারণে মৃত্যুমুখে পতিত না হয়ে বরং রোগের পরিণতির ধারাবাহিকতায় মারা যান সে জন্য এতে মৃত্যুহারের পরিসংখ্যান যে অনুমান পাওয়া যায় তা সঠিক অবস্থার থেকে বেশ নিচে।’
শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বয়স্ক ও বৃদ্ধদের জটিলতা হয় বেশি, তাদের জন্য রক্তের গ্লুকোজ মনিটরিং বেশি প্রয়োজন, যাদের প্রায়ই রক্তের গ্লুকোজ নিচে নেমে যায় এবং যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য এটি বেশি প্রযোজ্য। বস্তুত দেখা যাচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আহারের পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি হলে হৃদরোগের একটি বড় ঝুঁকি থাকে। ইনসুলিননির্ভর নয় এমন ডায়াবেটিস অর্থাৎ টাইপ-২ ডায়াবেটিস মহামারী আকারে বিস্তৃত হওয়ার ব্যাপারটি চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ ধরনের ডায়াবেটিসের কারণও খুব স্পষ্ট নয়। বংশগতি, জীবনযাপনের ধরন এবং হরমোনের চড়াই-উৎরাইয়ের পেছনে রয়েছে এমন ধারণা। এ জন্য চিকিৎসকরা বলেন, এ রোগে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আরও ঘনিষ্ঠ মনিটরিং প্রয়োজন। দিনে অন্তত একবার রক্তে গ্লুকোজ মান মেপে দেখা ভালো।
ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার জন্য প্রথমে দরকার রক্তের গ্লুকোজ মান মনিটর করা। এ জন্য সেল্্ফ মনিটরিং বা নিজের গ্লুকোজ নিজেই মেপে দেখা অনেক বেশি উপযোগী এবং সুবিধাজনক। এ জন্য যন্ত্রপাতিও রয়েছে এবং যা সহজেই চালাতে পারেন রোগীরা নিজেই। রক্তের গ্লুকোজ মান নিজে নিজে মেপে দেখলে যে নিবিড় মনিটরিং হয় তাতে ব্যক্তিবিশেষে রক্তের গ্লুকোজ মান কত থাকা উচিত সে লক্ষ্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়। ইনসুলিন মাত্রা কত দিতে হবে তাও নির্ধারণ করা যায়, কতবার দিতে হবে তাও বলা যায়, পথ্য ও ব্যায়ামের ব্যাপারেও নির্দেশ দেয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোগীর সমস্যা ভেদে এবং সার্বিক চিকিৎসার পরিপ্রেক্ষিতে রক্তের গ্লুকোজের সেল্্ফ মনিটরিং হওয়া উচিত দিনে একবার থেকে চারবার। এই ফলাফল দেখে ব্যক্তিবিশেষের চাহিদা ভেদে চিকিৎসার লক্ষ্য ও ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |