
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২০ | |
আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে তাদের নানা উপহার দান করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর করুণা ও দান এত বিস্তৃত ও সীমাহীন যে, কারও পক্ষে সেসব উপহার ও নেয়ামতের হিসাব করা সম্ভব নয়। কিন্তু কোনো কোনো নেয়ামত এত মূল্যবান যা হাজার নেয়ামতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও ওইসব নেয়ামতের কথা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার অমূল্য নেয়ামতরাজির অন্যতম হচ্ছে ইলম বা বিদ্যা এবং বই বা পঠনসামগ্রী।
বই ও বিদ্যা শুধু মহাউপহারই নয়; বরং বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার ঐশী ও প্রথম উপহার, যা তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করার পর উপহার হিসেবে দান করেছিলেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করার আগে ফেরেশতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে তারা নেতিবাচক পরামর্শ দেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এর জবাবে বলেন, ‘আর স্মরণ করুন, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি জমিনে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি। তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফ্যাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।’ (সূরা বাকারা : ৩০)।
এরপর তিনি আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেন। তাকে সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম ইলম ও বিদ্যা শিক্ষা দেন এবং বিদ্যাকেই ফেরেশতাদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে সাব্যস্ত করেন। যেমন পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা বাকারা : ৩১)। মোটকথা, আল্লাহ তখন মানুষ সৃষ্টিতে দ্বিমতকারী ফেরেশতাদের সামনে কিছু বিষয় পেশ করেন, যার জবাব দিতে তারা ব্যর্থ হন এবং তখন আদম (আ.) কে সেগুলোর জবাব দিতে বলেন। যেসব বিষয়ে ফেরেশতারা নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করেন সেগুলো আদম (আ.) প্রকাশ করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। আল্লাহ তায়ালা এভাবে ফেরেশতাদের সামনে বিদ্যার মাহাত্ম্য প্রকাশ করেন এবং ইলম ও বিদ্যা গ্রহণকারী মানুষকে তাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। সুতরাং বোঝা গেল, নিষ্পাপ ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো ইলম ও বিদ্যাÑ আল্লাহ তায়ালা যা মানুষকে প্রথম উপহার হিসেবে দান করেছেন।
বিদ্যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শুধু আসমানি উপহারই নয়; বরং অসামান্য অনুগ্রহও বটে। তিনি কোরআনের বহু স্থানে বান্দার প্রতি তাঁর বিশেষ বিশেষ দান-অনুগ্রহের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। আর যে দান ও অনুগ্রহ সবিশেষ মূল্যবান সেটি হচ্ছে ইলম-জ্ঞান। এরশাদ হয়েছে ‘মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সূরা রহমান : ৩-৪)।
এসব আয়াতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, আল্লাহ তায়ালা বিদ্যাকে অবাধ ও অতলান্ত বানিয়েছেন। আদম (আ.) কে এমন অনেক বিষয়ের বিদ্যাও শিক্ষা দিয়েছেন, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, শুধুই বিদ্যাকে সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে শিক্ষা দিয়েছেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, পৃথিবীকে জানা, সৃষ্টির অপার রহস্য অনুধাবন করা, অনুসন্ধিৎসু ও মননশীল চিন্তা লালন করা প্রশংসনীয় গুণ। তাই জ্ঞানকে সংকুচিত না করে বিদ্যা ও জ্ঞানের সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে ব্যাপক হারে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
কেননা, আল্লাহর অপার বিস্ময় এই পৃথিবীর কত প্রকার জ্ঞান যে আহরণ করার আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। আর আজ তো জ্ঞানার্জনের নানা সহজলভ্য পন্থা আবিষ্কৃত হয়েছে। সুতরাং মূর্খতার অভিশাপ থেকে রক্ষা পেতে হলে জ্ঞানের উঠোন প্রশস্ত করতে ব্যাপাক হারে পাঠ করা প্রয়োজন। অন্যথায় প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে হবে। বস্তুত মূর্খতা হচ্ছে একটি অভিশাপের নাম, আত্মার মৃত্যু এবং জীবন ধ্বংস করার নাম। কোরআনে মূর্খতা থেকে বেঁচে থাকতে এবং এর নিন্দা জ্ঞাপন করে এরশাদ হয়েছেÑ ‘আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হও।’ (সূরা হুদ : ৪৬)।
শুধু তাই নয়; অন্য আয়াতে মূর্খতাকে মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যেমনÑ ‘যে ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মতো যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না?’ (সূরা আনআম : ১২২)।
আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী প্রকৃত বিদ্যাবিহীন পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ নিয়ে অহমিকা করার কোনো মূল্য নেই। আল্লাহর দৃষ্টিতে প্রকৃত মূল্য হলো জ্ঞান ও বিদ্যার্জনে। তাই বিদ্যাহীন বাহ্যিক সুখদর্শনে কারও বিভ্রান্ত ও বিচলিত হওয়া উচিত নয়। মূর্খ ব্যক্তিরা জীবজন্তুর মতো, যারা চারণভূমিতে পেটে যতদূর জায়গা হয় ততদূর খেয়ে থাকে।
অতএব মর্যাদা, গৌরব, অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্বের কিছু থাকলে তা জ্ঞানার্জনের মধ্যেই নিহিত এবং যারা বিদ্যা ও ইলম ধারণ করেছে তারা বাহ্যিক দৃষ্টিতে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল ও অসহায় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল, বিত্তবান এবং মর্যাদার অধিকারী। সুতরাং মূর্খতার অভিশাপ থেকে বাঁচতে এবং মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামেয়া উসমানিয়া
সাতাইশ, গাজীপুর
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |