
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২০ | |
দিন দিন দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে নতুন নতুন ঘরবাড়ি, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন ভবন তৈরিতে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। তাই কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার একই জমিতে বার বার বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে নজর বাড়িয়েছে। চলছে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ। এজন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিজ্ঞানীরা। ফলশ্রুতিতে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। তবে কমেছে ধানের দাম। ধানের উৎপাদন ব্যয় বেশি কিন্তু দাম কম থাকায় কৃষক দিন দিন ধানের আবাদ কমিয়ে অন্য আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। অন্য এসব আবাদের মধ্যে বিভিন্ন শাকসবজি, ভুট্টা, আলু, গম ও কলাসহ বিভিন্ন ফলের আবাদ উল্লেখযোগ্য। তবে এসবের মধ্যে গম অন্যতম। গম চাষে ব্যয়ের তুলনায় আয় কয়েকগুণ বেশি। অল্প ব্যয়ে, কম পরিশ্রমে, প্রায় বিনা সেচে স্বল্প জীবনীসম্পন্ন গমের আবাদে কৃষক লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন ধানের আবাদ ছেড়ে দিয়ে গম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০০ হেক্টর, কিন্তু অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকের আগ্রহ বেশি থাকায় অর্জন বেড়ে হয়েছে ১০৫ হেক্টর। নামমাত্র শ্রম ও অপেক্ষাকৃত কম খরচে উৎপাদিত গমের বাজারে দাম বেশি থাকায়, গম বর্তমানে কৃষকের কাছে হয়ে উঠছে অধিক জনপ্রিয় ফসল। চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জালালপুর এলাকার গম চাষি মো. জাফর আলী জানান, তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে গম চাষ করেছেন। এতে ২০ কেজি বীজগম বপন করেছেন। এ ৪০ শতাংশ জমি চাষ, সার, শ্রমিক ও দুইবার সেচসহ সবমিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৪ হাজার ২০০ টাকা। এতে গম উৎপাদন হবে অন্তত ১৪ থেকে ১৬ মণ। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী তার উৎপাদিত প্রতি মণ গমের বাজার মূল্য ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। তার দেওয়া হিসাব মতে, ৪০ শতাংশ জমি থেকে উৎপাদিত গমের বাজার দর ১৫ হাজার ৪০০ টাকা গম চাষে অধিক লাভবান
থেকে ১৯ হাজার ২০০ টাকা। তিনি আরও জানান, গমের আবাদ ঘরে তুলে, ওই জমিতে পাট চাষ করবেন। পাট থেকেও তার আয় হবে অন্তত ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। একই জমিতে পর পর দুটি লাভজনক আবাদ করতে হলে, ধান চাষ কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। তাই কৃষক ধানের আবাদ ছেড়ে, গম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
অতিরিক্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রোকসানা নাসরীন জানান, দেশে বিভিন্ন জাতের গম চাষ করা হলেও এ বছর বারি গম-২৫, বারি গম-২৬, বারি গম-২৭, বারি গম-৩০, বারি গম-৩১, বারি গম-৩২ জাতের গম বেশি আবাদ করেছেন কৃষক। এর মধ্যে কৃষক স্বপ্রণোদিত হয়ে বারি গম-২৬ ও বারি গম-২৭ বেশি চাষ করেছেন। এছাড়া উপজেলায় যেসব জাতের গম চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশ হলো বারি গম-৩০ ও বারি গম-৩১।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস জানান, চলতি বছর কৃষি প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ৩০০ কৃষককে ১ বিঘা করে জমিতে গম চাষের জন্য ২০ কেজি করে গমের বীজ, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ও সাইনবোর্ড সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব খাতসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি প্রদর্শনী প্লট কৃষকের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনী প্লটের গমগাছের চেহারা ও ফলনের ধরন দেখে তিনি আশা করছেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে। এ বছর গমের ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা খুশি। তিনি আরও বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে ৩ মেট্রেক টন থেকে ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন করে গম উৎপাদন হয়। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, নকলার মাটি গম চাষের জন্য উপযোগী। ধানের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় দাম কম থাকায় কৃষক দিন দিন ধানের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে ক্রমেই গমসহ অন্যান্য ফসেল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ধানের আবাদ ক্রমেই কমছে, পক্ষান্তরে বাড়ছে অন্য ফসলের আবাদ। আগামীতে গমের আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা ব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র দাস।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |