প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২০ | |
আর সভা না করে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, এখন আমি মনে করি যে, এ ধরনের সভা নয়, এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামব এবং এটা অর্জনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা চলুন সবাই ভূমিকা রাখি। তিনি আরও বলেন, সরকার পদত্যাগ না করলে টেনে নামাতে হবে। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর ও তার মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভায় ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হলে দুর্নীতির শিকার
হতে হয়, লুটপাটের শিকার হতে হয়, উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়। এগুলো থেকে মুক্ত হতে হলে দেশের মালিককে মালিক হিসেবে দাঁড়াতে হবে। সত্যিকার অর্থে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, পদত্যাগ না করলে কী করতে হবে? হাত ধরে টেনে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে দেশের মালিককে মালিকের ভূমিকায় আনতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, আমাদের আজকে নির্বাচনের নামে প্রহসন সহ্য করতে হচ্ছে। যারা নির্বাচিত না, তারা রাষ্ট্রক্ষমতাকে জোর দখল করে চালিয়ে যাচ্ছে। এটা জনগণ মেনে নেবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকার কেড়ে আনতে হবে।
গণফোরাম সভাপতি বলেন, জনগণকে বঞ্চিত করে স্বৈরতন্ত্রকে যারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি, যারা চেষ্টা করেছে, তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়েছিল। আজকে যারা স্বৈরশাসন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার, বাঙালি জাতি কোনো সময়ে স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি।
মানুষকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ?যাপন করা প্রহসন হবে জানিয়ে ড. কামাল বলেন, যারা প্রহসন করে এসেছে, এখন সময় এসেছে তাদের সহজ ভাষায় বলা সরে দাঁড়াও।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রতিবাদ সভায় খালেদা ও রাজবন্দি প্রসঙ্গে বলার জন্য কামাল হোসেনকে কয়েকবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে রাজবন্দি শুনতে কেমন লাগে। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সভা করতে হবে, দাবি করতে হবে এটা অকল্পনীয়। এ ছাড়া তিনি বলেন, এখন আর এই ধরনের সভা না। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামব।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব সরকার প্রধানের উদ্দেশে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করা না গেলে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলতে হবে।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেÑ এমন সমালোচনা প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, রাষ্ট্র চালাতে গেলে অনেক সময় ভুল হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের সঙ্গে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী দলকে মেলানো ঠিক হবে না বলে দাবি করেন। তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ওপর মামলা ও জেলে ভরে রাখার উদাহরণ টেনে বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে এমন আচরণ করেনি। মঈন খান ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে সরকার পতনের আহ্বান জানান।
সভায় বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী আন্দোলনে জনগণকে সংগঠিত করতে কামাল হোসেনকে পদযাত্রা শুরু করার পরামর্শ দেন।
খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়ার আগে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নিতে ঐক্যফ্রন্টকে প্রস্তাব দিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত না খালেদা জিয়াকে সরকার মুক্তি দেবে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই। আমি কিছুটা হলেও তাকে (খালেদা জিয়া) প্রভাবিত করেছিলাম প্রথমবারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। আজকে আমি বুঝতে পারছি, যেভাবে সরকার এ নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে তাতে অংশ নেওয়া ঠিক হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণ অর্থহীন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুটি প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, একটা হলো আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন সাহেব তার (খালেদা জিয়া) জন্য রিভিউ পিটিশন করুন। সরকারের মান রক্ষার জন্য না, সরকারকে সম্মানজনক এক্সিট দেওয়ার জন্য উনি রিভিউ পিটিশন করুন, তার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হোক।
সরকারকে এই নির্বাচনের নামে যে টাকার অপচয় হচ্ছে, তা বন্ধ করতে এই কমিশন বদলিয়ে কমিশনে এমন কর্মকর্তাকে দিতে হবে যার কোমরের জোর আছে, মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একত্রে আন্দোলনের চিন্তা আছে কি না, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন। সরকারের সমালোচনা করে মান্না বলেন, অর্থনীতি ধসে সরকারের কাছে টাকা নেই। এখন বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা জমা নিচ্ছে। তিনি সরকার পতনের জন্য জোরাল আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। বিএনপিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। এই সরকার থেকে মুক্তি চাইলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের সঞ্চালনায় এ প্রতিবাদ সভায় বিএনপির গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, জেএসডির শাহ আকম আনিসুর রহমান খান, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল, গণ দলের গোলাম মাওলা চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |