
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২০ | |
-সব ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং
-নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিন
- চীনা নাগরিকদের আসতে মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে
- আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান
করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ২৫টি ফ্লাইটে গড়ে সাড়ে ১২ হাজার যাত্রী বাংলাদেশে আসছেন। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এত দিন চায়না ইস্টার্ন, চায়না সাউদার্ন, ড্রাগন এয়ার ও ইউএস-বাংলায় চীন থেকে আসা মাত্র চারটি ফ্লাইটের চীনফেরত ৭০০ যাত্রীর যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মনিটর করত স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এখন থেকে আগত সব যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চীন থেকে আসা চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে আসতে হলে ভিসা নেওয়ার পাশাপাশি মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে। এছাড়া অন অ্যারাইভাল ভিসায় কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এরই মধ্যে দেশের সব নৌ, স্থল বন্দর, বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে।
শুধু চীন থেকে আসা ফ্লাইট নয়, বিদেশ থেকে আসা সব ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। শনিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির সভাকক্ষে আয়োজিত করোনা ভাইরাস (২০১৯-এনসিওভি) নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের কার্যক্রম শুধু চীন থেকে আসা ফ্লাইটে সীমাবদ্ধ রাখিনি। যেহেতু অন্য দেশেও এটা দেখা দিয়েছে, তাই দেশে আসার পর সব বিমানের যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় নিয়ে এসেছি। বৃহস্পতিবার সব এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী শুক্রবার থেকে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি।
আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মিরজাদি বলেন, অত্যন্ত জোরালোভাবে বলতে চাই, এটা নিয়ে ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। আসলে চীন এবং অন্যকিছু দেশের যাত্রীদের স্ক্রিনিং করলেই যথেষ্ট। তবে আমরা সতর্কতার জন্য এটি করছি। বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা হবে, এ কার্যক্রম কতদিন অব্যাহত রাখব।
বাংলাদেশের সব বন্দরে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা নিচ্ছি। ফ্লাইটের মধ্যে যে ডিক্লারেশন ফর্ম দেওয়া হয় তাতে এয়ারলাইন্সগুলো সহায়তা করে। আমরা সম্মিলিতভাবেই কাজ করছি। এখানে এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা খুবই জরুরি। যেসব বন্দরে থার্মাল করোনা ঠেকাতে
স্ক্যানার নেই, সেখানে আমরা হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েছি। থার্মাল স্ক্যানার এবং হাত দিয়ে যেটা করা হয়Ñ দুটোর কাজ একই।
দেশে করোনা ভাইরাস নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, এখন পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী নেই। কোয়ারেন্টাইনে হজ ক্যাম্পে ছিলেন ৩১২ জন। এখন হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন ৩০১ জন। গেল ২৪ ঘণ্টায় তাদের মধ্যে রোগের কোনো ধরনের লক্ষণ ছিল না। তারা ভালো আছেন। এছাড়া সিএমএইচে আছেন এক শিশুসহ ১১ জন। তারাও কেউ রোগী নন। বাচ্চা থাকার কারণে সেখানে রাখা হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় শুক্রবার পর্যন্ত চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৮ হাজার ৪৮৪ জন যাত্রী। গেল ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর’র হটলাইনে কল এসেছে ১৩৯টি। এর মধ্যে করোনা সংক্রান্ত ছিল ১০৭টি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, চীন থেকে আসা চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে আসতে হলে ভিসা নেওয়ার পাশাপাশি মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এছাড়া অন অ্যারাইভাল ভিসায় কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। স্বল্প সময়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিটস আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া দেশে এখনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। হাসপাতাল চিকিৎসক নার্স প্রস্তুত। করোনা ভাইরাস দেখা দিলেও ছড়িয়ে যাওয়া রোধে সব প্র্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্য খাতে পূর্ণ সজাগ রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের সব নৌ, স্থলবন্দর, বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে। অধিক সতর্কতার জন্য চীনের উহান থেকে বাংলাদেশে আসা চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্পে। ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষায় পর্যটকরা বন্ধ করে দিয়েছেন বিদেশ ভ্রমণ। বিশেষ করে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। আগের বছরের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকের ভ্রমণ কমে গেছে ৭০ শতাংশেরও মতো। আর পর্যটকদের ট্যুর বুকিং না থাকার প্রভাব পড়েছে এয়ার টিকিটিং ব্যবসায়ও।
ট্যুর অপারেটররা বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে অনেকেই দেশের বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন না। অনেকেই আগে কেটে রাখা টিকিট বাতিল করছেন। যারা আগেভাগে প্রমোশনাল অফারে নন-রিফান্ডেবল (অফেরতযোগ্য) টিকিট কেটে রেখেছিলেন, এখন শুধু তারাই বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন। এ সংখ্যাটাও খুবই কম। ব্যবসায়িক বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় যাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) ডিরেক্টর (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স) মো. শাহেদ উল্লাহ্ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বলতে পারি, আউট বাউন্ড ট্যুরিস্টের (বিদেশগামী পর্যটক) সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমেছে। তবে বিদেশ থেকে যারা বাংলাদেশ দেখতে আসেন, ওইসব ইন বাউন্ড ট্যুরিস্টের সংখ্যা কমেনি, আগের মতোই আছে। বর্তমানে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াগামীদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যাদের আগে ভিসা নেওয়া ছিল, তাদের কেউ কেউ এখনও বিশেষ কারণে চীন যাচ্ছেন।
চীনের করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্পেও। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে সিএনএন বলেছে, ২০১৯ সালে প্রায় ৫ কোটি চীনা পর্যটক হংকং গিয়েছেন। ২ কোটি ৭৫ লাখ ম্যাকাও এবং থাইল্যান্ডে গিয়েছেন ১ কোটি ১ লাখ পর্যটক। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে ওই অঞ্চল বা দেশগুলোর এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবং চীনা নাগরিকদের সহজে ভিসা না দেওয়ার কারণে সেখানকার পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চীনসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাকি ২৭টি দেশ ও অঞ্চল হলো অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভিয়েতনাম।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কার্যক্রম জানালেন রাষ্ট্রদূত : চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস কী করেছে, তা ভিডিওবার্তা ও ই-মেইলের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান। ওই বার্তায় তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত সফলভাবে লোকাল কো-অর্ডিনেশন শেষ করেছি। যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি। ২২টি সেন্টারে লোকাল কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা, ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ করা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়াÑ এসব ছিল চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা এ বিষয়ে চীন ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছি। এটি একটি যৌথ পরামর্শমূলক প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় প্রক্রিয়া।
মাহবুব উজ জামান বলেন, উহান সিটি থেকে ৩১২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দূতাবাস সফলভাবে কাজ করছে। বাকিদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কখন শুরু হতে পারে তা পরিস্থিতির বাস্তবতার ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের কল্যাণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই দূতাবাস কাজ করছে বলে জানান তিনি।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |