
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২০ | |
তীরে এসে এবার আর তরী ডোবায়নি বাংলাদেশ। স্নায়ুচাপ জয় করে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা প্রথমবারের মতো ঘরে তুলেছেন যুবারা। রোমাঞ্চকর ফাইনালে তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও অভিষেক দাসের আগুনঝরা বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে আলো ছড়ান পারভেজ হোসেন ইমন ও অধিনায়ক আকবর আলী। একদিকে উইকেট পড়তে থাকলেও অন্য প্রান্তে আকবর ঠান্ডামাথায় খেলে মাঠ ছাড়েন দলকে জিতিয়ে। ম্যাচ শেষে তিনি সংক্ষেপে জানালেন এ সাফল্যের পেছনের পথটার গল্প। যুব বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের দুই দিন আগে মারা যান যুব দলের অধিনায়ক আকবর আলীর বড় বোন। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট হওয়ায় বোনের ভীষণ আদরের ছিলেন আকবর। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে খেলতে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক এ খারাপ খবরটা দেওয়া হয়নি তাকে। পরে জানতে পেরে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু শক্ত মানসিকতার আকবর ব্যক্তিগত শোক ভুলে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ।
পাকিস্তান ম্যাচ পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপ দলে ছিলেন পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। চোটে পড়ে এরপর তিনি ফিরে আসেন দেশে। বাংলাদেশের এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোমবার জানান, বোনের মৃত্যু-পরবর্তী আকবরের অবস্থা, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের দুই দিন আগে ওনার আপু মারা গেছেন। কিন্তু আকবর ভাইয়ের পরিবার তখনও তাকে বিষয়টি জানায়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বাসা থেকে ফোন আসে। আমরা সবাই অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম। তখন শোকাবহ একটা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছিল।’
আকবর ভাই শক্ত মনের মানুষ। তিনি দুই দিন নিজের রুমেই বন্দি ছিলেন। কারও সঙ্গে কথা খুব একটা বলতেন না। পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছেন। সবাইকে বলেছেন, বিশ্বকাপে মন দিতে।’ দলের ট্রেনার মুজাদ্দেদ সানি জানান, ওই ঘটনার শোক কাটিয়ে আকবরই একাত্ম করেছেন সবাইকে, ‘ওর পরিবার আমাদের জানালেও ওকে জানাতে নিষেধ করেছিল। আকবর যখন জানতে পারল, খুব অভিমান করেছিল। ও খুব চাপা স্বভাবের। এরপরও কেঁদেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে সবাইকে ম্যাচে ফোকাস রাখতে বলেছে। সত্যিই ভিন্ন গ্রহের মানুষ আকবর।’
আগের দিন যুব বিশ্বকাপ ফাইনালে রান তাড়ায় চরম বিপদে ছিল বাংলাদেশ। ৭৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে ঠান্ডামাথায় সেই কঠিন পরিস্থিতি পার করে দলকে ম্যাচ জেতান আকবর। তাতে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্ব আসরের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে বাংলাদেশ। এ ইনিংসের পর আকবরের পরিণত মানসিকতা প্রশংসা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলনেতা আকবর জানান, দুই বছর ধরে বিশ্বজয়ের জন্য নিজেদের তারা প্রস্তুত করেছেন এবং সেই পরিশ্রমের ফল মিলেছে, ‘পুরোটাই আমাদের দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফল। কোচদের কীভাবে যথেষ্ট ধন্যবাদ জানাব, তা জানি না। যখন আমরা এ অভিযান শুরু করেছিলাম, আমরা ফাইনাল খেলতে চেয়েছিলাম এবং শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম এবং আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এ মুহূর্তে আমি আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি খুবই খুশি।’
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত এশিয়া কাপ, ত্রিদেশীয় ও দ্বিপক্ষীয় লড়াই মিলিয়ে মোট ৭টি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ যুব দল। সেখানে আকবরদের নৈপুণ্য ছিল নজরকাড়া। শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও দারুণ সফলতা পান তারা। সব মিলিয়ে ৩৬ ম্যাচ খেলে জেতেন ২১টিতে, হার মাত্র আট ম্যাচে। টাই হয় একটি ম্যাচ। এছাড়া পরিত্যক্ত ও বাতিল হয় তিনটি করে ম্যাচ। গেল বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠার পর শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপেও ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। দুইবারই অবশ্য হারতে হয়েছিল ভারতের কাছে। সেই আক্ষেপ আর হতাশা কড়ায়গণ্ডায় মিটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এবার শিরোপা উৎসব করেছেন আকবররা।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |