logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২০
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা
অর্থনীতি
মাহবুবা আহসান

বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে অধিকতর সুসংহত করে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আর্থিক বাজারের শক্তিশালী অবকাঠামো উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের সক্ষমতার উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সুবিধা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্টিং প্রজেক্ট-এফএসএসপি’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে

বর্তমান সরকারের দক্ষ ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবস্থান স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অর্থনীতির সার্বিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কিছুটা সহনীয় মাত্রায় এনে এক অঙ্কের বাজারভিত্তিক সুদহার স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকার অগ্রসরমান অর্থনীতিকে আরও বেগবান করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে অধিকতর সুসংহত করে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আর্থিক বাজারের শক্তিশালী অবকাঠামো উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের সক্ষমতার উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সুবিধা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্টিং প্রজেক্ট-এফএসএসপি’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ২৭৫১.০০ কোটি টাকা (৩৫০.০০ মিলিয়ন মা. ড.), যার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়ন ৩৯৩.০০ কোটি টাকা (৫০.০০ বিলিয়ন মা. ড.) এবং প্রকল্প সাহায্য ২৩৫৮.০০ কোটি টাকা (৩০০.০০ মিলিয়ন মা. ড.)। প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদকাল ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত। দেশের উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সমস্যা দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণসহ এ প্রকল্পের আওতায় নানাবিধ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আর্থিক বাজারের অবকাঠামো শক্তিশালীকরণের লক্ষ্য হলো পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক পরিশোধ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ। ঋণ তথ্য ব্যুরোর সরবরাহকৃত তথ্যের মান বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্রঋণ তথ্য অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে ঋণ তথ্য ব্যুরোর আওতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাঠামো শক্তিশালীকরণ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশের আর্থিক সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে উন্নততর আর্থিক বাজারের জন্য স্থিতিশীল এবং নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিতকরণ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং, আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং নীতি ও পরিধি, ব্যাংকিং তথ্যাবলি, তথ্যপ্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি বিশেষায়িত ক্ষেত্রে সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রবিধি ও তত্ত্বাবধান সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রুডেন্সিয়াল রেগুলেশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতি-পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানসহ ব্যাসেল-৩ কাঠামো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতিমূলক নানাবিধ উদ্যোগ, ব্যাংকিং খাতে দক্ষতার সঙ্গে ঝুঁকি মোকাবিলার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলিত তত্ত্বাবধান পদ্ধতির পরিবর্তে ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান পদ্ধতি প্রবর্তন এবং এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড কার্যকরভাবে সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে গৃহীত উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে প্রাপ্ত উপযোগিতা ও সুফলগুলোর বিশ্লেষণপূর্বক দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণে ভবিষ্যতে করণীয় কর্মপন্থা নির্ধারণপূর্বক প্রকল্পের আওতায় একটি বিশদ কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সে মোতাবেক আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচির পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ চাহিদা মেটানো হচ্ছে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমেয়াদি অর্থায়ন দিয়ে, যা ব্যাংক এবং বিনিয়োগকারী উভয়ের জন্যই লাভজনক। উৎপাদনশীল খাতে প্রযুক্তি এবং উৎপাদনগত উৎকর্ষতা সাধন এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সামাজিক ও পরিবেশগত মান চর্চার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের চাহিদা রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে উৎপাদনশীল খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সুবিধা প্রদান অংশগ্রহণকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চধৎঃরপরঢ়ধঃরহম ঋরহধহপরধষ ওহংঃরঃঁঃরড়হং (চঋও) মাধ্যমে নির্ধারিত মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদনশীল খাতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করা হবে। এরই মধ্যে ৩১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পিএফআই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ব্যাংক ব্যবসায়ে নতুন নতুন পণ্যের প্রচলন এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে আবির্ভূত নতুন নতুন ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিগত ঝুঁকি মোকাবিলার্থে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ঈযরভব ঋরহধহপরধষ ঙভভরপবৎ (ঈঋঙ) এবং প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা ঈযরভব ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঞবপযহড়ষড়মু ঙভভরপবৎ (ঈওঞঙ)-এর যোগ্যতা ও উপযুক্ততার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় সম্পর্কিত যাবতীয় মামলা দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির স্বার্থে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে আইনটি সংশোধিত হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (অউজ) মাধ্যমে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার বিষয়ে এর আগে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। অউজ-এর মাধ্যমে মামলা আরও দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ/নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি  আইন, ১৯৯১ ও ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন, ২০১৫-এর ভিত্তিতে এবং ব্যাসেল কমিটির মূল নীতি নম্বর ২৭-এর আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি খসড়া গাইডলাইন্স (এঁরফবষরহবং ড়হ ঊীঃবৎহধষ অঁফরঃ ড়ভ ইধহশং) প্রণয়ন করা হয়েছে, যা চূড়ান্তকরণের কাজ বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রেমিট্যান্স আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান তথা জনবল রপ্তানি এবং তাদের প্রেরিত অর্থ দেশে ক্রমবর্ধমান কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকার সমস্যা দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং চ্যানেলে দ্রুত অর্থ প্রেরণ এবং সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকের ড্রয়িং ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করার লক্ষ্যে ঊষবপঃৎড়হরপ ঋঁহফ ঞৎধহংভবৎ (ঊঋঞ) পদ্ধতিতে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনের ক্ষেত্রে রক্ষিতব্য ব্যাংক গ্যারান্টি/ক্যাশ ডিপোজিট ডলার ২৫ হাজারের স্থলে মার্কিন ডলার ১০ হাজার এবং প্রতিষ্ঠানের এনআরটি হিসাবে ন্যূনতম স্থিতি ০.৫ মিলিয়ন টাকার স্থলে ০.২ মিলিয়ন টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসীদের প্রেরিত আয় বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বন্ডের বিপরীতে প্রবাসীদের ঋণ প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব মালিকানায় বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস প্রতিষ্ঠার অনুমোদন প্রদান করা হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ২৯টি নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস বিভিন্ন দেশে (ইউকে, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, গ্রিস, ইতালি, কানাডা, ওমান ও মালদ্বীপ) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অতি সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় দেশীয় একটি ব্যাংকের মালিকানায় এক্সচেঞ্জ হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 
ব্যাংক শাখার পাশাপাশি ২৬টি গরপৎড় ঋরহধহপব ওহংঃরঃঁঃরড়হং (গঋওং)-এর শাখা অফিস বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের শাখা অফিসগুলোকে রেমিট্যান্স বিতরণের মাধ্যমে হিসাব ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত তাদের শাখাগুলোর মাধ্যমে প্রেরিত রেমিট্যান্স বিতরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ড্রয়িং ব্যবস্থার আওতায় প্রাপ্ত প্রবাসী রেমিট্যান্সের অর্থ বেনিফিসিয়ারি পর্যায়ে বিতরণের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৭২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ২ (দুই) কার্যদিবসে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার অন্তর্মুখী প্রবাহ বৃদ্ধি তথা অধিক রেমিট্যান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনিবাসী প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের  জন্য সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে গুরুতপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা এবং তাদের বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশি বা এদেশীয় উপকারভোগী কর্তৃক রেমিট্যান্স-বিষয়ক কোনো অভিযোগ থাকলে তা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানোর জন্য ‘ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট’ স্থাপন করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান তথা শ্রমিক রপ্তানিতে আর্থিক সহায়তা দান ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগ সুবিধা সম্প্রসারণসহ প্রবাসীদের কল্যাণার্থে ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’ বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করছে।
দেশে একটি জনস্বার্থমুখী আধুনিক পেমেন্ট সিস্টেমস প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমসের কৌশল এবং এর আইন ও প্রবিধিগত অবকাঠামো প্রণয়ন করেছে। এ আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক  অটোমেশন ক্লিয়ারিং  হাউস স্থাপন, এর সামগ্রিক কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস যথাযথ পরিবীক্ষণ (ঙাবৎংরমযঃ), ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচের উন্নয়ন, ই-পেমেন্ট সিস্টেমস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ এবং ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার (ঊঋঞ) কার্যক্রম চালু করছে। এ দ্বারা বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রবাহ ত্বরান্বিতকরণ এবং জবধষ ঞরসব এৎড়ংং ঝবঃঃষবসবহঃ (জঞএঝ) বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। অষঃবৎহধঃরাব চধুসবহঃ ঈযধহহবষং হিসেবে ব্যাংকিং খাতে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২৯টি ব্যাংককে মোবাইল প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রদানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে একটি ব্যাংক কোম্পানির সাবসিডিয়ারিসহ ১৬টি ব্যাংক বর্তমানে এ সেবাটি দিচ্ছে। উল্লেখ্য, ৩৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন গড়ে ০.৯৩ বিলিয়ন টাকার লেনদেন করে থাকে এবং ই-কমার্সের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ০.০৫ বিলিয়ন টাকা অভ্যন্তরীণ লেনদেন ও ০.০২ বিলিয়ন টাকা বৈদেশিক রেমিট্যান্সের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ হয়।
মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪১টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা এপিজির (অচএ) প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান ও সরকারের অঙ্গীকার বিবেচনায় ২০১৮-২০ মেয়াদে বাংলাদেশ এপিজির (অচএ) কো-চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনে বিএফআইইউ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত সর্বমোট ৬৮টি দেশের এফআইইউর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। যার মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২টি দেশের এফআইইউর সঙ্গে সমোঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে নিউজিল্যান্ড, তানজানিয়া, নামিবিয়া, কিউবা, মালদ্বীপ, তিমুর, লেসেথে, লাওস, পালাও, বার্মুডা, মন্টিনিগ্রো, কুক আইল্যান্ড ও আইল অব ম্যান। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ জারি করেছে। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে তথ্য গোপনীয়তা সংরক্ষণে সব তফসিলি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে। মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদারের লক্ষ্যে বিএফআইইউ বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমনÑ এপিজি, এগমন্ড গ্রুপ, এফএটিএফ ও বিমসটেকের মতো সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রেখেছে।
উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে নির্বাচিত ও প্রশিক্ষিত কিংবা স্বপ্রশিক্ষিত নতুন উদ্যোগ গ্রহণে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন সহজলভ্য করে আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে নতুন উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল’ নামে ১.০০ বিলিয়ন টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়। ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত এ তহবিল থেকে মোট ৩৬৭টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠনকে ০.২০ বিলিয়ন টাকা পুনঃঅর্থায়ন প্রদান করা হয়েছে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (গজঅ) ভূমিকা অনস্বীকার্য। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি ও নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (গজঅ) কর্তৃক ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮১৭টি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী  (গজঅ) প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের পাশাপাশি বিশেষ অবদান রয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিমা খাতের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা বিবেচনায় বিমা করপোরেশন আইনকে সময়োপযোগী করে ‘বিমা করপোরেশন আইন, ২০১৯’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। লাইফ ও নন-লাইফ মিলে ৭৮টি বিমা কোম্পানিকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি তাদের সেবা বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সবশেষে বলতে চাই, সেই দিন আর বেশি দূরে নেই। দৃঢ় অঙ্গীকার আর মনোবলের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত দেশে নিজেদের অধিষ্ঠিত করা সম্ভব। সেখানেই হবে জয়ের স্বার্থকতা। ইনশাআল্লাহ। হ

ষ মাহবুবা আহসান
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]