logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২০
বাবরি মসজিদ
বরাদ্দকৃত জমি অযোধ্যা থেকে দূরে হওয়ায় মুসলিম সংগঠনের ক্ষোভ

“তবে গেল ৯ নভম্বেরের রায়ে তারা বলেছিল, 
অধিগ্রহণ করা ৬৭ একরের ভেতরে না হলেও 
অযোধ্যারই কোনো ‘প্রমিনেন্ট প্লেস’ বা উল্লেখযোগ্য 
স্থানে মসজিদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করতে হবে।” 
‘কিন্তু যে জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে, সেটা 
অযোধ্যায়ও নয়, প্রমিনেন্টও নয়!’

ভারতের অযোধ্যায় ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নতুন মসজিদ তৈরির জন্য সরকার জমি বরাদ্দ করার পর দেশের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। 
গেল বছর ৯ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্ট তাদের রায়ে অযোধ্যার কোনো উল্লেখযোগ্য স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলেছিলেন। তবে উত্তরপ্রদেশ সরকার এজন্য যে জায়গাটি বেছে নিয়েছে তা অযোধ্যা শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরে, লক্ষেèৗ-ফৈজাবাদ মহাসড়কের ধারে একটি গ্রামেÑ যা অনেক মুসলিম নেতারই মনঃপূত নয়।
উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, যারা বাবরি মসজিদ-রামমন্দির মামলায় অন্যতম পক্ষ ছিল, তারা অবশ্য এ জমির ব্যাপারে তাদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি। অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বুধবার একটি ট্রাস্ট গঠনের কথা পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন, তার ঠিক পরপরই উত্তরপ্রদেশ সরকারও জানিয়ে দেয় মসজিদ নির্মাণের জন্য তারাও জায়গা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। মাস তিনেক আগে সুপ্রিমকোর্টের রায়েই এ দুটি পদক্ষেপ কার্যকর করতে বলা হয়েছিল।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের মুখপাত্র ও ক্যাবিনেট মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মা জানান, তাদের শর্টলিস্ট করা তিনটি জায়গার মধ্য থেকে কেন্দ্র একটিকে মসজিদের জন্য বেছে নিয়েছে। তিনি জানান, ‘এ জায়গাটি অযোধ্যা জেলার ধন্নিপুর গ্রামে, লক্ষেèৗ হাইওয়ের ওপর এবং রৌনাহি থানার ঠিক পেছনে অবস্থিত। এই বরাদ্দকৃত জমিটি জেলা সদর দপ্তর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে।’
‘যাতায়াতের সুবিধা, এলাকার সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য, প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলার দৃষ্টিতে এ জায়গাটি সবদিক থেকেই উপযুক্ত’ বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু জায়গার ঘোষণা হতেই বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন বলতে থাকে, মূল অযোধ্যা থেকে এত দূরে মসজিদের জন্য জমি দিয়ে কী লাভ? আর সেটা কীভাবেই বা বাবরি মসজিদের বিকল্প হতে পারে?
বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা ও আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানি মন্তব্য করেন, মসজিদের জন্য এ জমি কিছুতেই গ্রহণ করা উচিত হবে না। জিলানির কথায়, ‘প্রথম কথা হলো মসজিদ ভাঙার বিনিময়ে কোনো জমি আমরা নিতেই পারি না, এটা ওয়াকফ আইন আর শরিয়তÑ দুয়েরই বিরোধী।’ ‘তবে রিভিউ পিটিশনে আমাদের এ বক্তব্য সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন।’
“তবে গেল ৯ নভম্বেরের রায়ে তারা বলেছিল, অধিগ্রহণ করা ৬৭ একরের ভেতরে না হলেও অযোধ্যারই কোনো ‘প্রমিনেন্ট প্লেস’ বা উল্লেখযোগ্য স্থানে মসজিদের জন্য জায়গা বরাদ্দ করতে হবে।” ‘কিন্তু যে জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে, সেটা অযোধ্যায়ও নয়, প্রমিনেন্টও নয়!’
ভারতে মুসলিমদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কামাল ফারুকিও বলেছেন, ‘এমনকি তাজমহল চত্বরের ভেতরে জমি দিলেও তা নেওয়া ঠিক হবে না।’
বোর্ডের নেতা মৌলানা ইয়াসিন ওসমানি কিংবা হায়দরাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও এ জমি নেওয়ার বিপক্ষেই মত দিয়েছেন। তবে অযোধ্যায় রামমন্দিরের করসেবায় অংশ নেওয়া বিজেপির মুসলিম সমর্থক বাবলু খান মনে করছেন, ধান্নিপুর গ্রামের জায়গা নিয়ে অসুবিধার কিছু নেই।
বাবলু খানের কথায়, ‘আমরা আগাগোড়াই বলে আসছি এমন জায়গায় জমি দরকার, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি থাকবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা যাবে। সেদিক থেকে ধান্নিপুর ঠিকই আছে, কারণ এখানে প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম। তবে আমরা এটাও দাবি করব, যেভাবে রামমন্দিরের জন্য ট্রাস্ট তৈরি করা হয়েছে, তেমনি মসজিদ বানাতেও একটি ট্রাস্ট করে দেওয়া হোক।’
অযোধ্যাকে ঘিরে হিন্দুদের যে চৌদ্দ ক্রোশ পরিক্রমার তীর্থপথ আছে, হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর দাবি ছিল মসজিদের জমি তার বাইরে হতে হবে। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার সে দাবি মেনে নিয়েছে বলেই এখন দেখা যাচ্ছে। তবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর ফারুকি এ জমির ব্যাপারে তাদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেননি।
ধারণা করা হচ্ছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াকফ বোর্ডের বৈঠকেই তারা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। 

হ সূত্র : বিবিসি বাংলা

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]