প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২০ | |
খুলনা ওয়াসার ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’র আওতায় নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে’ প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করা হচ্ছে। খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় রূপসা উপজেলার সামন্তসেনায় ৪৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এ প্লান্টটি। ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ৩৩ কিলোমিটার দূরে মোল্লাহাটের মধুমতি নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত পানি এনে পরিশোধন করে ৩টি ক্লিয়ার ওয়াটার পাম্পের মাধ্যমে মেইন ট্রান্সমিশন লাইন হয়ে রূপসা নদীর তলদেশ দিয়ে খুলনা শহরে প্রবেশ করছে। যার সুফল পাচ্ছেন নগরীর ১২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বর্তমান ৯টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পরবর্তী সময়ে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ৩০ হাজার গ্রাহক এ পানি পাবেন। চলতি মাসের মধ্যেই পুরো নগরী পানি সরবরাহের আওতায় আসবে বলে আশা করছেন ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
খুলনা ওয়াসার প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদন মেলে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাইকা এবং সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে মোল্লাহাট মধুমতি নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে অপরিশোধিত পানি রূপসার সামন্তসেনায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পরিশোধন করা হচ্ছে। প্রথমে এ প্লান্টে পানি প্রবেশের পর তা ফ্লকুলেশন চেম্বারে কেমিক্যালের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হালকা ময়লা দূরীভূত হয়। দ্বিতীয় ধাপে সেডিমেন্টেশন ট্যাংকে যাওয়ার পর ভারি ময়লা নিচের দিকে তলানি হিসেবে জমা হয়। পরবর্তী ধাপে ফিল্টারের মাধ্যমে পানি সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত হয়। পরিশোধনের জন্য কেমিক্যাল হিসেবে পলি অ্যালুমিনিয়াম কেলারাইড এবং জীবাণুমুক্ত করার জন্য কেলারিন ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাশেই একটি আধুনিক ওয়াটার টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। ওই ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিন পানির মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ৩টি ক্লিয়ার ওয়াটার পাম্পের মাধ্যমে পরিশোধিত এ পানি মেইন ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে রূপসা নদীর তলদেশ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে পাইপ লাইন স্থাপন করে শহরের ৭টি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার ও ১০টি ওভার হেড ট্যাংকে আনা হচ্ছে। স্থানগুলো হচ্ছে নগরীর চরেরহাট, লবণচরা, নতুন বাজার, ছোট বয়রা, রায়ের মহল, বয়রা হাউজিং এবং দেয়ানা। বাকি ৩টি ওভারহেড ট্যাংক হচ্ছে নগরীর বানিয়াখামার, মিরেরডাঙ্গা ও দৌলতপুরের পাবলা। এসব ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার ও ওভার হেড ট্যাংকে পানি সরবরাহে ৩০০ মিমি. থেকে ১ হাজার ২০০ মিমি. ব্যাসের ৩৩ কিমি. ডাকটাইল আয়রন পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ‘ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাসের প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। খুলনা ওয়াসার ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী এমডি কামাল উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, নগরীর ১২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এখন মধুমতি নদীর পানি পাচ্ছেন। বর্তমানে ৯টি ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ১ থেকে ৭ এবং ১৩ থেকে ১৫নং ওয়ার্ডেও পাইপ লাইন স্থাপন সম্পন্ন করা হয়েছে। মিটার স্থাপনের জন্য গ্রাহকদের নোটিশও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহকদের সাড়া কম থাকায় উল্লিখিত ওয়ার্ডগুলোতে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে, চলতি মাসের মধ্যেই কেসিসির ৩১টি ওয়ার্ডেই ওয়াসার পানি সরবরাহ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচলক মো. আবদুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন, খুলনা শহরের সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। এ সংকট নিরসনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যার আওতায় রূপসার সামন্তসেনায় বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মিত হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানির চাপ পর্যাপ্ত থাকায় ২/৩ তলায় ট্যাংকিতে উঠানোর জন্য গ্রাহকের বিদ্যুৎ খরচের প্রয়োজন হচ্ছে না। সব সময়ই পানি পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নতমানের বিতরণ পাইপ স্থাপন করে পানির অপচয়ও কমানো সম্ভব হচ্ছে।
উল্লেখ্য, খুলনা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এর আগে খুলনা সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত ছিল। খুলনাবাসী দীর্ঘদিন ধরে নগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কেসিসি থেকে পৃথক করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেছে। খুলনাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে খুলনা ওয়াসা স্বতন্ত্রভাবে যাত্রা শুরু করে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |