logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২০
শিরোপার আনন্দ ঘরে ঘরে
স্পোর্টস রিপোর্টার

পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ যুবাদের বিশ্বজয়ের মুহূর্তে ধারাভাষ্যে ছিলেন ইয়ান বিশপ। তখনই তিনি নিশ্চিত করে বলে দিয়েছিলেনÑ ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে মানুষের ঢল নামবে এ জয়ের পর। বিশপের কথা ফলেছে। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। রাত পোহানোর পর লোকজনের আগ্রহ বেড়েছে পত্রপত্রিকার শিরোনামের দিকে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে একটু অন্যভাবে অভিনন্দিত করলেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। ক্যারিবীয় কিংবদন্তি যুব বিশ্বকাপ জেতায় আকবর আলী-পারভেজ হোসেন-রকিবুল হাসানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকা অনেক সাফল্যের একটি। বাংলাদেশের এ সাফল্য গোটা দুনিয়ার জন্যই অনুপ্রেরণার হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যানের। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ! আশা করছি, এ সাফল্য গোটা দুনিয়ার জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে। আর এটা ভবিষ্যতের অনাগত সাফল্যের একটি।’

রিচার্ডস সান্ত¦না দিয়েছেন ভারতীয় দলকেও। তিনি ভারতকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘প্রিয় ভারত, এখন পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলেছ তোমরা। মাথা উঁচু করেই রেখ।’ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোয় অনুমিতভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে যুবাদের বিশ্বজয়ের গল্প। প্রায় সব জাতীয় পত্রিকার শিরোনামও ওই গল্প ঘিরেই। শিরোনামে লিখেছে, ‘উনিশের হাত ধরে বিশে বিশ্বজয়’। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ১৮ বছর বয়স কবিতার ছায়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অদম্য বিজয়ের গল্প ফুটিয়ে তুলেছে তারা। প্রায় সব পত্রিকাই ভারত-বাংলাদেশ ফাইনালে বারবার বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গের গল্পগুলো তুলে এনেছে। ভারতকে হারিয়ে ফাইনাল শিরোপার আনন্দ ঘরে ঘরে

জয় উদযাপনের মাত্রাও বাড়িয়েছে বলে লিখেছে বেশ কয়েকটি পত্রিকা। এরই মধ্যে বিশ্ববাসী জেনে গেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের নাম। সেই সঙ্গে ক্রিকেটবিশ্ব দেখল ভারতের খেলোয়াড়দের অখেলোয়াড়ি মনোভাব। ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলাতে গেলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মারতে তেড়ে আসেন ভারতের ক্রিকেটাররা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয় করায় ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম টাইগার যুবাদের আনন্দ-উদযাপন এবং হাতাহাতির বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে নিয়ে লিড নিউজ করেছে। ভারতের আনন্দবাজার তাদের শিরোনাম করেছেÑ প্রায় হাতাহাতিতে শেষ হলো দ্বৈরথ। ইন্ডিয়া টুডে বাংলাদেশের জয়ের চেয়েও ঝগড়ার বিষয়টিকেই হাইলাইটস করেছে। তাদের শিরোনাম, ফাইনাল শেষে হাতাহাতির জন্য বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের দুষেছেন ভারত অধিনায়ক। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয় কিংবা ফাইনালে ভারতের হার নিয়ে এই প্রথম অভাবনীয় এক সাফল্য নিয়ে এসেছে যুব ক্রিকেট দল। সেমিতে এ জয়ের পরই মূলত ক্রিকেটপ্রেমীরা জেগে ওঠেন, খোঁজ নিতে শুরু করেন যুবাদের নিয়ে। ফাইনালের দিন তো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াÑ গোটা বাংলাদেশ একাত্ম ক্রিকেট আবেগে। টিএসসিতে বড় পর্দা, মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে ঝড় কিংবা টিভির শোরুমগুলোর সামনে রাস্তাভর্তি দর্শক; সেই ২০১৫-১৬ সালের জাতীয় ক্রিকেট দলের সোনালি সময়ের স্মৃতিকেই যেন ফিরিয়ে আনছিল। আর পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল ম্যাচটি ঘাম ছুটিয়েছে অনেক দর্শকেরই। স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষায় যখন আকবর-রাকিবুল উত্তীর্ণ, গোটা বাংলাদেশ তখন ক্রিকেট পতাকার নিচে একত্রিত। বিশ্ব শিরোপার গৌরবে গভীর রাতেও আলোকিত বাংলাদেশ।
শিরোপার স্বাদে কে না খুশি হয়। তবে টাইগার ফ্যান আর বোদ্ধারা বলছেন, শিরোপার কথা বাদ দিয়েই এ জয়ের মাহাত্ম্যটা অন্যরকম। বয়সে তরুণ হলেও এ যুবারা বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকেই যেভাবে কথা বলছেন, তাতে পরিচয় দিয়েছেন ক্রিকেটীয় পরিপক্বতার। কেউ কেউ ‘ছোট মুখে’ এমন কথা শুনে ইচড়েপাকা ভাবতে পারেন, তবে মাঠে তারা প্রমাণ দিয়েছেন, বয়সের তুলনায় তাদের খেলোয়াড়সুলভ ভাবনাগুলো একটু বেশিই পরিণত। স্নায়ুচাপের লড়াইয়ে যেভাবে তারা এ টুর্নামেন্টজুড়ে সাফল্য দেখিয়েছেন, এমন পরিণতবোধ ‘বড়’রাও দেখাতে পারেননি বলেই মত বিশ্লেষকদের। ছোটদের ক্রিকেটীয় দক্ষতা আর জ্ঞানের পাশাপাশি তা প্রয়োগের যে সাফল্য, তাতে এটুকু বলাই যায়Ñ জাতীয় দলে ক্রিকেটারদের জন্য পাইপলাইনটা নেহাত কম শক্তিশালী নয়। শরীফুলের মতো পেসার, রকিবুলের মতো স্পিনার যেমন আছে এ লাইনে, তেমনি আছে পারভেজ হোসেন ইমনের মতো ওপেনার কিংবা তৌহিদ হৃদয় বা মাহমুদুল হাসান জয়ের মতো মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানও। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোÑ আকবর আলীর মতো একজন অধিনায়কও এ দলকে পথ দেখিয়েছেন, যিনি একই সঙ্গে মিডলঅর্ডারের নির্ভরতা, আবার উইকেটের পেছনে অতন্দ্রপ্রহরী। আমাদের মুশফিকুর রহিমকে পেরিয়ে কেউ কেউ তো তাকে ভারতের বিশ্বজয়ী ‘ক্যাপ্টেন কুল’ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গেও তুলনা করতে শুরু করেছেন।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]