logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২০
দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক সংকটে
করোনা ভাইরাসে থমকে আছে কাঁকড়া-কুঁচে রপ্তানি
ইয়ামিন আলী, বাগেরহাট

চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবন সন্নিহিত পাঁচটি জেলার হাজারো কাকড়া খামারি কাঁকড়া রপ্তানি করতে না পেরে থমকে আছে। বাগেরহাট জেলার উৎপাদিত প্রায় ৩ হাজার টন শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হতো চীনে। করোনা ভাইরাসের কারণে ২৩ জানুয়ারি থেকে চীনে বাগেরহাট জেলাসহ বাংলাদেশের  শিলা কাঁকড়া  ও কুঁচে রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। একদিকে প্রধান আমদানিকারক দেশ চীনে শিলা কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ও শীতকালের শেষে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৫ পিপিটির নিচে নেমে যাওয়ায় খামারে উৎপাদিত কাঁকড়া মরতে শুরু করেছে। কেজিপ্রতি ৩ হাজার টাকার শিলা কাঁকড়া বর্তমানে ৬ থেকে ৮ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ টাকার কুঁচে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় নেমেছে। এ অবস্থায় কাঁকড়া খামারি ও কুঁচে ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক সংকটে  পড়েছেন। মৎস্য বিভাগের হিসাবে গেল অর্থবছরে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত পাঁচটি জেলা ছাড়াও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৭৮৭ টন রপ্তানিপণ্য কাঁকড়া ও কুঁচে উৎপাদিত হয়েছিল। এরমধ্যে চীনে রপ্তানির ৭০ ভাগ কাঁকড়াই বাগেরহাট জেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে।  এরমধ্যে গেল অর্থবছরে ১১ হাজার ৪৩৫ টন কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করে দেশ আয় করে ২১৭. ৫৩ কোটি টাকা। বাগেরহাট সদরের সব থেকে বেশি কাঁকড়া রপ্তানিকারক সাধন সাহা বলেন, তার খামারে এখন প্রায় ৩০ টন রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়া মজুদ রয়েছে। তার খামারে ২২ জন কর্মচারীর বেতন দিতে পারছেন না তিনি। আর এই কাঁকড়ার ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, তারা একেকজন এক থেকে দুই হেক্টর জমির খামারে রপ্তানিপণ্য শিলা কাঁকড়া চাষ করে এবার বিপাকে পড়েছেন। চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ২৩ জানুয়ারি থেকে চীন শিলা কাঁকড়া আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। খামারগুলোতে কাঁকড়া পূর্ণ বয়স্ক হলেও একদিকে চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ ও শীতকালের শেষে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৫ পিপিটির নিচে নেমে যাওয়ায় খামারে উৎপাদিত কাঁকড়া মরতে শুরু করেছে। ১৯ ও ২০ জানুয়ারিতে বড় সাইজের এক কেজি শিলা কাঁকড়া তারা ৩ হাজার টাকায় ডিপো মালিকদের কাছে বিক্রি করলেও এখন তা বর্তমানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিলা কাঁকড়া উৎপাদন ভালো হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব খামারিদের মতো হাজার-হাজার কাঁকড়া চাষি চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে কাঁকড়া চাষ করা চাষিরা সর্বশান্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। রামপালের কাঁকড়া ডিপো মালিক আ. রাজ্জাক জানান, বাগেরহাট জেলার চাষিদের খামারগুলোতে উৎপাদিত শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। করোনা ভাইরাসের কারণে ২৩ জানুয়ারি থেকে চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় কাঁকড়া বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। চীনে রপ্তানি বন্ধের আগে ৩ হাজার টাকায় প্রতি কেজি কেনা কাঁকড়া নিয়ে এখন আমরা উৎকণ্ঠায় রয়েছি। খামার থেকে তোলার পর কাঁকড়া ২৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কমে যাওয়ায় একদিকে চাষিদের খামারে যেমন পূর্ণ বয়স্ক কাঁকড়া মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে আগে কেনা শিলা কাঁকড়া এখন আমাদের ডিপোতেই মারা যাচ্ছে। এ অবস্থায় খামারিদের পাশাপাশি আমরা ডিপো মালিকরাও চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। এখন বড় সাইজের কাঁকড়ার দাম কেজিপ্রতি ৬০০ থেতে ৮০০ টাকায় নেমে এলেও আর ক্ষতির আশঙ্কায় কোনো ডিপো মালিক আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে সে দামেও কাঁকড়া কিনছে না। চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানিকারক ও বাগেরহাট শহর রক্ষা বাঁধ এলাকার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সাধন কুমার সাহা জানান, বাগেরহাট জেলার চাষিদের খামারগুলোতে উৎপাদিত শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। আর দেশের মোট কাঁকড়া রপ্তানির ৩০ ভাগই হয়ে থাকে বাগেরহাট জেলা থেকে। আমি সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি করেছি। করোনা ভাইরাসের কারণে এখন চীন আর কাঁকড়া আমদানি করছে না। চীনের আমদানিকাররা আমাদের জানিয়েছে সেখানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা আর কাঁকড়া আমদানি করবে না। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানির ভরা মৌসুম। এ ভরা মৌসুমে চীন শিলা কাঁকড়া আমদানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাগেরহাটসহ সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকার কাঁকড়া চাষিদের পাশাপাশি আমরা রপ্তানিকারকরাও চরম আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছি। আগে কেনা শিলা কাঁকড়া এখন আমাদের ডিপোতেই মারা যাচ্ছে। চীনে করোনা ভাইরাসের থাবা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও পড়েছে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, বাগেরহাটের সাতটি উপজেলায় প্রায় দেড় হ্জাার হেক্টর জমিতে চাষিদের ৩ হাজার ৭৭৮টি খামারে সনাতন ও অধুনিক বক্স পদ্ধতিতে শিলা কাঁকড়া ও কুঁচে চাষ হয়েছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় বাগেরহাট জেলায় প্রতিবছর শিলা কাঁকড়া ও কুঁচে চাষের জমি ও খামারের সংখ্যা বাড়ছে। গেল অর্থবছরে বাগেরহাটের খামারিরা ২ হাজার ৬২৯ টন শিলা কাঁকড়া উৎপাদন করে। এবছর উৎপাদন ভালো হয়েছিল। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানির ভরা মৌসুম। এ সময়ে খামারগুলোতে পূর্ণ বয়স্ক পেটে ঘিলু ভরা শিলা কাঁকড়া পাওয়া যায়। এই জেলায় উৎপাদিত শিলা কাঁকড়ার ৭০ শতাংশই রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। আর দেশের মোট কাঁকড়া রপ্তানির ৩০ শতাংশই হয়ে থাকে বাগেরহাট জেলা থেকে। করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় খামারিদের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমাতে জেলা মৎস্য বিভাগ সরেজমিন চাষিদের খামারগুলো পরিদর্শন করে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৫ পিপিটির উপরে রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে পূর্ণ বয়স্ক কাঁকড়া মারা না যায়। 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]