
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২০ | |
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান মোটিভেশনার বক্তার একটি ছবি সম্প্রতি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। বইমেলায় তিনি একটি দৈনিক পত্রিকা বিছিয়ে স্টলে নামাজ পড়ছেন। এ দৃশ্য অবশ্যই ভালো লাগার। একজন মুসলিম শত ব্যস্ততায়ও দিনে পাঁচবার আল্লাহর সামনে নামাজে দাঁড়ান। মালিকের সামনে বান্দার বিগলিত নামাজের দৃশ্যমাত্রই মোমিনের ভালো লাগার বিষয়। আল্লাহর নবী (সা.) নামাজকে তাঁর নিজের জন্য প্রশান্তিদায়ক এবং চোখের শীতলতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফলত বিনা সংশয়েই এ দৃশ্য আমাদের যে কারোর অন্তরেই ভালো লাগার সৃষ্টি করে। কিন্তু সে ভালোলাগা গরিব কিংবা ধনী, সেলেব্রেটি কিংবা অখ্যাত অজ্ঞাতজনের মধ্যে যেন কোনো ফারাক তৈরি না করে। আমাদের হৃদয় যদি সেলেব্রেটির নামাজ আর মুচি বা মেথরের নামাজের মধ্যে কোনো তফাত গড়ে, তবে সে হৃদয় আক্রান্ত।
আহা! মহান ওই স্রষ্টা তো তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে কোনো দূরতম বৈষম্যও করেন না। প্রশংসা ও পবিত্রতা শুধু তাঁরই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শারীরিক গড়ন (সুঠাম বা দুর্বল, স্থূল না খর্বকায়, কালো না ফরসা) দেখেন না। দেখেন না তোমাদের পরিচ্ছেদও (কম দর, বেশি দর, সুন্দর, অসুন্দর, মলিন বা মসলিন কিছুই দেখেন না)। শুধু দেখেন তোমাদের হৃদয় ও কর্ম।’ (মুসলিম)।
আমাদের কাছে সফলতার মানদ-টা আসলে কি? কে সফল! ক্রিকেটের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, পর্দা কাঁপানো অভিনয়, বিশাল প্রাচুর্য, দুনিয়াজোড়া খ্যাতি কি প্রকৃতই সফলতা? অথচ আল্লাহ তো বলছেন, ‘সফল তো সে, যে তার অন্তরকে নির্মল করল। আর ব্যর্থ তো সেই ব্যক্তি, যে তার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করল না।’ (সূরা শামস : ৯-১০)।
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে বিশুদ্ধ করার তৌফিক দিন। মিছে এই চাকচিক্যের প্রতি আমাদের এই লালসাকে দূর করুন। কল্যাণের ওপর রাখুন। বস্তুত আমরা একটা সর্বময় প্রদর্শনপ্রিয়তার ব্যাধিতে আক্রান্ত। আমাদের কারও কাছ থেকে দ্বীনের কথা শুনতে হলেও আজকাল তার ভালো পেশা, উত্তম পরিচ্ছেদ, দুনিয়াবি সফলতা বিবেচনায় নিতে হয়। ভালো ইউনিভার্সিটির, বড় ডিগ্রির ট্যাগ থাকতে হয়। কণ্ঠ মনোহর হতে হয়। আফসোস! আমাদের সময়ে যদি বাজার থেকে উচ্ছিষ্ট ফল কুড়িয়ে এনে খাওয়া ইমাম নববি (রহ.) থাকতেন আমরা বহুজন হয়তো তাকে প্রত্যাখ্যান করতাম।
আমাদের সময়ে যদি একটা মোটা চটের মতো কাপড়ে, খালি পায়ে হেঁটে চলা বিশরে হাফি (রহ.) থাকতেন তবে হয়তো আমাদের প্রদর্শন আকাক্সক্ষা তার থেকে আমাদের অধিকাংশকেই দূরে রাখত। যদি বাঁধাকপির পাতা খেয়ে ঈদের দিনটিও অতিবাহিত করা ইমাম দাউদ জাহেরি (রহ.) আমাদের সামনে আসতেন আমরা অনেকেই তার থেকে দূরে সরে যেতাম।
খোদা জানেন, আমাদের কী অবস্থা হতো যদি আমরা সেই সোনালি দিনের দারিদ্র্যকে দেখতাম। ক্রমাগত অনাহার, অর্ধাহারে কাটানো সেই মদিনার দিনরাতগুলোকে! আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) এর পরিবার তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে তিন দিন পরিতৃপ্তির সঙ্গে আহার করেননি।’ (মুসলিম)। আরেক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমি সুফফার সত্তরজন সাহাবিকে দেখেছি। যাদের কারোর পরিধেয় কোনো চাদর ছিল না।’ কোনোক্রমে বহু কোশেশ করে তারা সতর ঢাকতেন। আমরা কি দরিদ্রতার ভয়ে ইসলাম থেকে পলায়ন করতাম? রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.) কে বলতেন, ‘আয়েশা গরিবদের ভালোবাসো।’ আর এই ভালোবাসা, এই শ্রদ্ধা হবে অখ্যাত, প্রান্তিক সব মানুষের জন্য।
বাবার বয়সী রিকশাওয়ালাকে তুমি করে ডাকা, চা-ওয়ালা ছেলেটাকে ধমকানো, অধীনদের সঙ্গে মন্দ আচরণ এসব কিছুর জন্যই আমাদের জবাব দিতে হবে একদিন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |