
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২০ | |
বাংলাদেশে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বাড়ির বাসিন্দাদের কাছে আরও যে খবরটি আসে তা হলো বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর খবর। কখনও কখনও এ খবর আসে নতুন অর্থবছরের শুরুতে। রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য এটি খুবই সাধারণ চিত্র। প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় ভাড়া বাড়ির বাসিন্দাদের। আর সেটি আয় বাড়লেও বাড়বে, আর না বাড়লেও বাড়বে।
ঢাকার কাঁঠালবাগান এলাকায় থাকেন নাদিরা জাহান। ১০৮০ বর্গফুটের দুই বেডরুমের একটি বাসায় স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে ভাড়া থাকেন তিনি। নাদিরা জানান, ৯ বছরের বিবাহিত জীবনে এটি তার তৃতীয় বাসা। প্রতিবারই আগের ভাড়াটিয়ার তুলনায় বেশি ভাড়া দিয়ে উঠেছেন তিনি। সঙ্গে অগ্রিমবাবদ দিয়েছেন দুই মাসের বাড়ি ভাড়া। এজন্য পাননি কোনো রশিদও। নাদিরা জাহান জানান, প্রতি বছরই কিছুটা বাড়তি ভাড়া দিতে হয় তাকে। তিনি বলেন, প্রথম যে বাসায় ছিলাম সেটিতে ছয় বছর ছিলাম। এ সময় কোনো ধরনের রং করা বা ড্যাম ওয়াল ঠিক করে দেওয়ার কথা সেটাও দেয়নি। উল্টো এ সময় আমি ৩ হাজার টাকা করে বাড়তি ভাড়া দিয়েছি। তাদের একটাই যুক্তি ছিল যে, এটা তো সব সময়ই হয়, তিনি বলেন।
বাড়ি ভাড়া নিয়ে কথা হয়, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মাফতুহা মিলির সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ভাড়া বাড়িতে থাকেন তিনি। আর সম্প্রতি বিয়ের পরও ভাড়া বাড়িতেই উঠেছেন। বাড়তি ভাড়ার কারণে দুই বছরে তিনবার বাসা বদলেছেন তিনি। ভাড়া বাড়লেও বাসার কোনো ধরনের উন্নতি করেন না বাড়িওয়ালা। ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি। নতুন বছর মানেই ৫০০ টাকা বা ১০০০ টাকা ভাড়া বাড়বে, এটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভাড়া হিসেবে বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে আমি যে একটু বাড়তি সুবিধা পাব সেটাও না। দিন শেষ আমরা ভাড়াটিয়ারা জিম্মি। অনেক সময় এমন আচরণ করে যে থাকলে থাকেন, না থাকলে নাই, বলেন তিনি।
অথচ বাড়ি ভাড়া বিষয়ক ১৯৯১ সালের যে আইনটি আছে সেখানে উল্লেখ রয়েছে, এক মাসের বাড়ি ভাড়ার পরিমাণের চেয়ে বেশি অর্থ অগ্রিম হিসেবে নেওয়া যাবে না। যে কোনো ভাড়ার বিনিময়ে রশিদ দেওয়ার নিয়ম এবং বাড়ির উন্নয়ন না করে বাড়ি ভাড়া না বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে এতে। রাজাবাজার এলাকার বাড়িওয়ালা শিহাব আহমাদ। তিনি বলেন, বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে। দ্রব্যমূল্য বলতে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নয়, বাড়ি সারানোর সরঞ্জাম রয়েছে। এগুলোরও দাম বাড়ে। আর বাংলাদেশে তো একবার কিছুর দাম বাড়লে আর কমে না। অনেক সময় বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে বিল যুক্ত থাকলে বিল বাড়লে বাড়ি ভাড়াও বাড়ানো হয়, তিনি বলেন। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব এর হিসাব বলছে, ২৫ বছরে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৪০০ গুণ আর দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ২০০ গুণ। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া দ্রব্যমূল্যের তুলনায়ও দ্বিগুণ বেড়েছে। ১৯৯০ সালে পাকা ভবনে দুই কক্ষের একটি বাসার ভাড়া ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকার কিছু বেশি। ২০১৬ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩০০ টাকার বেশিতে।
২০০৭ সালে সিটি করপোরেশন বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণবিষয়ক একটি নির্দেশনা দেয়। তবে সেটিও কার্যকরে তেমন তোড়জোড় নেই। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান বলছেন, বেশরিভাগ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা ভোটার হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয় না সিটি করপোরেশন। তিনি বলেন, বাড়ির যারা মালিক তাদের পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স বা রাজনৈতিক প্রভাব ভাড়াটিয়াদের চেয়ে বেশি। কারণ তারা স্থায়ী বাসিন্দা এবং তারা ভোটার। আর তাই তাদের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কথা ভোট প্রার্থীদের জন্য বলার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
এদিকে, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে যে নিয়ম-কানুন রয়েছে তা এখন সময় উপযোগী নয় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, ওই আইনে ভাড়া নির্ধারণের যে পদ্ধতি বলা হয়েছে, সেভাবে ভাড়া নির্ধারণ করলে এখন যে বাড়ির ভাড়া ৩০ হাজার টাকা সেটার ভাড়া আসবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আদালতে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিরোধ মেটাতে ভাড়াটিয়ারা আদালতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে ঘোরা, আইনজীবীকে ফি দেওয়াÑ এসব বিষয় এড়াতে চান বলে আদালতে যেতে চায় না। মোর্শেদ বলেন, আইন কার্যকর হওয়ার পর এ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ৫ শতাংশ মানুষও আদালতে যাননি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট কাটাতে হলে ভাড়াটিয়াদের ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন হওয়া দরকার। এছাড়া সরকারেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।-বিবিসি বাংলা
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |