logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০
টেকসই জৈব প্লাস্টিক উৎপাদনের নবায়নযোগ্য উৎসগুলো
অভিমত
মনির হোসেন

জীবনের সর্বস্তরে জৈব প্লাস্টিকের ব্যবহার, সহজলভ্যতা এবং শক্তি সাশ্রয়কারী সম্ভাবনা যেমন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে এনেছে তেমনি অর্থনীতি তথা সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি টেকসই জৈব প্লাস্টিক উৎপাদনের নবায়নযোগ্য উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে

আমরা নতুনত্বকে সহজেই আলিঙ্গন করতে জানি আর নতুনত্বের মতোই বর্তমান সময়োপযোগী এক ধরনের শক্তি হলো নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি এমন শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং  শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমনÑ সৌর শক্তি, হাইড্রো, জিয়োথারমাল, ওয়েভ এবং টাইডাল এনার্জি , বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি (বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস, বায়োফুয়েল), ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। সভ্যতার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এত দিন ব্যবহার করে আসা জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে নবায়নযোগ্য শক্তি বর্তমানে বিশ্বে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অধিকাংশ দেশ তাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের মধ্যে সৌরশক্তি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এবং বায়োগ্যাস ও বায়োমাসের রয়েছে সীমিত ব্যবহার। বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে ৪.৫ কিলোওয়াট আওয়ার/বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। নবায়নযোগ্য শক্তিগুলো পরিবেশবান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণ মুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থায় পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী আন্দোলনগুলো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ অব্যহত রেখেছে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটে প্রথম সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পরবর্তী সময়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) কর্তৃক সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৬ সালে এসএইচএস চালু হওয়ার পর থেকে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইডকলের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহীত সমন্বিত কর্মসূচির কারণে এর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির অধিকাংশ ব্যয় হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে, মোটরযান চলাচলে এবং বাসা-বাড়ির তাপ-উৎপাদনে। বর্তমানে বাংলাদেশেনবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা ২০২০ সালে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে নেবে।
এজন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, টেকসই যানবাহন ব্যবস্থা এবং গ্রিন টেকনোলজি সমৃদ্ধ শক্তি সাশ্রয়ী গৃহস্থালি পণ্য প্রবর্তনে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রচলিত বিদ্যুৎ সরবরাহবিহীন জায়গাগুলোতে জনসাধারণ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। রান্নার জন্য বায়োমাস এবং শস্য এবং কাপড় শুকানোর জন্য সৌরশক্তি এবং বায়ু ব্যবহার একটি ঐতিহ্যবাহী উপায় যাতে হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণির নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা নিচে দেওয়া হলো : পানি বিদ্যুৎ, সোলার পিভি ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, বাতাসের গতি, গোবর এবং পোলট্রি বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস, ধানের তুস এবং ইক্ষুর ছোবড়া, বর্জ্য, শিল্প প্রক্রিয়ার অব্যবহৃত তাপ থেকে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি উৎপাদন, পৌর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ। সোলার হোম সিস্টেম একটি বিশাল এবং বিশ্বস্ত সিস্টেম এবং এর সফলতার জন্য অনন্য গ্রামীণ ক্রেডিট এবং ‘কস্ট বাই ডাউন’ সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামীণ বাড়িগুলো এর আওতায় এসেছে। সোলার হোম সিস্টেমের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সরকারি কয়েকটি কর্মসূচি যেমনÑ সৌর সেচ, সৌর মিনি/মাইক্রো গ্রিড, সোলার পার্ক, সোলার রুফটপ, সোলার বোটিং ইত্যাদি শুরু করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম লক্ষ্য হলো গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ডিজেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যার ফলে কমবে কার্বন নিঃসরণ এবং সরকারি ভর্তুকি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এবং বিনিয়োগকারীদের সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করছে। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমনÑ বাংলাদেশ ব্যাংক, ইডকল এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু নবায়নযোগ্য জ্বালানি পণ্য যেমনÑ সোলার প্যানেল, সোলার প্যানেল প্রস্তুতের উপাদান, চার্জ কন্ট্রোলার, ইনভার্টার, এলইডি লাইট, সৌরচালিত বাতি এবং বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর সরকার শুল্ক অব্যাহতিমূলক প্রণোদনা প্রদান করেছে। গত কয়েক বছরে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ধরন এবং তাদের ক্রমবর্ধমান খরচ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারকে তীব্রতর করেছে, যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার অন্যতম উপায়।
প্লাস্টিক ব্যাগ, পলিব্যাগ বা থলি এমন এক ধরনের পাত্র যা পাতলা, নমনীয়, প্লাস্টিকের ফিল্ম, নন ওভেন ফেব্রিক বা প্লাস্টিকের টেক্সটাইল দিয়ে তৈরি। প্লাস্টিকের ব্যাগ সাধারণত খাদ্য, উৎপাদন, গুঁড়ো, বরফ, ম্যাগাজিন, রাসায়নিক এবং বর্জ্য হিসেবে পণ্য ধারণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।  বিশ্বখ্যাত জুতা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এডিডাস সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে জুতা উৎপাদন করে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে।  বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিকল্প নেই, কারণ প্লাস্টিকের খেলনা সহজে ভাঙে না এবং কম দামেই ছোটখাট খেলনা পাওয়া যায়। দামে সস্তা ও রঙিন প্লাস্টিকের খেলনা গ্রাম বা শহর দুই জায়াগার বাচ্চাদের কাছেই সমান জনপ্রিয়। উন্নতমানের প্লাস্টিক দিয়ে খেলনা তৈরি করতে পারলে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। অন্য অনেক বস্তু যে সুবিধা দিতে পারে না, একসঙ্গে বহুমুখী কর্মক্ষমতাসম্পন্ন প্লাস্টিক সে সুবিধা প্রদান করে বলেই ডিজাইনার ও ইঞ্জিনিয়ারদের এত পছন্দের প্লাস্টিক। আধুনিক ভবন এবং নির্মাণগুলোতে কাঠের পরিবর্তে প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, মেঝে এবং প্রাচীরের আচ্ছাদনগুলো ব্যবহার করে বৃক্ষ সংরক্ষনে অবদান রাখছে। জল সংরক্ষণ, সেচ দক্ষতা, ফসল এবং পরিবেশ সুরক্ষা, পাশাপাশি পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থা, সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্লাস্টিকের উপকরণ এবং পণ্যগুলো স্থাপন করা হয় এই প্লাস্টিকালচারে। দেশীয়ভাবে টেকসই কৃষিকাজের অভ্যাসের অভ্যন্তরে মেইনফ্রেম পদ্ধতিতে প্লাস্টিকালচার ভালোভাবে সমন্বয় করা যেতে পারে। এর কার্যকর প্রয়োগের ফলস্বরূপ কৃষির জিডিপিতে ৪ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি হতে পারে। কোনো পণ্য বা উপাদানকে সত্যিই টেকসই হিসেবে বর্ণনা করার জন্য এটি পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে টেকসই হতে হবে। এই দিকগুলো হলো স্থায়িত্বের তিনটি স্তম্ভ। স্থায়িত্বের তিনটি স্তম্ভ জৈব প্লাস্টিক ইতিবাচক অবদান রাখছে। 
জীবনের সর্বস্তরে জৈব প্লাস্টিকের ব্যবহার, সহজলভ্যতা এবং শক্তি সাশ্রয়কারী সম্ভাবনা যেমন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বয়ে এনেছে তেমনি অর্থনীতি তথা সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি টেকসই জৈব প্লাস্টিক উৎপাদনের নবায়নযোগ্য উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে। হ
 
মনির হোসেন
শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]