
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০ | |
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ মন্দ/অসৎ কাজ দেখলে, তা যেন সে নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। যদি তেমন শক্তি-সামর্থ্য না থাকে, তাহলে সে যেন তার মুখ দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তাও না পারে তাহলে সে যেন তার অন্তর দিয়ে তা প্রতিরোধ/প্রত্যাখ্যান/ঘৃণা করে। আর এটি হচ্ছে নিম্নতম ঈমানের স্তর’ (মুসলিম শরিফ)।
অন্তর দ্বারা অসৎকাজ প্রতিরোধ মানে হচ্ছে, অন্তরে এমন প্রতিজ্ঞা থাকা যে, এ মুহূর্তে যদিও অন্যায় কাজটি প্রতিরোধ করতে পারছি না; তবে ভবিষ্যতে যখনই তেমন সুযোগ পাব তা প্রতিরোধ করব। কেবল ‘মনে মনে অপকর্মটিকে ঘৃণা করা’Ñহাদিসটির এমন তরজমা সঠিক নয়। তার কারণ, (যদি হাত দিয়েও মিটানোর ক্ষমতা না রাখে, তাহলে অন্তর দিয়ে মিটিয়ে দেবে) হাদিসটির মূল মতনের দিকে লক্ষ করলে, বোঝা যাবে ‘হাত দ্বারা প্রতিরোধ/মিটানো... মুখ দ্বারা প্রতিরোধ... অন্তর দ্বারা প্রতিরোধ/মিটানো (অন্তর দিয়ে মিটায় বা শেষ করে দেয় বা প্রতিহত করে) Ñএর মূল ভাব ও ব্যাখ্যা ‘ঘৃণা’ শব্দে আদায় হয় না। মন দিয়ে ঘৃণা করা তো সহজ ব্যাপার।
এতদসংক্রান্ত অপরাপর কঠোর বাণী ও আজাব-গজব সংবলিত যেসব হাদিস বিদ্যমান তার নিরিখে, কেবল মনে মনে ঘৃণা দ্বারাই দায়িত্বমুক্তি ও শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। সুতরাং শরিয়তের আলোকে কেবল সৎকাজে আদেশের আংশিক দায়িত্ব পালন করে এবং অসৎ-অন্যায় কাজে শুধু ঘৃণা করে ইসলামের পরিপূর্ণ ‘দাঈ’ ও ‘মুবাল্লিগ’ হওয়া যাবে না। এটি মনে রাখতে হবে যে, ‘নাহী আনিল মুনকার’ তথা অসৎকাজে নিষেধও অন্যতম একটি ফরজ আমল, দায়িত্ব।’ (আহসান : খ-৯, পৃ-৯৯)।
তাফসির ও ফাতওয়া গ্রন্থে বলা হয়েছে, শক্তি-সামর্থ্য মানে দৈহিক সামর্থ্য নয়, উদ্দেশ্য হচ্ছে যাকে অসৎ কাজে নিষেধ করা হবে, তার পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা থাকা এবং সে কোনো ক্ষতি করবে না বলে প্রবল ধারণা হওয়াÑ তাহলে, ‘অসৎকাজে নিষেধ’ এর ‘তাবলীগ’ করাও ওয়াজিব বলে গণ্য হবে। যদি তেমন প্রত্যাশা না থাকে এবং হিতে বিপরীতের সম্ভাবনা দেখা দেয়; তাহলে ওয়াজিব নয়। (প্রাগুক্ত : পৃ-৫১২)।
হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘বনি-ইসরাঈল জাতির অধঃপতন বা ধ্বংসের সূচনা হয়েছিল এভাবে যে, তারা যখন একে-অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো তখন মন্দ কাজ দেখে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় করো এবং যা করছ তা ছেড়ে দাও; তা তোমার জন্য বৈধ নয়। তারপর আবার পরের দিন তার সঙ্গে তার অপকর্মরত অবস্থায় মিশত এবং তাকে নিষেধ করত না; অথচ একই সঙ্গে পানাহার, উঠাবসা করতে থাকত। একপর্যায়ে তাদের ভালো-মন্দ অন্তর পরস্পর সমান হয়ে গেল...। এরপর নবীজি (সা.) শপথ করে জোর তাকিদসহ বললেন, অবশ্য অবশ্য তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজে নিষেধ করবে এবং অবশ্যই তোমরা জালেমকে প্রতিহত করবে এবং তাকে সত্য ও ন্যায়ের ওপর উঠতে বাধ্য করবে।’ (আবু দাঊদ, তিরমিজি)। অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ অব্যাহত না রাখায় একসময় তারা ধ্বংস হয়ে গেল।
হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো সম্প্রদায় বা জাতির মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন পাপ কাজ করতে থাকে। আর ওই জাতির লোকজনের লোকটিকে প্রতিরোধ-প্রতিহত করার সামর্থ্য থাকে, অথচ তার পরও তাকে প্রতিহত করে না (নিষেধ করে না, বাধা দেয় না, পাপকর্ম বন্ধ করতে সচেষ্ট হয় না) তাহলে মৃত্যুর আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের ওপর আল্লাহ্র আজাব নাজিল হবে!’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজা)।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী (সা.) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন আমি তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম, একটা কিছু ঘটেছে! তিনি ওজু করলেন, কারও সঙ্গে কথা বললেন না। আমি হুজরা ঘেঁষে কান পেতে রইলাম, তিনি কী বলেন তা শোনার জন্য। তিনি মিম্বরে আরোহণ করে বসলেন, তারপর আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং এরশাদ করলেন, ‘হে লোকেরা! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বলছেন, ‘তোমরা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করতে থাকো, ওই পরিস্থিতির আগে যে, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব না; তোমরা আমার কাছে চাইবে, আমি তোমাদের চাহিদা পূর্ণ করব না; এবং তোমরা আমার কাছে (শত্রুর বিরুদ্ধে) সাহায্য চাইবে, আমি তোমাদের সাহায্য করব না। এর চেয়ে বেশি কিছু না বলে, নবীজি (সা.) মিম্বর থেকে নেমে গেলেন।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মত যখন দুনিয়াকে বড় করে দেখবে, তাদের অন্তর থেকে ইসলামের প্রভাব ও বড়ত্ব তুলে নেওয়া হবে। তারা যখন সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ছেড়ে দেবে, তখন ওহির বরকত থেকে তাদের বঞ্চিত করে দেওয়া হবে। আর আমার উম্মত যখন পরস্পর গাল-মন্দে জড়িয়ে পড়বে, আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি থেকে দূরে ছিটকে পড়বে।’ (হাকিম, তিরমিজি)।
লেখক : মুফতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |