logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০
রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষে ভাগ্য সুপ্রসন্ন
খান রফিক, বরিশাল

ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মহিবুল্লাহ। বাবা বরিশাল নগরীর প্রসিদ্ধ পুস্তক ব্যবসায়ী। বিএ পাস করার পর মহিবুল্লাহও ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। নিজে পৃথক ব্যবসা করলেও ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন হচ্ছিল না। একের পর এক লোকসানে মনোবল অনেকটা ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে হতাশায় ভোগা যুবক মহিবুল্লাহ ইউটিউবে খুঁজে পান বর্তমান সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ পদ্ধতি ‘রি-সার্কুলেশন অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (রাস)।’ সহায়ক হিসেবে পেলেন পূর্ব পরিচিত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক মৎস্য গবেষককে। তার পরামর্শ ও নিজ উদ্যোগে রাস পদ্ধতিতে মাছের খামার করে মহিবুল্লাহর এখন মাসিক গড় আয় লাখ টাকা। খামারটি স্থাপনের বছরের মধ্যে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ বরিশাল বিভাগে প্রথম বলে জানিয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন।

বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলার পূর্ব তীরে পাঁচ ইউনিয়নের একটি হচ্ছে চাঁনপুরা। একদিকে খরস্রোতা কীর্তনখোলা, আরেক দিকে উত্তাল কালাবদর নদীর মাঝে ইউনিয়নটির অবস্থান। গাছপালায় সবুজে ঘেরা ইউনিয়নটির দুর্গাপুর গ্রামে ৭৩ শতাংশ জমিতে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষের খামার ‘এমএম অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’ করেছেন মহিবুল্লাহ। এখানে দেশি জাতের কই, শিং ও তেলাপিয়া চাষ করা হয়। এর পাশাপাশি সেখানে গরু, ভেড়া, কবুতর, হাঁস-মুরগি লালনপালন করেন। 

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ছয়টি পাকা হাউজ স্থাপন করা রয়েছে। এ হাউজগুলোতে দেশি জাতের কই, শিং ও তেলাপিয়ার পোনা রাস পদ্ধতিতে বড় করা হয়। মহিবুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালে প্রকল্পে তিনি ৩০ লাখ রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষে
টাকা বিনিয়োগ করেছেন। দেশি জাতের পোনা সংগ্রহ করে হাউসের মধ্যে রেখে তিন মাস পর সেগুলো বিক্রির উপযোগী করে বাজারজাত করা হয়। যাতে তার মাসিক গড় আয় হয় ১ লাখ টাকা। দুজন স্থায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি দৈনিক মজুরিতে আরও পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক সেখানে প্রতিদিন কাজ করেন।
মহিবুল্লাহ বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রধান কাজ হচ্ছে বারবার পানি বদল করা। এতে পানির মান যথাযথ থাকায় অ্যামোনিয়া-নাইট্রোজেন সমতা বজায় থাকে। ফলে মাছ বৃদ্ধি হয় দ্রুত এবং স্বাদ অক্ষুণ্ন থাকে। ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে দেশি কই, শিং পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা ওই মাছ ভোক্তাদের কাছে প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। 
সর্বশেষ জানুয়ারির শেষভাগে সাড়ে ৭ লাখ টাকার দেশি কই, শিং বিক্রি করেন মহিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ওই মাছ তিন মাস লালনপালন করতে তার ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এতে লাভ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে তার খামারে ৬০ হাজার কই এবং ৫ হাজার শিং আছে। যেগুলো বিক্রির উপযোগী হবে মার্চে। 
প্রকল্পের সমস্যা সম্পর্কে মহিবুল্লাহ বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রধান উপকরণ হচ্ছে পানি। এটিই এখানে প্রধান সংকট। অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। প্রকল্প এলাকায় একটি নলকূপ স্থাপনের জন্য জেলা পরিষদে বারবার ধরনা দিয়েও সুফল মেলেনি বলে মহিবুল্লাহ অভিযোগ করেন।
আধুনিক এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে কীভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে মহিবুল্লাহ বলেন, তিনি প্রথমে ইউটিউবে এ ধরনের মাছের খামার দেখেন। পরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তার এক ঘনিষ্ঠের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেন। তিনিও সেখানকার একজন মৎস্য গবেষক। ওই ব্যক্তিই তাকে খামার করতে সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ এবং কারিগরি জ্ঞান প্রদান করেন।
বুধবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মহিবুল্লার ‘এমএম অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’ পরিদর্শন করেন। মোশারফ হোসেন অভিভূত হয়ে বলেন, তার কর্মজীবনে এমন প্রকল্প দেখেননি। তার ধারণা, বরিশাল বিভাগে এ রকম খামার আর নেই। প্রকল্পটির উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বরিশালের সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘রাস’ পদ্ধতিতে মাছ চাষের খামার বাংলাদেশে তেমন নেই। মহিবুল্লাহর মতো একজন তরুণ এ পদ্ধতিতে মাছের খামার করে একটি সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন। এ খামারটিকে ঘিরে এলাকায় আরও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এতে কর্মসংস্থানও বাড়বে। তাকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]