logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২০
সাক্ষাৎকারে ভিসি
চবিকে সেরা বিদ্যাপীঠ করতে কাজ করছি
ড. শিরীণ আখতার ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চে তাকে প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। গেল বছরের ৩ নভেম্বর তিনি ভিসির দায়িত্ব পান। আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইফুদ্দিন তুহিন ও চবি প্রতিনিধি মিনহাজুল ইসলাম

আলোকিত বাংলাদেশ : ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কোন বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন? 

ভিসি : ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমেই আমি চিন্তা করেছি বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিকভাবে উন্নতমাত্রায় নিয়ে যাব। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল ক্লাস করাটাই বড় কথা না। জ্ঞান সৃজন, জ্ঞান উৎপাদন, গবেষণা করা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য। সে জন্য আমি প্রথমে চেষ্টা করেছি এই বিষয়গুলোকে চবিকে সেরা বিদ্যাপীঠ

অগ্রাধিকার দেওয়া। আগে যে গবেষণা হতো না, তা নয়। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শিক্ষায় সরকার প্রচুর অনুদান দিচ্ছে। সে কারণে আমি গবেষণায় এগিয়ে আসতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছি। বিভাগগুলোকে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলো যদি ঠিকমতো না হয়, ক্লাসে অসুবিধার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশেষ পরীক্ষার জন্য হৈচৈ করে, এটি আমাদের জন্য খুব অপ্রীতিকর। তাই শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসমুখী হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় সভাপতিদের অনুরোধ করেছি। এক পর্যায়ে তারা এটিও বলেছেন যে, তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পরে যেসব ছাত্র ক্লাস করে না তাদের অভিভাবকদের ডাকবেন। যাতে করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সচেতন হয়। পাশাপাশি হলগুলোর প্রভোষ্টদের বলেছি, যেসব ছাত্রছাত্রী হলে থাকে তাদের ক্লাসমুখী করতে যা যা করণীয় তা করতে। আমরা হয়ত সবকিছু পারব না। তবে প্রত্যাশার একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারব। 
আলোকিত বাংলাদেশ : দায়িত্ব নেওয়ার পর কোন ইস্যুতে আপনি কঠিনভাবে মুখোমুখি হয়েছিলেন?
ভিসি : দায়িত্ব নেওয়ার পর যে ইস্যুটির মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেটা হলো কিছু ছাত্রের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো অসুবিধা নেই, লেখাপড়ার কোনো অসুবিধা নেই, ভিসির সঙ্গে বা ডিনদের সঙ্গে কোনো অসুবিধা নেই, ছাত্ররা নিজেদের কারণে ছোটখাটো সমস্যা থেকে বড় ইস্যু বানিয়েছে। একটা ব্যাপার সেটা হলো নেতা কিন্তু আমরা  তৈরি করি না। সেগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হয়ে থাকে। কেন্দ্রে যে নেতারা আছেন তারা যদি এ ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হন, তাহলে ছাত্রদের সমস্যাগুলো সহজেই মিটে যায়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চেষ্টা করছি, প্রশাসনের দিক থেকে, হলের দিক থেকে এবং সব দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যা করার আমরা তা করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। রুটিন দায়িত্বে থাকায় সেগুলো সমাধান করা যায়নি। পরবর্তীতে আমি যখন পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পাই, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করে দিয়েছি।
আলোকিত বাংলাদেশ : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য ছিল বর্তমানে তা কতটুকু ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
ভিসি : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অতীত ঐতিহ্য ছিল। আমি মনে করি অতীত ঐতিহ্যের কোনো হানি হয়নি। বরং এ ঐতিহ্যকে সমুন্নত করার জন্য চেষ্টা চলছে।
আলোকিত বাংলাদেশ : উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা গবেষণায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে এ খাত অবহেলিত। এ বিষয়ে যদি কিছু বলেন।
ভিসি : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর গবেষণা খাতে অতীতের তুলনায় সর্বোচ্চ বাজেট দিয়েছি। আগামী বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে।
আলোকিত বাংলাদেশ : চাকসু নির্বাচন হচ্ছে না কেন?
ভিসি : চাকসু নির্বাচন নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু চিন্তা করতে পারব না। গত ভিসি মহোদয় চাকসু নির্বাচনের নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য একটা রিভিউ কমিটি গঠন করেছিলেন। আমাকে সেটা দেখতে হবে। এই মুহূর্তে সামনে আমাদের ডিন নির্বাচন আছে, সিন্ডিকেট নির্বাচন আছে, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আছে। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আছে (সিটি করপোরেশন)। এসবের পর আমি চাকসু নির্বাচন নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। 
আলোকিত বাংলাদেশ : বর্তমান জাতীয় উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু অবদান রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
ভিসি : জাতীয় উন্নয়নে আমাদের ছেলেমেয়েরাই তো কাজ করছে। এ  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রছাত্রীরা বের হয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে আছেন। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা প্রতিনিধিত্ব করছে। তারা সততার সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্বগুলো পালন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সুপ্রিমকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারপতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় উন্নয়নে বিশাল একটা অবদান রেখে চলেছে।
আলোকিত বাংলাদেশ : বিভিন্ন বিভাগের সেশনজট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না?
ভিসি : আমি দায়িত্ব নিয়েই মনিটরিং সেলকে বলে দিয়েছি সেশন জট কমানোর জন্য কাজ করতে। আমরা প্রায় সেশন জট নিরসন করে ফেলেছি। দুই একটা বিভাগে থাকলেও আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততার সঙ্গে তা নিরসন করতে। 
আলোকিত বাংলাদেশ : শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না?
ভিসি : আমাদের হলগুলো অনেক পুরানো। এতে অনেক সমস্যা রয়েছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান ডিজিটালাইজেশনের কাজ চলছে। এটা শেষ হলে বড় প্রকল্প নেওয়া হবে। এতে আবাসিক হলের বিষয়ও থাকবে। আশা করি এরপর আবাসন সংকট আর থাকবে না।
আলোকিত বাংলাদেশ : পরিবহন সংকট নিরসনে কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
ভিসি : পরিবহন সংকট নিরসনে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে রেলমন্ত্রীর কথা হয়েছিল। তিনি আমাদের বলেছেন, নতুন একটি ট্রেন দেবেন এবং আমাদের রেলস্টেশনকে সংস্কার করে দেবেন। রেলমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি ফজলে করিম আমাদের রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি আমরা বাস সংখ্যা বাড়াতে পারি কি না সেটাও দেখছি। 
আলোকিত বাংলাদেশ : জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কী?
ভিসি : জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মৌলবাদী সংগঠনের প্রতি আমাদের কোনো প্রকারের সমর্থন নেই। জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা জঙ্গিবাদ ও মাদককে প্রতিহত করব। 
আলোকিত বাংলাদেশ : বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কী?
ভিসি : দায়িত্ব নিয়েই আমি একাডেমিক কার্যক্রমে অধিক মনোযোগ দিয়েছি। গবেষণায় অন্যবারের চেয়ে সর্বোচ্চ বাজেট দিয়েছি। আমি চাই আমাদের এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। চবিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে আমরা কাজ করছি। আশা করি, আমরা সফল হব।
আলোকিত বাংলাদেশ : ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
ভিসি : ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমার পরামর্শ একটাই, ঠিক মতো ক্লাস করো, পরীক্ষা দিয়ে পড়াশোনা শেষ করো। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ো। ভালো লেখাপড়া জানলে চাকরির অভাব হবে না। এরই মধ্যে শিওর ক্যাশে পরীক্ষার মাধ্যমে ৪৯ জনের চাকরি হয়েছে। আমরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলব। তারা আমাদের বিভিন্ন অফার দিচ্ছে, আমরা তাদের বলেছি, আমাদের দুটো জিনিসের একটি দিতে হবে। হয় শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থায় অবদান রাখতে হবে। যদি আপনারা এই শর্তে রাজি হন তবে আপনাদের সঙ্গে লেনদেন করব। এরকম যারা আসছে সবাইকেই আমরা এটা বলছি। আমরা বেকার সমস্যা নিরসনে কাজ করছি। এছাড়া আমাদের আইটি পার্কটা হয়ে গেলে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বেকার থাকবে না।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]