
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০ | |
রোগের নামটি হে-ফিভার, সঙ্গে অতিরিক্ত হাঁচি-কাশি। নাম শুনে মনে হতে পারে, এটি বোধ হয় একটি বিশেষ ধরনের ফিভার বা জ্বরের প্রকারভেদ। কিন্তু আসলে ফিভার বা জ্বরের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই। প্রকৃত পক্ষে এটি একটি বিশেষ ঋতুভিত্তিক হাঁচিজনিত অ্যালার্জিক রোগ। এটি একটি বিশেষ ঋতুতে প্রতি বছর এবং বছরের পর বছর ওই রোগীর উপসর্গ হতে দেখা যায় এবং এসব রোগীর ক্ষেত্রে নাক ও চোখ দিয়ে জল পড়তেও দেখা যায়।
নারী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই এটা সমভাবে হতে পারে এবং অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। উপসর্গ বা লক্ষণগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে তীব্র আকারে দেখা দেওয়ায় প্রচ- কষ্টদায়কও হতে পারে, আবার হালকা বা সামান্য উপসর্গ নিয়েও দেখা দিতে পারে। যেহেতু একটি বিশেষ ঋতুতে এ রোগটি দেখা দেয় কাজেই সে ঋতুর সঙ্গে নিঃসন্দেহে এর সম্পর্ক রয়েছে। ওই একটি বিশেষ সময়ে বাতাসে যে ফুলের রেণু উড়ে বেড়ায় সে ফুলের রেণুর প্রভাবেই মূলত এ রোগটি দেখা দেয় এবং এতে যারা আক্রান্ত হয় তাদের মধ্যে বংশানুক্রমিক অ্যালার্জিক প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে হাঁচির সঙ্গে তালু, চোখ ও নাকে জ্বালাভাব থাকতে পারে। নাক ও চোখ থেকে পানি পড়বে এবং তীব্র হাঁচির প্রভাব থাকবে সকালের দিকে। সকালের দিকে এর তীব্রতার কারণ হচ্ছে ওই বাতাসের পুষ্পরেণুর উপস্থিতি থাকে সবচেয়ে বেশি। হাঁচির সঙ্গে থাকতে পারে কাশি। এর সঙ্গে আরও থাকতে পারে হাঁপানি। তবে সাধারণত এই হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট কম ক্ষেত্রেই উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তবে হাঁচি-কাশি ও হাঁপানি একই সঙ্গে উপস্থিত নাও থাকতে পারে। এর বাইরেও থাকতে পারে খাদ্য গ্রহণের অনিচ্ছা, শারীরিক দুর্বলতা ও অধিক নিদ্রার প্রবণতা।
এ রোগকে সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রোগীর পারিপার্শ্বিক বা বংশানুক্রমিক ইতিবৃত্ত অবশ্যই ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অবশ্যই যে পুষ্পরেণুতে রোগীর অ্যালার্জি রয়েছে তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন পুষ্পরেণুর নির্যাস দিয়ে স্কিন টেস্ট করলে তা জানা যায়। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেহেতু প্রকৃত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পুষ্পরেণু শনাক্ত করা যায় তাই নির্দিষ্ট সেই পুষ্পরেণুর নির্যাস ব্যবহার করে হাইপোসেনসিটাইজেশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে ভালো ফলও পাওয়া যায়। অন্য সব অ্যালার্জির বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তা অবশ্যই করা প্রয়োজন। তবে কোন অ্যান্টিহিস্টামিন এ ক্ষেত্রে রোগীর জন্য কার্যকর, তা একাধিক অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহারের মাধ্যমে কোনটি উপযুক্ত তা নির্ণয় করে নিয়ে সেটি ব্যবহার করলে যথার্থ ফল পাওয়া যাবে। অ্যালার্জিক বিক্রিয়ার ফলে যে হিস্টামিন তৈরি হয় তা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা ওই ওষুধের সমভাবে নাও থাকতে পারে। তাই যার ক্ষেত্রে সেটা উপযুক্ত তাকে সেটাই দিতে হবে।
তবে এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধের প্রয়োগ যে অতিশয় ফলপ্রসূ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসা; কিন্তু হাইপোসেনসিটাইজেশন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকৃত অ্যালারজেনটি খুঁজে বের করে তাকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে এ পদ্ধতির ব্যবহার আমাদের দেশে এখনও অনেকটাই সীমিত। সাধারণভাবে অ্যান্টিহিস্টামিনই এ ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। যদিও তাতে কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। যেমন অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই এতে ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়। তবে এ ধরনের সব ওষুধের ঘুমভাবের ক্ষমতা কিন্তু সমপরিমাণ নয়। কোনোটি বেশি আবার কোনোটিতে কম ঘুমভাব হয়। যেটিতে বেশি ঘুমভাব হয় ওই ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন অবশ্যই রাতে খাওয়া উচিত এবং এ ধরনের ওষুধ খেয়ে কখনোই গাড়ি চালানো উচিত নয়।
এছাড়াও আবার কোনো কোনো অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহারের ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুম-লীর উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সে ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে মানসিক চাপ, অনিন্দ্রা দেখা দিয়ে থাকে। কাজেই অকারণে অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার কখনোই সঙ্গত নয় এবং দীর্ঘ দিন ধরে তা ব্যবহার করাও উচিত নয়। যারা হে-ফিভারে ভোগেন তাদের মনে রাখতে হবে, ওই সুনির্দিষ্ট ঋতুতে আক্রান্তের খামারে বা বাগানে কাজ করা উচিত নয়। ঘরের জানালা বন্ধ রাখা উচিত। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে এয়ারকন্ডিশনার চালালে ভালো থাকা যেতে পারে। ওই রোগীদের ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা চালানো উচিত, অন্যথায় স্থায়ীভাবে রোগীর নাকের ও সাইনাসের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির ক্ষতি হতে পারে।
ডা. দিদারুল আহসান
চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
আল-রাজী হাসপাতাল
০১৮১৯২১৮৩৭৮
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |