logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০
বঙ্গোপসাগরের মৎস্য নিয়ে শঙ্কা
জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হোক

সাগরের নীল অথৈ জলের ঐশ্বর্য শুধু আমাদের দৃষ্টির মুগ্ধতাই তৈরি করে না, এই জলের তলে রয়েছে মূল্যবান সম্পদের বিপুল সমাহার। তবে বলাই বাহুল্য, এ সম্পদের অনেকটাই আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে, আর যেটুকু আমাদের হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে তাও সুশৃঙ্খলভাবে আহরণ করতে পেরেছি, সে দাবি করা যাবে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এবং ইলিশ রক্ষায় সফলতা থাকলেও বঙ্গোপসাগরে মাছের পরিমাণ কমছে এবং সামুদ্রিক মাছের কিছু প্রজাতি অনেকটা নিঃশেষ হতে চলেছে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা। নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মাছ ধরা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর মাছশূন্য হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ও জরিপের মাধ্যমে এ মূল্যায়ন করছেন গবেষকরা। জানা যায়, তিন বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সামুদ্রিক মাছ নিয়ে একটি প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। গবেষণা জরিপের সঙ্গে যুক্তদের বরাতে প্রকাশ, অতিরিক্ত আহরণের কারণে যে কোনো মাছ বাণিজ্যিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা করা না হলে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আর পরিতাপের বিষয় হলো, বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে এরকম পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। 
বঙ্গোপসাগরের মাছ কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত। প্রথমত, বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুতের কোনো সঠিক হিসাব নেই; আর কী পরিমাণ মাছ ধরা যাবে তারও সীমা-পরিসীমা নির্ধারিত নেই। কারণ সাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ গবেষণা বন্ধ ছিল প্রায় দুই দশক। আবার বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণ হচ্ছে, তাও প্রশ্নবিদ্ধ। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে বাংলাদেশে কাঠের তৈরি ট্রলার, মাঝারি ট্রলার এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ব্যবহৃত হয়। নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের হিসাবে নিবন্ধিত কাঠের নৌযানের সংখ্যা ১১ হাজার ৭১৫টি। তবে ধারণা করা হয়, অগভীর সাগরে মাছ ধরায় যুক্ত আছে ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার নৌযান। অভিযোগ, বড় নৌযানগুলোর জালে ছোট-বড় নির্বিশেষে সব মাছই আটকা পড়েÑ অনেক মাছের অকাল মৃত্যু ঘটে। আবার সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জেনে নির্বিচারে মাছ শিকার করা হয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযানে মাছ শিকারের যে জাল সেটিরও নির্ধারিত মাপ আছে; কিন্তু সেটি কতটা মানা হচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন অনেকে। এদিকে বাংলাদেশি সমুদ্রসীমায় প্রায়ই ভারত ও মিয়ানমারের মাছ ধরা ট্রলার ঢুকে পড়ছে। এমনকি বাংলাদেশের সীমানায় মাছধরা নিষিদ্ধ থাকাকালীন সময়েও তাদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এভাবে বঙ্গোপসাগরের মৎস্যশূন্য হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। 
সূত্রমতে, পৃথিবীর অন্য সমুদ্রগুলো যেমন গালফ অব থাইল্যান্ড অনেকটা মৎস্যশূন্য হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগর তেমন হোক সেটা কারও প্রত্যাশা নয়। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের পর বঙ্গোপসাগর ঘিরে অর্থনীতির এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারের তরফেও এই নিয়ে নানা উদ্যোগের কথা আমরা অবহিত হয়ে আসছি। বর্তমানে সমুদ্র থেকে আমাদের মৎস্য উৎপাদনের মাত্র ১৮ শতাংশ আহরণ করা হয়। অথচ বাস্তবভিত্তিক সামগ্রিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই হার অনেক বাড়ানো সম্ভব। মাছ ছাড়াও এখানে রয়েছে সামুদ্রিক শৈবাল, গুল্ম জাতীয় প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির চিংড়ি, তিন প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া এবং প্রায় ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক জাতীয় প্রাণী।  আমাদের সুনীল অর্থনীতিকে বেগবান করতে এসব প্রাণিজ সম্পদ আহরণের টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ইলিশকে টার্গেট করে যেভাবে সাফল্য এসেছে, সামুদ্রিক অন্যান্য মূল্যবান অর্থকরী মাছের ক্ষেত্রেও আলাদা করে সুনির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা দরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশা। 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]