
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০ | |
অনিয়ম-দুর্নীতি আর নানা ঋণ জালিয়াতির কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এখন নাজুক। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১২ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ও বেসরকারি আটটি ব্যাংক রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে এ সময়ে কিছু ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় ঋণের ঝুঁকি বিবেচনায় প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশন রেখেছে ৫৪ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
আমানতকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখতে হয়। সাধারণ ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখার নিয়ম রয়েছে। আর যথাসময়ে আদায় না হওয়া নিম্নমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ বা ক্ষতিমানে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে যথাক্রমে ২০, ৫০ ও ১০০ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে এ অর্থ রাখতে হয়। যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বাড়ে, প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তত বেড়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য খরচ বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিবেচনায় কয়েক ধাপে প্রভিশন রাখার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে ঘাটতি থাকা অবস্থায় লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বরে ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি কমেছে । সেপ্টেম্বর ’১৯ প্রান্তিকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার এক ১২৯ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে সেটা হয়েছে ৬ হাজার এক ৬৫৫ কোটি টাকা।
সরকারের নির্দেশনায় খেলাপি ঋণ কমাতে খেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে খেলাপি আইন শিথিল, অবলোপন নীতিমালায় ছাড়, গণছাড়ের আওতায় পুনঃতফসিল, কম সুদের ঋণের ব্যবস্থাসহ দেওয়া হয়েছে আরও বিশেষ সুবিধা। এতে সারা বছর লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ ডিসেম্বর প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমলেও বছরভিত্তিক হিসাবে ২০১৮ সালের তুলনায় গেল বছর খেলাপি বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। কারণ ওই বছর ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। নানা সুবিধা গ্রহণের ফলে গেল বছর ডিসেম্বর প্রান্তিকে কাগজে-কলমে কমেছে খেলাপি ঋণ।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের ৮১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বন্ধ বা ক্ষতিজনক ঋণ, যা এক বছর আগে ছিল ৮০ হাজার ১১৬ কোটি টাকা বা ৮৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে, তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। কিন্তু খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। একইভাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |