
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০ | |
আকাশ ও আকাশের বিশালতা, পাহাড়-পর্বত ও বৃক্ষলতা, ঝরনা-নদী, সবুজ ও সবুজ বন-বনানী মানুষকে ঘিরেই স্রষ্টার সব আয়োজন। কারণ মানুষ সৃষ্টির মধ্যমণি। সৃষ্টির সেরা জীব। তার সবই হবে উন্নত থেকে উন্নততর। তাই প্রভু মানুষকে দৈহিক গঠন, অবয়ব, আকৃতি এবং মেধা সবদিক থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ বানিয়েছেন। বানিয়েছেন নিখুঁত ও নিপুণ। সৃষ্টির সৌন্দর্যের সব রং ও উপাদান ঢেলে দিয়েছেন মানুষের চোখেমুখে। দেহের প্রতিটি কোষ ও অণু-পরমাণুতে। রব্বে কারিম নিজেই ঘোষণা করেন ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবয়বে।’ (সূরা ত্বিন : ৪)।
তিনি সৌন্দর্যের সব বিভাই মানুষের মাঝে ঢেলে দিয়ে ক্ষান্ত হননি; বরং মানুষের ভেতরেও তিনি সৃষ্টির বৈচিত্র্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। একে অন্যের থেকে ভিন্নরূপ দান করেছেন। পৃথক করেছেন। আলাদা করেছেন। পৃথক করেছেন আবার নর ও নারী শ্রেণিতেও। নর ও নারী প্রত্যেক শ্রেণিকেও আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং শোভা দান করেছেন। কতই না সুন্দর স্রষ্টার সৃষ্টি! কোরআনের ভাষায় নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়! (সূরা মুমিনুন : ১৪)।
তাই সৃষ্টিগত এই শোভা ও সৌন্দর্যতাকে পরিবর্তন কিংবা বিকৃত সাধন করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। কারণ এতে স্বাতন্ত্র্যতা নষ্ট হয়। প্রভু প্রদত্ত সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা হয়। এমনকি তা আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এবং সমগ্র মানবকুলের শত্রু শয়তানের অনুকরণ করা হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয় ‘এবং আমি (শয়তান) তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব।’ (সূরা নিসা : ১১৯)।
সৃষ্টির সেই স্বাতন্ত্র্যের বিভাজনেই মহান আল্লাহ পুরুষকে দান করেছেন দাড়ি। দাড়ি শুধু মুখম-লের ওপর কিছু কেশগুচ্ছই নয়; বরং তা স্রষ্টার পক্ষ থেকে পুরুষের জন্য বিশেষ নেয়ামত ও অনুগ্রহ। এর মাধ্যমে পুরুষকে নারী জাতি থেকে পৃথক করা হয়েছে। আলাদা করা হয়েছে। স্বাতন্ত্র্যতা প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং দাড়ি পুরুষের শোভা। পুরুষের সৌন্দর্যতা। পুরুষের অহংকার ও গৌরব। শুধু কি তাই! সব নবী-রাসুল দাড়ি রেখেছেন। সাহাবা তাবেঈরা দাড়ি রেখেছেন। দাড়ি ইসলামের প্রতীক। মুসলিম জাতিসত্তার পরিচায়ক। স্বতন্ত্র ভূষণ ও নিদর্শন। সুতরাং দাড়িকে সম্মান করতে হবে। মর্যাদা প্রদান করতে হবে। যারা দাড়ি রাখে তাদের হেয় করা যাবে না। অপমান করা যাবে না। এরশাদ হয়Ñ ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তা তো তার কলবের তাকওয়ারই পরিচয়।’
(সূরা হজ : ৩২)।
দাড়ির বিধান
দাড়ি ইসলামের স্বতন্ত্র ও মৌলিক একটি বিধান। রাসুল (সা.) এর হাদিস এবং পবিত্র সুন্নাহর হুকুম অনুযায়ী দাড়ি রাখা ওয়াজিব। প্রিয় নবী (সা.) নিজেই দাড়ি রাখার ব্যাপারে আদেশ করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) মোচ কাটার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন। (মুসলিম : ১/১২৯)। অন্য হাদিসে এরশাদ হয়Ñ তোমরা উত্তমরূপে মোচ কাট এবং দাড়ি লম্বা কর। (বোখারি : ২/৮৭৫)। তাছাড়া দাড়ি রাখা যে ইসলামের স্বতন্ত্র এবং মৌলিক বিধান তা নিম্নে বর্ণিত হাদিস থেকেও বুঝে আসে। ইমাম উবাইদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা (রহ.) বর্ণনা করেন, একবার এক অগ্নিপূজক রাসুল (সা.) এর দরবারে এসেছিল। লোকটার দাড়ি মু-ানো ও মোচ লম্বা ছিল। রাসুল (সা.) তখন তাকে বললেন, এটা কী? সে বলল, এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম। রাসুল (সা.) বললেন, আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব এবং দাড়ি লম্বা রাখব। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ২৬০১৩)।
তাছাড়া হাদিস থেকে এ-ও বুঝে আসে যে, দাড়ি রাখতে হবে সর্বনিম্ন এক মুষ্টি। এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলার সুযোগও শরিয়তে রয়েছে। যেমন হাসান বসরি (রহ.) বলেন, সাহাবা তাবেঈরা এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার অবকাশ দিতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) এক মুষ্টি দাড়ির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন। হজরত আবু যুরআ (রহ.) বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রা (রা.) তার দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ২৫৯৯২, ২৫৯৯৯)।
কিন্তু কোনো বিশুদ্ধ হাদিসে এক মুষ্টির ভেতরে দাড়ি কাটার অবকাশ পাওয়া যায় না। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা কাম্য। দ্বীন কিংবা শরিয়ত যেভাবে চলতে বলেছে সেভাবে চলাই মঙ্গল। কল্যাণকর। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়, ‘হে ঈমানদারা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সূরা বাকারা : ২০৮)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলামের প্রতিটি বিধান যথাযথ পালন এবং মানার তৌফিক দান করুন!
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |