
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০ | |
মাটি মানবজাতির বসবাসের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মাটি বলতে ভূতল, পৃথিবীর উপরিভাগ, ভূসম্পত্তি ও জমিকে বোঝানো হয়। এ মাটি ছাড়া প্রাণীদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। এমনকি জড়পদার্থও। গাছপালা, নদ-নদী ও সাগর-মহাসাগর মাটির ওপরে অবস্থান করে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখছে। মাটি থেকে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীবাসীর জন্য খাদ্য উৎপাদন করেন। ফলবান বৃক্ষরাজির জন্ম দেন। মানুষ ভূপৃষ্ঠের ওপর নিজেদের বাসস্থান হিসেবে ঘর নির্মাণ করে। যানবাহনের জন্য রাস্তা তৈরি করে। জমির বুক চিরে কৃষক চাষাবাদ করেন।
মাটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ধৈর্যশীল হওয়া। মাটিকে যেভাবে ব্যবহার করতে হয় সেভাবে ব্যবহার হতে প্রস্তুত। কখনও মাটির বুক চিরে ফসল রোপণ করা হয়, কখনও ভারী যন্ত্র দিয়ে মাটির গভীরে পরিখা খনন করা হয়, এক জমিকে একাধিকবার ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। একইভাবে মাটির ওপর কখনও তাজমহল প্রতিষ্ঠা, আবার কখনও ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিন তৈরি করা হয়। সদাসর্বদা মাটি মাটিই থাকে। কারও কাজের প্রতি এর কোনো ধরনের বাধা আসে না। নীরবে সৃষ্টিকুলের কল্যাণে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত হিসেবে সেবা প্রদান করে। এটাই মাটির স্বভাব, উদারতা ও ধৈর্যশীলতা।
মাটি থেকে মানবের সৃষ্টি : আল্লাহ মানুষকে রিফাইন করা মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। মানব অস্তিত্বের মূল উপাদান হলো মাটি। কারণ, মানুষের খাদ্যপণ্য সব মাটি থেকেই উৎপন্ন হয়। মানুষ তা খাওয়ার পর হজম হয়ে কিছু মলমূত্রে, কিছু রক্তে পরিণত হয়। আর সে রক্তের নির্জাস হলো বীর্য, তা থেকেই মানুষের সৃষ্টি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির মূল উপাদান থেকে। তারপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক নিরাপদ স্থানে। পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপি-ে, অতঃপর রক্তপি-কে পরিণত করি গোশতপি-ে এবং গোশতপি-কে পরিণত করি হাড়ে; অতঃপর হাড়গুলোকে ঢেকে দিই গোশত দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে; অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান!’ (সূরা মোমিনুন : ১২-১৪)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মতো শুকনো মাটি থেকে। আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।’ (সূরা রহমান : ১৪)।
মাটি মানবজাতির খাদ্য উৎপাদনের মূল উৎস : সৌরজগৎকে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কল্যাণের জন্য যেরকম সৃষ্টি করেছেন, তেমনিভাবে জমিনকেও মানবজাতির উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। জমিতে মানবজাতির রিজিক নিহিত রয়েছে। ভূগর্ভে প্রাণিকুলের আহারাদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন গোপন রেখেছেন। যার দরুন মানুষ বীজ রোপণ করলে চারাগাছ বের হয়ে আসে। আর তা এক সময় ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয়। অতঃপর লোকেরা সেই ফলগুলো খেয়ে জীবনধারণ করে। অথচ মাটি একটি প্রাণহীন বস্তু। এরপরও তা থেকে বৃক্ষরাজি, তরিতরকারি, শাকসবজি ইত্যাদি উৎপাদন হয়। অবশ্যই এর পেছনে আল্লাহর অদৃশ্য শক্তি রয়েছে এ কথা বিশ্বাস করতে হবে। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং সেখানে উৎপন্ন করেছি নয়নপ্রীতিকর সব ধরনের উদ্ভিদ।’ ( সূরা ক্বাফ : ৭)।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন করো সে বিষয়ে চিন্তা করে দেখেছ কি? তোমরা কী তা উৎপন্ন করো, না আমি উৎপন্ন করি?’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৩, ৬৪)।
মাটি পৃথিবীবাসীর জন্য বিছানাস্বরূপ : ভূম-ল পৃথিবীবাসীর জন্য বিছানাস্বরূপ। এতে মানবজাতি, পশু-পাখি তথা প্রাণিকুলের অবস্থান রয়েছে। মানব নিজেদের ঘর নির্মাণ করে। পশু-পাখির নিরাপদ আবাসস্থান তৈরি করা হয়। প্রাণীরা মাটির ওপর পা দ্বারা বিচরণ করে। এই মাটির বিছানা শুধু মানবজাতির জন্য উপযোগী নয়, বরং সব ধরনের প্রাণীর জন্য উপভোগের উপযোগী। চাই মানব হোক বা জিন, পশু হোক বা পাখি। এছাড়া জড়পদার্থেরও উপভোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।’ (সূরা জারিয়াত : ৪৮)।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘আমি কি জমিনকে বিছানা বানাইনি এবং পাহাড়গুলোকে কীলক? আর আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা নাবা : ৬-৮)।
মাটির পর্বত দ্বারা ভূম-লের মজবুতকরণ : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবী সৃষ্টি করার পর পাহাড়গুলোকে পেরেক স্বরূপ এর ওপর স্থাপন করে দিয়েছেন, যাতে ভূম-ল তার অধিবাসীকে নিয়ে হেলা-দোলা না করে। শুধু তাই নয়, পর্বতমালায় বান্দার অসংখ্য নেয়ামতরাজি গোপন রেখেছেন। খনিজ সম্পদ, ফলফলাদি, শাকসবজি ইত্যাদি। এ পাহাড় নামের পেরেকটি মাটির তৈরি। পাকাঘরের পাকা স্তম্ভের মতো মাটির পেরেক দ্বারা ভূম-লের ভিত্তিকে মজবুত করা হয়েছে। এটি একমাত্র আল্লাহর নিপুণ কারিগরি। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জমিনকে বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি আর তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদিত করেছি।’ (সূরা ক্বাফ : ৭)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তিনি ভূম-লের ওপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন ও তাতে সব ধরনের কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন।’ (সূরা হামিম সাজদা : ১২)।
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা
ফটিকছড়ি চট্টগ্রাম
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |