logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০
আলোচনায় প্যারোল
দীপক দেব

দ-প্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে জমে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। কয়েক দিন ধরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা প্যারোল ইস্যুতে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। আন্দোলন বা আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপি নেতারা বক্তব্য দিলেও। শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরÑ এমন দাবি করার পর থেকেই প্যারোলের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়। যদিও মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, প্যারোল নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। এর জবাবে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কথার কল রেকর্ড তার কাছে রয়েছে। জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার কারাবন্দির দুই বছর পূর্তির আগে থেকেই বিএনপি নেতারা তার মুক্তির বিষয় নিয়ে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন বন্দি অবস্থায় থাকার কারণে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যে কোনো মূল্যে মুক্তি চায় বিএনপি ও তার পরিবার। এ অবস্থায় প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও খালেদা জিয়ার কোনো সম্মতি বা বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। তবে, ১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দারসহ তার পরিবারের সদস্যরা। সুচিকিৎসার নিশ্চিতে বিদেশ পাঠানোর জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে ওই দিনই বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার। খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে এটাই প্রথম লিখিত আবেদন। ওই দিনও প্যারোলের বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি পরিবারের সদস্যরা। 
এদিকে দুর্নীতির মামলায় দ-িত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার মুক্তির আর্জি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে মির্জা ফখরুল ফোন করেছিলেন বলে শুক্রবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব আমাকে ফোন করেছেন। ফোন করে অনুরোধ করেছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীন সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। মূলত শুক্রবারের পর থেকেই খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়টি নিয়ে জমে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। সরকারের দায়িত্বশীল নেতারাও এ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের অবস্থান ও বিএনপি নেতাদের অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্নও তুলে আসছিলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গেল শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্যারোলের কোনো আবেদন করা হয়নি। আপনারা দেখছেন, তার পরিবারের বরাত দিয়ে এক ধরনের কথা, আবার দলের পক্ষ থেকে আরেক ধরনের কথা বলা হচ্ছে। একদিকে আন্দোলনের ডাক, অন্যদিকে আমাদের সাধারণ সম্পাদককে ফোনে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করে তারা আসলে কী চান, সেটা এখনও স্পষ্ট করতে পারেননি। এর পরের দিন বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও কথা বলেন। রোববার কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন, তাহলে সরকার তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে। 
তবে, মঙ্গলবার প্যারোল কেন্দ্রিক রাজনীতি নতুন মোড় নেয়। ওই দিন ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে এদিন মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, প্যারোল নিয়ে কোনো কথা তিনি বলেননি। মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্যের জবাবে একই দিন ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অসত্য কথা আমি কেন বলব? তিনি (মির্জা ফখরুল) আমাকে অনুরোধ করেছেন। এখন তিনি কী প্রমাণ করতে চান, যে তিনি আমাকে অনুরোধ করেননি? তাহলে কিন্তু প্রমাণ দিয়ে দেব। কারণ টেলিফোনে যে সংলাপ, সেটি তো আর গোপন থাকবে না। এটা বের করা যাবে। ফোনে কথা বললে এটা কী গোপন রাখা যাবে? এটার রেকর্ড আছে না? আমি তাকে ছোট করতে চাই না। প্যারোলের বিষয় নিয়ে বড় দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে জমে উঠেছে রাজনীতি। রাজনীতি সচেতন মহল মনে করছেন বিএনপি তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। 
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আজ তা কোর্টে তোলা হবে। সর্বশেষ গেল ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর দুই মাসের মাথায় আবারও জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আগামীকাল আমরা জামিন আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করব। তার আরেক আইনজীবী সগীর হোসেন বলেন, আদালতের দপ্তরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জামিন পেলে তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন। দলটির আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কারণে অনেকেই মনে করছেন, প্যারোলের বিষয়টি আবারও কিছুটা হলেও পিছিয়ে যাচ্ছে। 
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি আছেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি। বিচ্ছিন্নভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন এবং আইনি নানা পদক্ষেপ নিয়েও তার মুক্তি মেলেনি। একপর্যায়ে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গেল বছরের ১ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কেবিন ব্লকে। এখনও তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]