
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২০ | |
খুলনায় পুরোনো রেলস্টেশনে রেলওয়ের একটি নতুন ডিভিশন চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই নতুন এ ডিভিশন চালুর কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রেল কর্তৃপক্ষ বলেছে, খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি নতুন রেললাইন চালুসহ রেলপথের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এ নতুন ডিভিশন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১৪ মাস আগে নতুন রেলস্টেশন চালু হলে খুলনার পৌঁনে ২০০ বছরের প্রাচীন পুরোনো রেলস্টেশনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৩৫ সালে খুলনায় রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে শুরু খুলনা রেলস্টেশনের কার্যক্রম। তখন খুলনা থেকে কলকাতার শিয়ালদহ পর্যন্ত রেল চলাচল করত। প্রথম থেকেই ট্রেনে জনসাধারণের যাতায়াতের সঙ্গে ব্যবসায়িক পণ্য ও অন্য মালপত্র পরিবহন করা হতো। মূলত মানুষের যাতায়াত ও মালপত্র আনা-নেওয়ার সুবিধা বিবেচনা করে খুলনার বড়বাজার, ভৈরব নদীর স্টিমার ও লঞ্চঘাট এবং ফেরিঘাটের বাস টার্মিনালের কিছুটা দূরে খুলনা রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। এ স্টেশনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রায় সবই ছিল। তবে বড় অসুবিধা ছিল নিচু প্ল্যাটফর্ম নিয়ে। যাত্রীদের ওঠানামায় সেটা ছিল বিপদের কারণ। এছাড়া প্ল্যাটফর্মের সংখ্যাও ছিল কম; মাত্র তিনটি। খুলনা স্টেশন থেকে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন, একটি লোকাল ট্রেন, দুইটি মেইল ট্রেন ও দুইটি কমিউটার ট্রেন এবং সপ্তাহে এক দিন একটি ভারতীয় ট্রেন চলাচল করত। ফলে তিনটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে অসুবিধা লেগেই ছিল। প্রায়ই প্ল্যাটফর্মের সংকটে এমনকি আন্তঃনগর ট্রেনকে স্টেশনের বাইরে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে হতো। এজন্য আধুনিক মানের নতুন স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। খুলনা রেলস্টেশনের জমির পরিমাণ ২২৭ একর। এর বাইরে আরও ১৩০ একর জমি রয়েছে রেলওয়ের। ফলে পুরোনো স্টেশনের দক্ষিণ পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নতুন রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে সেখানেই কাজকর্ম চলছে। নতুন রেলস্টেশন চালু হওয়ার পর পুরোনো স্টেশনটি বিরাণ হয়ে পড়েছে। এখানে মানুষের চলাফেরা নেই বললেই চলে। পুরোনো স্টেশনের মূল ভবন, টিকিট ইস্যুর ভবন এবং জিআরপি থানার ভবন মিলিয়ে ছিল পুরোনো স্টেশন। সেখানে স্টেশন মাস্টারের কক্ষটিসহ সব কক্ষ এবং টিকিট ইস্যুর ভবন পর্যন্ত তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু জিআরপি থানায় এখনও লোকজনের চলাচল নজরে পড়ে। দিনের বেলা জায়গাটি গোচারণ এবং কুকুরের বিশ্রামের জায়গা হয়ে পড়েছে। আর রাতের বেলা এটি নিশাচরদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র। তবে গুডস স্টোর নামের বড় কক্ষটি দিনে খোলা থাকে। তবে সেখানে লোকজনের আনাগোনা নেই বললেই চলে। দুই-একজন কুলি সেখানে বিশ্রামের জন্য আসেন।
খুলনা স্টেশনের সূত্রানুযায়ী, খুলনা রেলস্টেশন থেকে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন সীমান্ত, রূপসা, কপোতাক্ষ, সাগরদাঁড়ি, সুন্দরবন ও চিত্রা এবং খুলনা ও বেনাপোল কমিউটার ট্রেনে মাসে গড়ে ৯২ সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। লিজে দেওয়া লোকাল মহানন্দা এবং রকেট ও নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনে প্রতি মাসে আরও গড়ে ৩০ হাজারের মতো মানুষ যাতায়াত করেন। ট্রেনগুলো রেলওয়ের ২৪ ঘণ্টার সময় ধরে চলাচল করে। ফলে খুলনা রেলস্টেশন ২৪ ঘণ্টাই জেগে থাকে। বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম হয় শুধুই নতুন স্টেশনে। এখন যাত্রীদের আনাগোনা আর কুলিদের হাঁকডাক নেই পুরোনো স্টেশনটিতে। তবে নতুন স্টেশনে মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। ফলে মাঝেমধ্যে মালবাহী গাড়ি দুই-একটি এলে রেল কর্তৃপক্ষকে পুরোনো স্টেশন ব্যবহার করতে হয়। এদিকে, পরিত্যক্ত রেলস্টেশনে রেলওয়ের একটি নতুন ডিভিশন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই নতুন এ ডিভিশন চালুর কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা রেলস্টেশনের মাস্টার মাণিক চন্দ্র সরকার বলেন, পুরোনো রেলস্টেশনটি একেবারে পরিত্যক্ত হয়নি। এখনও অনেক কাজ সেখানে করতে হয়। তাছাড়া রেলের সিকিউরিটির লোকজন সেখানে সবসময় থাকে। তিনি বলেন, পুরোনো স্টেশনে রেলওয়ের ডিভিশনাল অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে অর্থবছরের শুরুতেই নতুন ডিভিশন চালুর কাজ শুরু হতে পারে।
এ ব্যাপারে পাকশী পশ্চিম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) আসাদুল হক বলেন, খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ কার্যক্রম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি নতুন রেললাইন চালুসহ রেলপথের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খুলনায় রেলওয়ের নতুন একটি ডিভিশন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে খুলনায় নতুন ডিভিশন চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে এ ডিভিশন নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। তবে, এখনও এটি চূড়ান্ত হয়নি।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |