
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২০ | |
শহীদ মিনার আমাদের গৌরব গাঁথার প্রতীক। শহীদ মিনার মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গের প্রতীক। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠাতার সাহসী চেতনা। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরেও রংপুর, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে দেড় সহস্রাধিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এর মধ্যে রংপুরে ৯৬৩টি সরকারি বিদ্যালয়ে, মানিকগঞ্জে ৬০২টি বিদ্যালয়ে এবং মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। বিস্তারিত ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের খবরে-
রংপুর : গৌরবময় সেই ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পার হলেও এখনও রংপুর জেলার সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৭০ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এ কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কলাগাছ, বাঁশ, কাঠ, আর কাগজ-কাপড়ে তৈরি করা অস্থায়ী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪৯৫টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে। বাকি ৯৬৩টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এই পরিসংখ্যান সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে হলেও জেলার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর বেশিরভাগই শহীদ মিনারহীন। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, আগামী বছরের মধ্যেই বাদপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হবে। পীরগাছার পরাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মুনতাসির বলেন, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর টাউন হল চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি। স্কুলে শহীদ মিনার থাকলে আমরা এখানেই দিবসটি পালন করতে পারতাম। একই কথা বলেন নগরীর আলমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরগাছার ব্রাহ্মণিকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাগঞ্জের ইকরচালী মাঝাপাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদের অনেকেই কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে গিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। তারাগঞ্জ ইকরচালী মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। মিঠাপুকুর উপজেলার বুজরুক হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত কুমার আচার্য শহীদ মিনার না থাকা প্রসঙ্গে বলেন শহীদ মিনার নেই। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জাতীয় এসব অনুষ্ঠানে শোক সভা করা হয়। দিবসের গুরুত্ব তুলে আলোচনা সভা করা হয়। এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা কলাগাছের শহীদ মিনার তৈরি সেখানে ফুল দিয়ে থাকেন।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা প্রসঙ্গে শিক্ষনুরাগী আলহাজ মো. তানবীর হোসেন আশরাফী বলেন, শিশুদের সামনে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে শহীদ মিনার প্রথম সিঁড়ি। শিক্ষবিদ প্রফেসর মো. শাহ আলম বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়া দুঃখজনক। অথচ শহীদ মিনার আমাদের গৌরব গাঁথার প্রতীক। নব প্রজন্মের মনে ভাষা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বীজ ছড়িয়ে দিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি। এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু প্রাথমিকে নয়, দেশের প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা দরকার। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান সিদ্দিকী জানান, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তার একটা তালিকা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজও চলছে। আগামী বছরের মধ্যেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শতভাগ স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলেও তিনি জানান ।
মানিকগঞ্জ : জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও নেই শহীদ মিনার। ফলে এসব বিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদায় পালন হচ্ছে না আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আবার কিছু বিদ্যালয়ে বাঁশ, কাঠ ও ফোম দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করেও পালন করছে একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহরের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে পারলেও একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে পারছে না গ্রামের শিক্ষার্থীরা। ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘদিন পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় হতাশ শিক্ষকরা।
মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১২৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। বাকি ৫২১টি বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। ২২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪৭টিতে শহীদ মিনার আছে। এরমধ্যে ৪৯টি মাধ্যমিক, ২৬টি মাদ্রাসা ও ছয়টি কলেজে নেই শহীদ মিনার। বাকি ১৪৭টি বিদ্যালয়ে আছে শহীদ মিনার।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা নিলুফা রহমান জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরির জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। যেহেতু সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা নেই এবং নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি, যে শহীদ মিনার করতেই হবে। তাই নিজ উদ্যোগে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে তাদের। জেলা শিক্ষাকর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। সেসব বিদ্যালয়ের বিষয়ে অধিদপ্তরকে অবহিত করব। যাতে শিগগিরই সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত হয়। সরকারি নির্দেশনার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণে যাদের অক্ষমতা আছে। আলোচনা করে তাদের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে বলা হবে।
মুন্সীগঞ্জ : সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শহীদ মিনার নেই একটিতেও। তাই প্রতি বছর মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা বাঁশ ও ককসিটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |