
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২০ | |
মুমিনুল হকের সঙ্গে আরভিনের টসের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের পরস্পরের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সেঞ্চুরি হয়েছে। মুমিনুলের মুদ্রা নিক্ষেপে টস জিতে মুচকি হাসি দিয়েছেন ক্রেইগ আরভিন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্টের প্রথম দিন শেষে সেই হাসিটা চওড়া হয়েছে। নিজেদের মধ্যে শততম ম্যাচটা অধিনায়ক আরভিন (১০৭) উদযাপন করেছেন সেঞ্চুরি দিয়ে। অধিনায়কের সেঞ্চুরি ও ওপেনার মাসভাউরের (৬৪) হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম দিন শেষে সফরকারীদের স্কোর ৬ উইকেটে ২২৮ রান। হয়তো আরও ভালো হতে পারত, সেটা শেষ বিকালে হতে দেননি অফ-স্পিনার নাঈম হাসান। এরপরও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ দুই টেস্টেই প্রথম ইনিংসে ৩৫০-প্লাস স্কোরের টাটকা স্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশ সফরেও ব্যাটিংয়ে তরতাজা জিম্বাবুয়ে।
তবে দিনের শুরুতে প্রথম দিন এ বাঁহাতি স্পিনারকে মোটেও আমল দেয়নি জিম্বাবুয়ে। বিসিএলে সর্বশেষ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা নাঈম টেস্টের প্রথম দিনে ব্যাটনটা নিয়েছেন নিজের হাতে। টানা ৩২ ওভারের লম্বা স্পেলে (৩২-৬-৬১-৩) ৩ উইকেটে কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। দিনের শেষ স্পেলে (৪-২-৭-১) করেছেন বড় শিকার। উইকেটে পাহাড় হয়ে দাঁড়ানো জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক আরভিনকে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিনটি শেষ করতে দেননি নাঈম। সারা দিনে বোলিংয়ে পেস বোলার আবু জায়েদ রাহি দুই úেলে দেখেছেন উইকেটের নাঈমে স্বস্তি বাংলাদেশের
মুখ। প্রথম স্পেলে (৬-৩-৮-১) ফেরান কাসুভাকে, শেষ স্পেল ৫-০-১৯-১, ফেরান মারুমাকে। বাংলাদেশ দলের স্পিন সামাল দেওয়ার প্রস্তুতিটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ থেকে নিয়ে এসেছেন তারা। শুক্রবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন অধিনায়ক। প্রথম দিনের ব্যাটিংয়ে তা জানিয়ে দিতে পেরেছে আরভিন অ্যান্ড কোং। এরপরও দিনের শুরুতে জিম্বাবুয়ে রানের জন্য ধুঁকেছে। প্রথম ৪ ওভারের ৪টিই মেডেন। প্রথম রান আসে পঞ্চম ওভারে, তাও ওয়াইড থেকে। আর প্রথম বাউন্ডারি শটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭ ওভার পর্যন্ত! এরপরও প্রথম সেশনে স্কোর ৮০/১, প্রথম ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তারা (১০৪/১)। বিশেষ করে দ্বিতীয় উইকেট জুটির ১৫৯ মিনিটে ১১১ রানে প্রথম দিনে স্কোরটা ২২৮/৬ এ টেনে নিতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। দিনের শেষ ৩ ঘণ্টায় জিম্বাবুয়ে হারায় পাঁচ ব্যাটসম্যান। এ সেশনে বাংলাদেশকে ফিরিয়েছেন নাঈম-রাহি জুটি। এ ৫ উইকেট হারানোর পথে জিম্বাবুয়ে তুলেছে ১২৪ রান।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে সর্বোচ্চ ৩৫* ছিল আরভিনের। সেই বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম টেস্টে এসে পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরি, রাহিকে ডাবলস দিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির ইনিংসে ৩২৯ মিনিট করেছেন ব্যাটিং। প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার ১০ বল আগে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আরভিনকে বোল্ড আউট করেন নাঈম। নাঈমের বাড়তি পেসের বলে ভারসাম্য হারান আরভিন, বল প্যাডে লেগে গিয়ে ভাঙে স্টাম্প। যে দিনটা এতক্ষণ দুই দলের মধ্যে তৈরি হওয়া সুতোর ওপর ঝুলছিল, সেটিই হেলে গেল বাংলাদেশের দিকে, নাঈমের ওই উইকেটেই। হয়তো ঠিক দাপুটে পারফরম্যান্সের দিন নয় এটি, তবে মিরপুরের কৌশলী উইকেটে শুরুতে দুই পেসার, পরে নাঈমের ধারাবাহিক বোলিংয়ে একটু স্বস্তি পাওয়ারই কথা স্বাগতিকদের। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের একের পর এক বাজে পারফরম্যান্সের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া বাংলাদেশের।
মিরপুরের রহস্যময় উইকেটে দুই পেসারের সঙ্গে দুই স্পিনার নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে দুই জিম্বাবুয়ে ওপেনারকে পড়তে হলো রাহি-এবাদতের স্কেলমাপা বোলিংয়ের সামনে। টিকে থাকাই সেখানে মুখ্য লক্ষ্য ছিল তাদের। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে আরভিন-মাসভাউরের জুটি বাংলাদেশকে হতাশ করে গেছে বেশ কিছুক্ষণ, টানা বোলিং করে যাওয়া নাঈম এরপর একটু পরপরই হাজির হয়েছেন দৃশ্যপটে। আরভিনও শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন, রিভার্স সুইপেও যেন তেমন নিয়ন্ত্রণ ছিল না তার। এখানে-সেখানে এজ হলো, বল অল্পর জন্য মিস করে গেল স্ট্যাম্প। আরভিন থাকলেন ঠায় দাঁড়িয়ে, রিভার্স-সুইপও পরে খেললেন দাপটের সঙ্গে। ক্রিজের সবদিকেই খেলেছেন, তবে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে ছিলেন দারুণÑ স্পিনকে সামলেছেন বেশ ভালোভাবেই। মাসভাউরের সঙ্গে সেঞ্চুরির জুটির পর বড় জুটি হয়নি আর, তবে আউট হওয়ার আগে জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে নিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কই।
সকালে এবাদত-রাহির বোলিং যে ইঙ্গিত দিল, ঠিক সেসব মিলল না এরপর। প্রথমে এবাদতকে সরিয়ে নাঈমকে আনলেন মুমিনুল, এক ওভার পর সরিয়ে নিয়েছিলেন রাহিকেও। শুরুতে নড়বড়ে থাকা এরভিন বা মাসভাউরে লাঞ্চের আগে আর আউট হলেন না, ৮০ রান নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। শিগগিরই জুটি ভাঙল না। রাহিকে স্ট্রেইট ড্রাইভে আর মেরে ফিফটি পূর্ণ করলেন মাসভাউরে, সে ওভারে মেরেছিলেন আরেকটি চার। মাসভাউরে যতক্ষণে নাঈমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন, ততক্ষণে দুইবার জীবন পেয়েছেনÑ ৫৮ রানে নাঈমের হাতে ফিরতি ক্যাচের সুযোগ দিয়েছিলেন, ৫৯ রানে সিøপে শান্ত ক্যাচ নিতে পারেননি, এ ক্যাচ ডাইভ দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন লিটনও। ব্রেন্ডন টেইলর (১০) নেমে তাইজুলকে ইনসাইড-আউটে একটা চার মেরেছিলেন, তবে রিভার্স-সুইপের অতিচেষ্টা কাল হয়েছে তার। এদিন যেন শুধুই আরভিনের রিভার্স সুইপের! নাঈমের পেস ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে স্ট্যাম্পে বল ডেকে এনেছেন টেইলর, এর আগের বলেই রিভার্স-সুইপ করতে গিয়ে সফল হননি ঠিক। চা-বিরতির আগে সিকান্দার রাজাকে (১৮) দৃঢ়ই দেখাচ্ছিল, দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে আরও ৭০ রান যোগ করেছিল জিম্বাবুয়ে। নাঈমের একটা আলগা বলে চারের পর তাইজুলকে মেরেছিলেন আরেকটি, তার বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে হারিয়েছেও বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত রাজার সঙ্গে দ্বৈরথটাও জিতেছেন নাঈমই। টার্ন-স্ট্রেইটের মিশ্রণে ভড়কে যেতে হয়েছে রাজাকে, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা নাঈমের বলে এজড হয়ে ফিরতে হয়েছে। টিমাইসিন মারুমা (৭) একবার রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও শেষরক্ষা হয়নি, রাহির ভেতরের দিকে ঢোকা বল মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লিউ, রিভিউ বিফলেই গেছে তার এ দফা। রেজিস চাকাভাকে (*) নিয়ে এরপর দিনটা শেষ করার পথেই এগোচ্ছিলেন আরভিন। ৮১.২ ওভার পর দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে টানা ৩২ ওভারের স্পেল করা নাঈমকে আবার আনেন মুমিনুলÑ নতুন বলে ‘দৃঢ়তা’ কাজে লাগিয়ে নাঈম করলেন দারুণ ডেলিভারিটা। যে ডেলিভারিতে দিনের ভাগের একটু বেশি অংশটা পেল বাংলাদেশ, স্বস্তিও।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |