প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০২০ | |
টেস্টে বড় জয় (৫টি) বাংলাদেশের
ব্যবধান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
ইনিংস ও ১৮৪ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢাকা ২০১৮
ইনিংস ও ১০৬ রান জিম্বাবুয়ে ঢাকা ২০২০
২২৬ রান জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ২০০৫
২১৮ রান জিম্বাবুয়ে ঢাকা ২০১৮
১৮৬ রান জিম্বাবুয়ে চট্টগ্রাম ২০১৪
তাইজুলের বলে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারলেন না শেষ ব্যাটসম্যান তাসুমা; থার্ড আম্পায়ারের সংকেত মিলতেই দুটি স্ট্যাম্প তুলে নেন মুশফিকুর রহিম, ডাবল সেঞ্চুরির স্মারক হিসেবে দুটি স্ট্যাম্প? তবে একটু পর একটা তুলে দেন মুমিনুলের হাতে, অধিনায়ক হিসেবে প্রথম জয়ের অনুভূতি কেমন মুশফিক সেটি জানেন। মুমিনুল অবশ্য একটু পর সেটি দিয়ে দিলেন আবু জায়েদ রাহিকে! এক হাতে হেলমেট বলে সেটি নিতে পারছেন না, নাকি রাহির অবদানের জন্যই তাকে দিয়ে দিলেন, সেটি জানা যায়নি। তবে মুমিনুল আপাতত অধিনায়কত্বটা উপভোগ করছেন। হঠাৎ অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম তিন ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হারা মুমিনুল এবার ইনিংসজয়ী অধিনায়ক, মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় ইনিংস ও ১০৬ রানে। টেস্টে এটি বাংলাদেশের ১৪তম জয়, সাতটাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ম্যাচের যা অবস্থা ছিল, তাতে খারাপ আবহাওয়াই টেস্ট নিতে পারত পঞ্চম দিনে। ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে ছিল বৃষ্টির শঙ্কাও! মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল; কিন্তু সেই বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি বাংলাদেশের জন্য। শেষ ৬ টেস্টের পাঁচটাই ইনিংস ব্যবধানে হার বাংলাদেশের, হেরেছিল ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও। এ সময়ে টেস্টে মুমিনুলদের খেলার ধরনও ছিল দৃষ্টিকটু। নানা কারণে কোণঠাসা বাংলাদেশ খুঁজছিল স্বস্তির বাতাস। জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে পাওয়া গেছে সব। ব্যাটসম্যানরা বড় রান করে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস, পেসারদের থেকে মিলেছে ভরসার ছবি, স্পিনাররা দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব যে একটু অন্য পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আলাদা করে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার সঙ্গে এখানে আসে অনেক বড় দায়িত্ব, আর সে দায়িত্ব চাপে রূপান্তর হতে সময় লাগে না একেবারেই। সঙ্গে আছে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ব্যাপার, ক্রিকেট দলীয় খেলা হলেও তা তো হয় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সমষ্টিতেই।
মুমিনুল অধিনায়কত্বটা পেয়েছিলেন একটু জরুরি পরিস্থিতিতে। সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা তাকে হুট করেই এনেছিল স্পটলাইটে। এ ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, ভারতে যেমন নার্ভাস ছিলেন, পাকিস্তানে সেটার অনেকখানি কাটিয়ে উঠেছেন। এবার হয়ে উঠছেন আত্মবিশ্বাসী। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন যেমন ব্যাটসম্যান মুমিনুল, তেমনি অধিনায়ক মুমিনুল পেলেন প্রথম জয়ও। এ ম্যাচ দিয়ে তার আরেকটা ব্যাপার দেখার ছিল। দল হিসেবে সবাই একসঙ্গে কেমন করে, মানে যে যার ভূমিকা কীভাবে নেয়। মুমিনুল এ ফলের পেছনে দেখছেন সেই ব্যাপারটির ভূমিকাই, ‘আসলে স্বস্তি না ঠিক। দল যেভাবে কাজ করবে, যেমনটা হওয়া উচিত সেভাবে, মানে খেলোয়াড়রা দল হিসেবে কীভাবে কাজ করবে, কীভাবে খেলবে সেই জিনিসটা আমি সবসময় আসলে দেখতে চাইছিলাম। এটা আমি অনুভব করতে চাইছিলাম। আমার কাছে মনে হয় যে প্রথম ইনিংস থেকে আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন। এমনকি পেস বোলার থেকে শুরু করে স্পিনার; এমনকি ব্যাটসম্যানরা পর্যন্ত আপনার যেভাবে দলের যা দরকার, সেভাবে করেছে। এ কারণে আমার কাছে মনে হয় ফলটি এসেছে।’ ব্যক্তিগত নৈপুণ্যকে মুমিনুল দেখছেন অবদান রাখতে পারা হিসেবেই, ‘আমার কাছে মনে হয়, অধিনায়ক হিসেবে এবং দলের একজন সদস্য হিসেবে সবসময় সবার কাছে এটা কাম্য, যদি আপনি কিছু করতে পারেন। আমার মনে হয়, আমি দলের জন্য কিছু অবদান রাখতে পেরেছি এবং সেটা করতে পারলে অনেক ভালো লাগে। আমার কাছে মনে হয়, ছোট ছোট অবদান রাখাটাও অনেক বেশি কিছু।’ চাপের ব্যাপারে বলেন, ‘যতটুকু চাপ থাকে, ততটুকুই ছিল, এর বেশি নয়। আগের তিন ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হার থেকে শিক্ষাও নিয়েছেন তিনি, ‘শুরুর দিকে একটু খারাপ হলে বিষয়টিকে সেভাবে দেখি না। কারণ এটা হতেই পারে। আপনার যখন ভালো হবে, তখন ধীর ধীরে ভালো হতে থাকবে। আমার কাছে উন্নতি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আগামী যে পাকিস্তান সিরিজ আছে, সেখানে আমি কেমন এবং দল হিসেবে ক্রিকেটাররা কেমন করছে সেটার দিকে তাকিয়ে আছি। আজকের দিনটি তো চলে গেছে, সেটা তো আর আসবে না। এর আগে যে তিনটি ম্যাচ হেরেছি সেখান থেকে আমি কী শিক্ষা নিতে পেরেছি অধিনায়ক এবং ক্রিকেটার হিসেবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজে টেস্টাঙ্গনে একেবারে নতুন অধিনায়ক হলেও, তার দলেই এখন তিনজন অধিনায়ক খেলেছেন। সাকিব আল হাসান না থাকলেও বাকি যারা সিনিয়র, তাদের সবসময়ই পাশে পাচ্ছেন তিনি, ‘ভারত সিরিজ থেকে যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন থেকে আমি সিনিয়রদের কাছ থেকে শতভাগ ‘এফোর্ট’ পাচ্ছি। মানে আজ পর্যন্ত, সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে খুবই খুশি। এমনকি যদি মাঠে ফিল্ডিং দেখেন, ‘অফ দ্যা ফিল্ড, অন দ্যা ফিল্ড’ আমি শতভাগ পাচ্ছি। শতভাগের বেশিও বলা যায়।’ অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে মুমিনুল কঠোর, বলেছেন সেটিও, ‘আমার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছিল বিসিএল, এনসিএল দিয়ে। ওই জায়গায় প্রথম প্রথম এরকমই ছিলাম (লাজুক বা অন্তর্মুখী), পরে দেখলাম যে না জিনিসটা বদলাতে হবে। যারা মাঠে থাকে তারা জানে। একটু আক্রমণাত্মক, একটু উদ্বৃত থাকতে হয়। উদ্বৃত নয়, আক্রমণাত্মক থাকতে হয় আরকি। সবাইকেই ঝাড়ি মারি।’ শেষ কথাটা বলে মুমিনুল হাসেন। অধিনায়কত্বটা উপভোগই করছেন তিনি, চাপ-দায়িত্ব সবকিছু নিয়েই। বিসিবি প্রেসিডেন্টের হাত থেকে ট্রফিটা নেওয়ার পর মুমিনুল একপাশে সরে দাঁড়ালেন, ট্রফির ভাগ তখন নাঈম, লিটন, তাইজুল, সাইফদের হাতে। ফটোসেশনে জুনিয়র বা একাদশে না থাকা ক্রিকেটারদের হাতে ট্রফি দিয়ে তোলার কাজটা এখন অনেক অধিনায়কই করেন, ক্রিকেট ‘টিম গেম’, ব্যাপারটা যেন মনে করিয়ে দেওয়া হয় আরেকবার। মুমিনুল নিজে ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি পেলেও এ ম্যাচে বিজয়ী অধিনায়ক।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
টস : ক্রেইগ আরভিন (জিম্বাবুয়ে)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ২৬৫
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৫৬০/৬ ডিক্লে.
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস (৯/২) রান বল ৪ ৬
মাসভাউরে ব নাইম ০ ২ ০ ০
কাসুজা ক মিথুন ব তাইজুল ১০ ৩৪ ০ ০
টিরপোনো ক লিটন ব নাইম ০ ১ ০ ০
টেইলর ক তাইজুল ব নাইম ১৭ ৪৭ ১ ১
আরভিন রান আউট ৪৩ ৪৯ ৫ ১
সিকান্দার ক মুশফিক ব তাইজুল ৩৭ ৭১ ৩ ১
মারুমা ক তামিম ব নাইম ৪১ ৫২ ৫ ০
চাকাভা ক তামিম ব তাইজুল ১৮ ৪০ ২ ০
এনদিওভু এলবিডব্লিউ ব নাইম ৪ ২ ১ ১
তাসুমা এলবিডব্লিউ ব তাইজুল ৩ ২৬ ০ ০
নিয়াউছি অপরাজিত ৭ ২১ ০ ০
অতিরিক্ত ৯
মোট (৫৭.৩ ওভারে অলআউট) ১৮৯
উইকেট পতন : ১/০, ২/০, ৩/১৫, ৪/৪৪, ৫/১০৪, ৬/১২১, ৭/১৬৫, ৮/১৭০, ৯/১৮১, ১০/১৮৯।
বোলিং নাইম ২৪-৬-৮২-৫, তাইজুল ২৪.৩-৭-৭৮-৪, জায়েদ ৪-৩-৪-০, এবাদত ৫-১-১৬-০।
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহীম
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |