প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২০ | |
অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে হতাশ অভিভাকদের আশার আলো দেখাচ্ছে দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার রসুলপুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। যেসব প্রতিবন্ধী আগে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারত না, পারত না লিখতে, চিনত না বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালাÑ তারাই এখন কথা বলতে পারে, লিখতে পারে, চেনে বর্ণমালা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তারা এখন অনেক সচেতন হয়েছে।
রসুলপুর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়টি উপজেলা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রসুলপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি স্থাপিত হয় ২০১৩ সালে। যার জন্য ২০ শতক জায়গা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ কান্ত। আর বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের প্রতিষ্ঠিত দীপ্ত জীবন ফাউন্ডেশন। বিদ্যালয়ে মোট ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে শিক্ষক রয়েছেন ১১জন। আর প্রথম থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৫২ জন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ারও ব্যবস্থা করে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, তাদেরও আছে শিক্ষার অধিকার। উপযুক্ত শিক্ষা পেলে তারাও সমাজের জন্য কিছু করবে এমন চেতনা নিয়েই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে পরম স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের আলোর মুখ দেখাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্র দেবনাথ ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। যার অর্থদাতা ছিলেন ইউপি সদস্য সারদা কান্ত রায়।
সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের কেউ হাঁটতে পারে, কেউ পারে না। আবার কেউ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। কারও হাত বাঁকা, কারও পা বাঁকা আবার কেউ সঠিকভাবে কথাও বলতে পারে না। এ সবের পরেও আরও কয়েকজন আছে যারা মা-বাবার কোলে আসা-যাওয়া করে। এসব শিশু যাতায়াতের জন্য নিজস্ব তিনটি ইজিবাইকও রয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরা ভর্তি হওয়ার পর থেকে বদলে যাচ্ছে তাদের জীবন। এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষক-কর্মচারীর আন্তরিকতায়। নিজ পরিবারেও যাতে এসব শিশু অবজ্ঞা কিংবা অবহেলার শিকার না হয় সেজন্যও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীর মা নীলা রানী জানান, তার মেয়ে একজন প্রতিবন্ধী। আগে লিখতে পারত না। বর্তমানে সে লিখতে পারে, পড়তে পারে। দিন দিন তার অনেক উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার প্রতিবন্ধী সন্তানকে বোঝা মনে করি না। তাকে নিয়মিত স্কুলে নিয়ে আসি। শত কষ্ট হলেও তাকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলব। প্রধান শিক্ষক মৌসুমী আক্তার বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করা অনেক কষ্টের, তবুও আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি ওদের শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে। দিন দিন তাদের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল যেন বিদ্যালয়টির বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের অনেক উপকার হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিদিন শিশুদের মিড ডে মিল অর্থাৎ দুপুরের খাওয়া দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। আর অন্যান্য স্কুল থেকে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। এখানে শিক্ষকরা এই শিশুদের যত্নসহকারে পাঠ দান করান। আশা করছি বিদ্যালয়টি ও বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা ভালো করবে।
![]() সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected] |