logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২০
ক্লাসের বাইরের বই
পঞ্চানন মল্লিক

নিজ জীবনের সাফল্য সবার অত্যন্ত কাক্সিক্ষত। আর স্বপ্ন বিলাসিতা মানুষের চিরায়ত স্বভাব। তাই জন্মগ্রহণ করে বুঝতে শেখার পর থেকে স্বপ্নময় আবেগতাড়িত মানুষ চায়, জীবনে বড় কিছু হতে। এজন্য মানুষ নানা ধরনের উপায় অবলম্বন করে। অধিকাংশ লোক ক্যারিয়ার গঠনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়াকেই মূল্যবান মনে করেন। সেটা যথোপযুক্ত চিন্তা, তবে শিক্ষা গ্রহণের জন্য শুধু স্কুল-কলেজের পাঠ্য বা ক্লাসের বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটা সমীচীন নয়। এটা ভাববার বিষয় যে, এ অমূলক ভ্রান্তির ঘোরে পড়ে জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও। ফলে অধিকাংশ সময় দেখা যায়, ছাত্রজীবনে প্রাতিষ্ঠানিক উজ্জ্বল সাফল্য সত্ত্বেও বাস্তব জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক হয়ে শেষ হয়ে যায় তাদের আশা-ভরসা। বস্তুতপক্ষে, ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে পারিপার্শ্বিক সব জ্ঞান অর্জন কি সম্ভব? এ প্রশ্নের জবাবে হয়তো সবাই বলবেন না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কোনোভাবে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রাকিষ্ঠানিক শিক্ষাই শিক্ষার মূল ভিত গঠন করে। তবে আমরা জানি জ্ঞানের কোনো শেষ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করে। প্রকৃত পক্ষে ক্যারিয়ার গঠনে ক্লাসের বাইরের বইয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পত্রিকা-ম্যাগাজিন, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট এফেয়ার্স, বিশ্বের ডায়েরি, বিশ্ব জ্ঞান কোষ, অভিধান বা ডিকশনারি ইত্যাদি অধ্যয়ন জীবনে জ্ঞানার্জনের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে শিক্ষাজীবন শেষে যখন একজন যুবক-যুবতী বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় তখন এর গুরুত্ব যথেষ্ট বোঝা যায়। আর এসব পরীক্ষায় তারাই এগিয়ে থাকেন যারা ছাত্রজীবনে সহায়ক পাঠ্য বিষয় হিসেবে এগুলোর যথেষ্ট চর্চা করেছেন বা গুরুত্ব দিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। আসলে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য স্কুলজীবন থেকেই এগুলোর চর্চা অব্যাহত রাখা উচিত। ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি দৈনন্দিন এগুলোর অনুশীলন একজনকে সত্যিকার অর্থে প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী হতে সহায়তা করে। হয়তো বলতে পারেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কি তাহলে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। বিষয়টি আসলে তা নয়। জীবনে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য, স্বীয় প্রতিভা ও গুণের বিকাশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। জ্ঞানার্জনের জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষালাভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্যারিয়ার গঠনে এর বাইরেও যে কিছু দিক রয়েছে সেটাই অনুধাবনযোগ্য। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনে জ্ঞানার্জনের প্রধান ভিত্তি। আপন জীবনে জ্ঞানার্জনের দ্বীপ জ্বেলে দেয় এ প্রক্রিয়া। তবে এ প্রক্রিয়ায় অর্জিত জ্ঞান দিয়ে নিজেকে আরও বেশি দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য এর পাশাপাশি সহায়ক গ্রন্থ পাঠ অনস্বীকার্য। বিষয়টি খুবই আনুষঙ্গিক। যেমন ধরুন, যদি কেউ একজন বড় ক্রিকেটার হতে চান তাহলে সারা দিন শুধু ব্যাট আর বল নিয়ে পড়ে থাকলেই চলবে না। ফিটনেসের জন্য অনুষঙ্গিক ব্যায়াম, দৌড়ঝাঁপ, নিয়মমাফিক খাদ্য গ্রহণ এমন কি প্রয়োজনে অন্য খেলাও প্র্যাকটিস করে শরীরটাকে উপযুক্ত করে তুলতে হবে। তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে অন্যান্য সহায়ক গ্রন্থের অনুশীলন, এই দুইয়ে মিলে ব্যক্তির উপযুক্ততা অর্জন হতে পারে।
আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশিরভাগ অভিভাবককে তাদের ছেলেমেয়েদের কেবল ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করানোর জন্যই ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। সন্তান কি করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করবে তাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দেখা দেয়। অনেকের ধারণা, সন্তান ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেই বা পরীক্ষায় সার্টিফিকেটের মান ভালো হলেই তারা জীবনে বড় কিছু হতে পারবে। তাই তাদের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ক্লাসে ছেলেমেয়েদের ভালো রেজাল্ট করানোর ব্যাপারে। তবে শুধু ক্লাসের ভালো রেজাল্ট ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে কতখানি ভূমিকা রাখতে পারবে তা আগে থেকে ভেবে দেখা দরকার। জ্ঞান হচ্ছে সমুদ্রের মতো বিশাল। মানুষ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিখতে থাকে তবুও শেখার কোনো শেষ হয় না। তাই সব জ্ঞান শুধু স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে অর্জিত হবে এমনটি আশা করা যাবে না। বিশেষ করে বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ, বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের খবরাখবরÑ এগুলো পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। এজন্য পত্রপত্রিকা পাঠ, বিভিন্ন মিডিয়ায় চোখ রাখা, সাম্প্রতিক তথ্যবহুল বিভিন্ন গ্রন্থাবলি পাঠ ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ছোটবেলা থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বহির্মুখী সহশিক্ষায় অনুরক্ত করে তুলতে হবে। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি খোঁজা শুরু হলে তখন আমরা তাড়াতাড়ি এসব পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু সে সময়ে এতকিছু পড়ে আয়ত্তে আনা দুরূহ হয়ে পড়ে। তার ওপর থাকে বেকারত্বের যন্ত্রণা, চাকরি প্রাপ্তির বয়সসীমা শেষ হওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি। তাই এর পরিবর্তে যদি কোনো ছাত্রছাত্রী ছেলেবেলা থেকে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে বাইরের বিভিন্ন জ্ঞানমূলক বই পাঠ করে এগুলো আত্মস্থ করতে মনোযোগী হয় তাহলে দীর্ঘসময় ধরে এগুলো অনুশীলনের ফলে অনেক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তাদের অর্জন হয়ে যায়। তারা তখন বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠে। যা পরবর্তী সময়ে তাদের চাকরির পরীক্ষায় সাফল্য লাভে যথেষ্ট সহায়তা করে। ক্লাসের বইয়ের জ্ঞান এবং ক্লাসের বাইরের জ্ঞানমূলক বইয়ের একত্রে অনুশীলনের ফলে যোগ্য, দক্ষ, উপযুক্ত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার ব্যাপারে তাই ছোটবেলা থেকেই সবাইকে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে প্রথমত সচেতন হতে হবে। কারণ ছোটবেলায় একজন শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা কম থাকে। বড়রা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু বুঝতে পারেন। তাই তাদের জীবনের ভুল যাতে সন্তানের জীবনে না ঘটে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। তারা যদি তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতে বড় হওয়ার পথপন্থা, সঠিক দিকনির্দেশনা দেখাতে পারেন তাহলে শিশুরা একদিন দক্ষ, উপযুক্ত ব্যক্তি হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। যেটি আমাদের সবার একান্ত চাওয়া।                                                                                       

পঞ্চানন মল্লিক 
কবি ও কলামিস্ট

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]