logo
প্রকাশ: ১২:০০:০০ AM, শনিবার, ফেব্রুয়ারী ২৯, ২০২০
ভারতে মুসলমানদের ওপর হামলার প্রতিবাদ
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের দিল্লিতে মুসলিমদের ওপর হামলা, হত্যা, মসজিদ-মাদ্রাসা ধ্বংস ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ইসলামী দল। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সমমনা ইসলামী দলগুলো।

বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সমমনা ইসলামী দলগুলোর নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, দিল্লিতে মুসলমানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আগুন দিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে 

মসজিদ পোড়ানো হচ্ছে। মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে। অনতিবিলম্বে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হোক।
জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান নূর হোসাইন কাসেমী। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু ও মুসলমানরা শান্তিতে বসবাস করেন। কেউ কারও ওপর আক্রমণ করেন না। আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি না। আমাদের দেশে নরেন্দ্র মোদি এলে সম্প্রীতি নষ্ট হবে। তাই মোদিকে এ দেশে আসতে দেওয়া যাওয়া যাবে না। তাকে আসতে দেওয়া হবে না।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতের সাম্প্রদায়িক মোদি সরকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নারী ও শিশুদের ওপরও নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। 
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব ড. মোস্তফা তারিকুল হাসান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবদুল করিম, খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী প্রমুখ। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে শুরু হয়ে পল্টনের বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে।
সিলেটে বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ : সিলেট ব্যুরো জানায়, ভারতে মুসলিম নিপীড়নের প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। বাদ জুমা নগরীতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা দিল্লিতে মসজিদ-মিনারে অগ্নিসংযোগ ও মুসলমানদের নির্যাতনের নিন্দা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফর বাতিল করার দাবি তুলেন। 
সরেজমিন দেখা যায়, জুমার নামাজ শেষে বিভিন্ন পাড়ামহল্লা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা কোর্ট পয়েন্ট এবং সিটি পয়েন্টে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। 
এছাড়া জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া, প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান (রহ.) আরও কয়েকটি সংগঠন নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। 
আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার উদ্যোগে নগরীর সোবহানীঘাট ডিওয়াই আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সিটি পয়েন্ট, কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ঘুরে চৌহাট্টায় গিয়ে শেষ হয়। 
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জমিয়তে ওলামায়ে বাংলাদেশ সিলেট মহানগর শাখা বাদ জুমা বন্দরবাজার দলীয় অফিসের সামনে থেকে মিছিল বের করে। এরপর সিটি পয়েন্টে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র জমিয়তের নেতাকর্মী ও মুসল্লিরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।  
সংগঠনের মহানগর সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ লুৎফুর রহমানের পরিচালনায় মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, অধ্যক্ষ হাফিজ আবদুর রহমান সিদ্দিকী, জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  
খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ : খুলনা ব্যুরো জানায়, ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে মসজিদ ও কোরআন শরিফ এবং মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে খুলনায় ইমাম পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 
শুক্রবার বিকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিল মহানগরীর ডাক বাংলো মোড়ের সমাবেশে এসে মিলিত হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি আলহাজ মাওলানা মো. সালেহ। সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়ার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন মাওলানা আসাদুল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুস সউদ, হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেরামত আলী, হেকমত আলী, সিদ্দিকুর রহমান, নূর সাঈদ, আনোয়ারুল আযম, ওয়ালী উল্লাহ, ইলিয়াস ফরিদী, সাইফুল্লাহ কবিরসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সমাবেশ চলাকালে ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে সেøাগানে সেøাগানে উত্তাল হয়ে উঠে খুলনার ডাক বাংলা চত্বর। সমাবেশে বক্তরা বলেন, ভারতকে মুসলমানরাই স্বাধীন করেছে। আর আজ সেই মুসলমানদের সঙ্গে মোদি সরকার নিপীড়ন নির্যাতনমূলক আচরণ করছে। অথচ তারা নিজেরাই ছিলেন ইংরেজদের দালাল। সেই দালাল গোষ্ঠীই আজ নিরীহ মুসলমানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জ ওলামা পরিষদের নেতা মাওলানা আবদুল আওয়াল বলেন, ভারতে মসজিদে ইমামকে নামাজ পড়া অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মুসলমানদের শহীদ করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। এ অবস্থায় আমরা বাংলাদেশিরা চুপচাপ বসে থাকব, আর আপনারা মোদিকে নিয়ে রঙের গান গাইবেনÑ এটা কোনোদিন হতে পারে না, হতে দেব না ইনশাআল্লাহ।
জুমার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি জামে মসজিদের সামনে ভারতের দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ওলামা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবছর পূর্তি অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছেন। সেই অনুষ্ঠানে মোদিকে গেস্ট হিসেবে তিনি দাওয়াত করেছেন। আমি শান্তিপূর্ণভাবে আপনার কাছে অনুরোধ করতে চাইÑ প্রধানমন্ত্রী আপনার বাবার শতবছর পূর্তি অনুষ্ঠানকে সুন্দরভাবে যদি গেস্ট নিয়ে করতে চান অনতিবিলম্বে মোদির পক্ষ থেকে ভারতে মুসলমান নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ছোট্ট করে আমরা আওয়াজ দিয়ে যাচ্ছি এখনও ১৬-১৭ দিন বাকি। তানা হলে সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বলতে থাকবে। জাতির পিতার অনুষ্ঠান আপনি সুন্দরভাবে করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমি এ কথাটি বারবার বলেছি যে, আমাদের ছোট করে দেখবেন না। আমরা এখন ছোট করে বলছি। কিন্তু এ কথাটি একদিন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাবে। আমি বারবার অনুরোধ করছি, অনুষ্ঠান ভালোভাবে করতে চাইলে আপনাকে মোদির পক্ষ থেসে ভারতে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তানা হলে মোদিকে বাংলার জমিনে আনতে গেলে লাখ জনতার রক্তের বন্যা বহাতে হবে। আল্লামা আহমদ শফীকে নিয়ে আমরা রাজপথে নামব। মোদির বিমানকে আটকে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, মুসলিম উগ্রপন্থি নয়। মুসলিমরা শান্তিপ্রিয়। তারা কোনো দিন সংখ্যালঘুর ওপর হামলা করবে না। সংখ্যালঘুরা হচ্ছে এ দেশের আমানত। মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পয়গম্বরের শিক্ষা, নবীর শিক্ষা সংখ্যালঘুদের ওপর কোনোদিন যাতে আক্রমণ না হয়; তবে এ সময় আমাদের বদনাম করার জন্য, আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য, তাদের নিজেদের মন্দিরে তারা হামলা করে আমাদের ঘায়েল করার জন্য মামলা করবে। মুসলমান ভাইয়েরা সজাগ থাকেন। কোনো অবস্থাতেই যাতে তারা নিজেদের গায়ে আগুন দিয়ে আমাদের দোষী করতে না পারে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, ভারতের দিল্লিতে মসজিদে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও মুসলিমদের লক্ষ্য করে হামলা এবং হত্যার প্রতিবাদে নীলফামারীতে জুমার নামাজ শেষে হাজারো মুসল্লি শহরের স্মৃতি অমøান পাদদেশে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। শহরের বড় মসজিদের ইমাম আশরাফুল হক নূরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সামছুল আরেফীন, রফিকুল ইসলাম, মোকারোম হোসেন সাইদি, হাবিবুল্লাহ বেলালী প্রমুখ। শেষে সেখানকার মুসলমানদের হেফাজতের জন্য দোয়া করা হয়।

 

সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী রফিকুল আলম । সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক আলোকিত মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষে ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫ থেকে প্রকাশিত এবং প্রাইম আর্ট প্রেস ৭০ নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক বিভাগ : ১৫১/৭, গ্রীন রোড (৪র্থ-৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১২০৫। ফোন : ৯১১০৫৭২, ৯১১০৭০১, ৯১১০৮৫৩, ৯১২৩৭০৩, মোবাইল : ০১৭৭৮৯৪৫৯৪৩, ফ্যাক্স : ৯১২১৭৩০, E-mail : [email protected], [email protected], [email protected]